ঐতিহ্যবাহী বড়দিন

মেক্সিকোতে বড়দিনে পয়েনসেটিয়া দিয়ে সাজানো হয় ছবি: ক্যারি থম্পসন
হিল্লোল চৌধুরী
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২২:৫৯ | আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১১:৫৫
প্যাগান ইউরোপীয়রা শীতকালের প্রাক্কালে বাড়িতে একটি দেবদারু গাছ নিয়ে আসত। সেখানে বৃক্ষপূজা প্রচলিত ছিল এবং তারা জীবন্ত বৃক্ষে সূর্য, চাঁদ এবং তারার প্রতীক মোমবাতি দিয়ে বাইরে সাজিয়ে রাখত। স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় লোকজন মন্দ শক্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নববর্ষের জন্য তাদের ঘর এবং গোলাঘর সবুজে আচ্ছাদিত করত। যেহেতু চিরসবুজ শাশ্বত জীবনের প্রতীক, তাই সবুজ ইউরোপীয়দের আসন্ন বসন্তের কল্পনা করতে সাহায্য করত।
খ্রিষ্টানরা কখন ক্রিসমাস ট্রি হিসেবে দেবদারু গাছের ব্যবহার শুরু করেছিল, তা সঠিকভাবে জানা যায় না। তবে এস্তোনিয়ার তালিন এবং লাটভিয়ার রিগা শহরে ক্রিসমাস এবং নববর্ষ উদযাপনে জনপরিসরে একটি গাছ সাজানোর কথা প্রথম নথিভুক্ত করা হয়। আজ বিশ্বজুড়ে ক্রিসমাস ট্রি হিসেবে সাধারণত দেবদারু, স্প্রুস বা পাইন গাছ ব্যবহার করা হয়।
জার্মানির অ্যাডভেন্ট ক্যালেন্ডার
অ্যাডভেন্ট, যা লাতিন শব্দ অ্যাডভেন্টাস থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘আসন্ন’। ক্রিসমাসের চারটি রোববার আগে থেকে অ্যাডভেন্ট ক্যালেন্ডারের গণনা শুরু হয়। উনিশ শতকে জার্মান প্রোটেস্ট্যান্টরা দরজায় ২৪টি চক লাইন চিহ্নিত করে এবং ডিসেম্বর মাসের প্রতিদিন একটি ঘষে বড়দিনের দিন গণনা করত। বিশ শতকের গোড়ার দিকে জার্মানিতে কাগজের অ্যাডভেন্ট ক্যালেন্ডার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
কলম্বিয়ায় নোচে দে লাস ভেলিটাস
কলম্বিয়ায় যিশু খ্রিষ্টের মা মেরি এবং পবিত্র ধারণার উৎসবকে নোচে দে লাস ভেলিটাস (ছোট মোমবাতির রাত) দিয়ে সম্মান জানানো হয়। এটি একটি মনোমুগ্ধকর উদযাপন, যা ছুটির মৌসুমের সূচনা নির্দেশ করে। কলম্বিয়ানরা লাখ লাখ সাদা এবং রঙিন মোমবাতি দিয়ে তাদের ঘরবাড়ি এবং রাস্তাঘাট আলোকিত করে নকশা করা কাগজের লণ্ঠনে। বছরের পর বছর ধরে সাজসজ্জা আরও সৃজনশীল ও পরিশীলিত হয়ে উঠেছে এবং বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবহার বেড়েছে। উদযাপনগুলো ক্রমেই জনসাধারণের কাছে পৌঁছেছে। সংগীত এবং আতশবাজির পাশাপাশি খাবারের বাজারও সমৃদ্ধ হয়েছে।
ইথিওপিয়ায় ঐতিহ্যবাহী নেটেলা
বড়দিনের গল্প আমাদের জানায়– তিন জ্ঞানী ব্যক্তির কথা, যাদের জাদুকর বা রাজাও বলা হয়। শিশু যিশুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একটি অলৌকিক পথপ্রদর্শক নক্ষত্রের পথ ধরে তারা পূর্ব থেকে বেথলেহেমে গিয়েছিলেন। মনে করা হয় ওই জ্ঞানী ব্যক্তিরা এশিয়া, ইউরোপ এবং ইথিওপিয়া থেকে এসেছিলেন। অনেক ইথিওপীয় বিশ্বাস করেন, তিনজন জ্ঞানী ব্যক্তিই ছিলেন ইথিওপীয়।
ইথিওপীয়রা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করেন। যার অর্থ– তারা ৭ জানুয়ারি বড়দিন উদযাপন করেন, যা ‘গান্না’ বা ‘গেন্না’ নামে পরিচিত। এ সময় লোকরা সাদা পোশাক পরেন, বেশির ভাগই ঐতিহ্যবাহী নেটেলা পরেন, যা প্রান্তজুড়ে উজ্জ্বল রঙের ডোরাসহ একটি পাতলা সাদা সুতির স্কার্ফ। শাল বা টোগার মতো মোড়ানো, যারা এটি পরেন তাদের সত্যিই খুব রাজকীয় দেখায়।
মেক্সিকোর পয়েনসেটিয়া
শীতকালে ফোটে এমন পয়েনসেটিয়া সাধারণত আদিবাসী অধ্যুষিত মধ্য আমেরিকা, বিশেষ করে দক্ষিণ মেক্সিকোর ট্যাক্সকো দেল অ্যালারকন এবং ওহাকা রাজ্যের আশপাশে বেশি দেখা যায়। মেক্সিকোর লোককথায় বলা আছে এক মেয়ের কথা, যার কাছে বড়দিনের আগের দিন শিশু যিশুকে উৎসর্গ করার জন্য একগুচ্ছ আগাছা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। যখন সে জন্মের সময় আগাছা রাখার জন্য হাঁটু গেড়ে বসেছিল, তখন সেই আগাছা মোড়ানো তোড়াটি উজ্জ্বল লাল ফুলে পরিণত হয়। তখন থেকে এই ফুলগুলো, যার পাতা বেথলেহেমের তারার মতো আকৃতির, ফ্লোরেস দে নোচে বুয়েনা বা পবিত্র রাতের ফুল নামে পরিচিতি পায় এবং ক্রিসমাসের সমার্থক হয়ে ওঠে।