মুগ্ধকর মায়া কোডেক্স
ফাইল ছবি
হিল্লোল চৌধুরী
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:২১
সেই প্রাচীনকাল থেকেই রাতের আকাশ মানবজাতিকে মুগ্ধ করে রেখেছে। এমনকি আজও আমরা আকাশ পানে চেয়ে থাকি পৃথিবীর অতীত এবং ভবিষ্যৎ বুঝতে। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ আমরা যা দেখি, তা বুঝতে সহায়তা করছে। আকাশ তাই এখন আর অজানা জগৎ নয়। এখনও আমরা প্রাচীন সভ্যতার আবিষ্কার দ্বারা প্রভাবিত। যেমন মধ্য আমেরিকার মায়া সভ্যতা। মায়া সভ্যতাও ওপরের দিকে তাকিয়ে মহাকাশীয় ঘটনাবলি বোঝার চেষ্টা করেছে। তারা এক রহস্যময় নথিতে আহরিত জ্ঞান রেখে গেছে। সেই নথি বিশ্লেষণ করে মুগ্ধ হচ্ছে এ যুগের গবেষকরাও।
মায়ান জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের এক রহস্যময় নথি থেকে জানা যায়, পরবর্তী সূর্যগ্রহণ কখন হবে; শুক্র গ্রহ কখন আবার শুকতারার রূপে দেখা দেবে। বিশ্বের বিশেষজ্ঞরা এখনও মায়ার সূক্ষ্ম গণনা সমীহ করে চলেন।
এই নথি ইউরোপে উপনিবেশবাদীরা লুট করে এনেছিল, নাকি উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছিল, তা আজও অজানা। তবে এটি এখনও গবেষণার বিষয়। নথিটি রয়েছে জার্মানির ড্রেসডেনে স্যাক্সনি স্টেট ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরিতে। জানা মতে, এটি পৃথিবীতে থাকা চারটি মায়ান কোডিসিসের একটি।
কার্লোস পাজন গাজলের মতো গবেষকরা ‘ড্রেসডেন কোডেক্স’ নামের নথিটি বুঝতে সহায়তা করছেন। এ পাঠোদ্ধারের মাধ্যমে মায়ান সংস্কৃতি সম্পর্কে আগের ধারণা বদলে গেছে বলে জানান গবেষকরা।
গবেষক দলের সদস্য হুলিয়েটা বলেন, ‘এটা বিস্ময়কর যে, তারা কয়েক হাজার বছর আগে এ রকম হিসাব তৈরি করতে পেরেছিলেন।’ কার্লোস বলেন, ‘ড্রেসডেন কোডেক্স মায়ান পুরাণ, ধর্ম, জ্যোতির্বিদ্যা এবং হায়রোগ্লিফিকস সম্পর্কে আমাদের আরও সমৃদ্ধ করেছে।’
দুই পাশেই লেখা ৩৯ পাতার নথি ড্রেসডেন কোডেক্স। সাড়ে তিন মিটার লম্বা নথিটি ধর্মীয় আচারের ‘পকেট বুক’ ছিল। কার্লোস বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, একলিপ্সের টেবিলগুলো সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কে আগাম ধারণা দিত। মানুষ এসব নিয়ে ভীত ছিল।’
অ্যান্টনির মতে, ‘এটা সত্যিই ধর্ম সম্পর্কিত। সৃষ্টিকর্তাদের কাছে কিছু চাওয়ার উপযুক্ত সময় জানা যেত। সম্ভবত রোগ নিরাময়ের সঙ্গেও সম্পর্কিত ছিল। নিরাপদ সন্তান জন্মদান বা ভালো শস্য লাভের সঙ্গে এর সংযোগ রয়েছে।’
কোনোকিছু করার জন্য উপযুক্ত সময় হিসাব করতে চাইত মায়া। তার কোনো একটি ঘটনার সম্ভাব্য তারিখ আগাম ধারণা করতে পারতেন।
আন্তিয়ে বলেন, ‘তাদের সবচেয়ে বড় সুবিধা যেটা ছিল, তা হচ্ছে তারা শূন্যের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন। কারণ, শূন্যটি আমরা এই সংকেতে সুন্দরভাবে দেখতে পাচ্ছি। কোডেক্সে কালো সংখ্যাগুলোর মাঝখানে লাল আমাদের লম্বা সময় গণনায় সক্ষম করেছে।’
খুব লম্বা সময়– এমনকি আমাদের আধুনিক দিন পর্যন্ত। যেমন ২০২৪ সালের এপ্রিলের পূর্ণ সূর্যগ্রহণের ব্যাপারটিও ড্রেসডেন কোডেক্স দেখে বোঝা সম্ভব।
ড্রেসডেন কোডেক্স ক্যালেন্ডার দেখাচ্ছে কীভাবে বিজ্ঞান এবং ধর্ম হাতে হাত রেখে এগিয়েছিল, যা এখন আর তেমন একটা দেখা যায় না। তবে আশপাশে কী ঘটছে, তা বোঝার আগ্রহ আমাদের মতো আগেও ছিল।
সৌজন্যে: ডয়চে ভেলে
- বিষয় :
- গল্প