
গত এপ্রিলে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন কিয়েভে ছুটে যান। তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনা বন্ধ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। তখন তুরস্কের ইস্তাম্বুলে দু'দেশের মধ্যে শান্তি আলোচনা চলছিল। প্রতিদিনই একটু একটু করে দু'পক্ষ কাছাকাছিও আসছিল। এতে সম্ভবত পশ্চিমারা শঙ্কিত হয়ে ওঠে যে, ইউক্রেনের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ওদের রাশিয়াকে খতম করার মিশনটি বুঝি ব্যর্থ হতে চলল। ঠিক তখনই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইউক্রেনকে সাহায্য করার ব্যাপারে সিরিয়াস হয়ে ওঠে। তারা ইউক্রেনকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সামরিক ও আর্থিক সাহায্য দিতে শুরু করে। একদিকে ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র দেয়, আরেকদিকে হাজার হাজার ইউক্রেনীয় সেনার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। পশ্চিমা ভূখণ্ডে এ প্রশিক্ষণ চলায় এতে রাশিয়ার দিক থেকে কোনো হস্তক্ষেপের সুযোগ ছিল না।
উল্লেখ্য, এর আগে অর্থাৎ ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুর দিকে পশ্চিমারা দেশটিকে প্রচুর সাহয্যের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তা দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে জেলেনস্কি বহুবার প্রকাশ্যে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে কথা দিয়ে কথা না রাখার দায়ে অভিযুক্তও করেন।
ইউক্রেনের পেছনে এমন শক্তভাবে দাঁড়ানোর পেছনে পাশ্চাত্যের উদ্দেশ্য ছিল পরিস্কার :ইউক্রেন যাতে রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে টিকে থাকতে পারে; পাশাপাশি রাশিয়াকে যাতে ক্রিমিয়া, দোনবাসসহ তাদের ভাষায় 'অধিকৃত অঞ্চলগুলো' থেকে বিতাড়িত করা যায়। ন্যাটোর ওই পরিকল্পনারই ফল হলো ইউক্রেন সেনাদের সাম্প্রতিক খারকিভ অভিযান। যার ফলে একটা বিস্তীর্ণ অঞ্চল থেকে রুশ সেনারা পিছু হটে এবং ইউক্রেন সেনারা তা নিজেদের দখলে নেয়। অবশ্য এ অভিযানে ইউক্রেনের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় নিলে এ বিজয় অত্যন্ত চড়া মূল্যে এসেছে বললে ভুল হবে না।
ইউক্রেন সেনাবাহিনীকে এভাবে কার্যত ন্যাটো বাহিনীতে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার 'বিশেষ সামরিক অভিযান'কে পশ্চিমারা সরাসরি রাশিয়া বনাম পাশ্চাত্যের যুদ্ধে পরিণত করেছে। এর ফলে যুদ্ধের শুরুতে রাশিয়া যে সংখ্যক অস্ত্র ও জনবল নিয়োগ করেছিল, তা অপ্রতুল বলে প্রমাণিত হচ্ছে। তবে রাশিয়া পাশ্চাত্যের এ খেলার মোড় ঘোরানো কার্যক্রমকে সহজভাবে নিচ্ছে, এমনটা ভাবা ঠিক হবে না। ইউক্রেনের এ নতুন বাস্তবতায় পুতিন শুধু অস্ত্র বা জনবল বৃদ্ধির দিকে না গিয়ে খেলার মোড় পুরোপুরি ঘুরিয়ে দেওয়ার আয়োজন করেছেন। একদিকে তিনি ৩ লাখ রিজার্ভ সেনাকে তৈরি হতে বলেছেন; আরেকদিকে পূর্ব ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলে গণভোট আয়োজনের নির্দেশনা দিয়েছেন। এ গণভোটে অঞ্চলগুলোর জনগণের কাছে স্রেফ একটা প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হয়- আপনি কি রাশিয়ার অংশ হতে রাজি?
পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত ওই গণভোটের ফলাফলে এটা স্পষ্ট বোঝা যায়, ওইসব অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এ ফল ঘোষণার কিছু সময় পরই অঞ্চলগুলোকে রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়। এক সময় যে এলাকা ছিল ইউক্রেন, তা এখন রুশ মাতা। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে রাশিয়া শুধু খেলার নিয়মাবলিই বদলে দেয়নি; খোদ খেলাটাই বদলে দিয়েছে। এখন থেকে সেখানে রাশিয়ান বাহিনীর যারা যুদ্ধ করছে, তাদের ওপর ইউক্রেন সেনাদের যে কোনো আক্রমণ বিবেচিত হবে রুশদের মাতৃভূমির ওপর হামলা হিসেবে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাটোর পদক্ষেপ কী হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে সামরিক জোটটির নেতৃত্ব প্রথম দিন থেকেই এটা পরিস্কার করেছে, তারা রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ করতে চায় না। তারা বরং বলে এসেছে, তারা চায় ইউক্রেন সেনারা মস্কোর মোকাবিলায় ন্যাটোর পক্ষে একটা প্রক্সি যুদ্ধ চালাক। এ লক্ষ্য অর্জন করতে গিয়ে ন্যাটোর কোনো কোনো সদস্য নিজের সামরিক কাঠামোর উন্নয়নের কথা চিন্তা না করে হাতে যা ছিল তার সবই ইউক্রেনকে দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু পুতিন খেলাটাই পাল্টে দেওয়ায় ন্যাটো এখন উভয় সংকটে পড়েছে। এখন যদি তারা ইউক্রেনকে আগের মতো ব্যাপক আর্থিক ও সামরিক সাহায্য জোগাতে থাকে তাহলে তা তাদের সরাসরি রাশিয়ার মুখোমুখি করে দেবে। অর্থাৎ তখন ইউক্রেনের বদলে ন্যাটো নিজেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটা পক্ষ হয়ে যাবে, যা জোটের অনেকেই চাচ্ছে না। আবার যদি ওই সাহায্য বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে তারা বিপুল ক্ষতির মুখে পড়বে। ইউরোপ-আমেরিকার জনগণকে সেখানকার যেসব বুদ্ধিজীবী ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানো তাঁদের পবিত্র কর্তব্য বলে বুঝিয়েছিলেন, তাঁরাও তখন বিপদে পড়বেন। কারণ নিজেদের কথাগুলোকেই তাঁদের গিলে খেতে হবে।
রাশিয়ার সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোর কারণে ইউক্রেনের পক্ষে ন্যাটোর সক্রিয় ভূমিকা আগামী দিনগুলোতে আরও কমে যাবে বলে আমার মনে হয়। আজ থেকে বহু বছর পর যখন এ যুদ্ধের চূড়ান্ত ইতিহাস লেখা হবে, তখন আমার ধারণা, পুতিন যেভাবে পাশ্চাত্যের পাল্টা চাল হিসেবে রিজার্ভ সেনাদের ডাকার পাশাপাশি পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনের বিশাল এলাকা রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করে পাশ্চাত্যকে উভয় সংকটে ফেলে দিয়েছেন, সে কথাও গুরুত্বের সঙ্গে বলা হবে। ন্যাটোকে এভাবে ঘোল খাওয়ানোর মাধ্যমে যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন শুধু নয়, ইউক্রেনের ভবিষ্যৎও তিনি নির্ধারণ করে দিয়েছেন- এমনটা যদি এখন কেউ বলেন তাহলেও তাঁকে দোষ দেওয়া যাবে না।
স্কট রিটার: মার্কিন নৌবাহিনীর সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা; ১৯৯১-'৯৮ পর্যন্ত ইরাকে জাতিসংঘের পারমাণবিক অস্ত্র পরিদর্শক হিসেবে কাজ করেছেন; আরটি ডটকম থেকে ভাষান্তর সাইফুর রহমান তপন
উল্লেখ্য, এর আগে অর্থাৎ ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুর দিকে পশ্চিমারা দেশটিকে প্রচুর সাহয্যের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তা দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে জেলেনস্কি বহুবার প্রকাশ্যে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে কথা দিয়ে কথা না রাখার দায়ে অভিযুক্তও করেন।
ইউক্রেনের পেছনে এমন শক্তভাবে দাঁড়ানোর পেছনে পাশ্চাত্যের উদ্দেশ্য ছিল পরিস্কার :ইউক্রেন যাতে রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে টিকে থাকতে পারে; পাশাপাশি রাশিয়াকে যাতে ক্রিমিয়া, দোনবাসসহ তাদের ভাষায় 'অধিকৃত অঞ্চলগুলো' থেকে বিতাড়িত করা যায়। ন্যাটোর ওই পরিকল্পনারই ফল হলো ইউক্রেন সেনাদের সাম্প্রতিক খারকিভ অভিযান। যার ফলে একটা বিস্তীর্ণ অঞ্চল থেকে রুশ সেনারা পিছু হটে এবং ইউক্রেন সেনারা তা নিজেদের দখলে নেয়। অবশ্য এ অভিযানে ইউক্রেনের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় নিলে এ বিজয় অত্যন্ত চড়া মূল্যে এসেছে বললে ভুল হবে না।
ইউক্রেন সেনাবাহিনীকে এভাবে কার্যত ন্যাটো বাহিনীতে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার 'বিশেষ সামরিক অভিযান'কে পশ্চিমারা সরাসরি রাশিয়া বনাম পাশ্চাত্যের যুদ্ধে পরিণত করেছে। এর ফলে যুদ্ধের শুরুতে রাশিয়া যে সংখ্যক অস্ত্র ও জনবল নিয়োগ করেছিল, তা অপ্রতুল বলে প্রমাণিত হচ্ছে। তবে রাশিয়া পাশ্চাত্যের এ খেলার মোড় ঘোরানো কার্যক্রমকে সহজভাবে নিচ্ছে, এমনটা ভাবা ঠিক হবে না। ইউক্রেনের এ নতুন বাস্তবতায় পুতিন শুধু অস্ত্র বা জনবল বৃদ্ধির দিকে না গিয়ে খেলার মোড় পুরোপুরি ঘুরিয়ে দেওয়ার আয়োজন করেছেন। একদিকে তিনি ৩ লাখ রিজার্ভ সেনাকে তৈরি হতে বলেছেন; আরেকদিকে পূর্ব ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলে গণভোট আয়োজনের নির্দেশনা দিয়েছেন। এ গণভোটে অঞ্চলগুলোর জনগণের কাছে স্রেফ একটা প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হয়- আপনি কি রাশিয়ার অংশ হতে রাজি?
পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত ওই গণভোটের ফলাফলে এটা স্পষ্ট বোঝা যায়, ওইসব অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এ ফল ঘোষণার কিছু সময় পরই অঞ্চলগুলোকে রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়। এক সময় যে এলাকা ছিল ইউক্রেন, তা এখন রুশ মাতা। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে রাশিয়া শুধু খেলার নিয়মাবলিই বদলে দেয়নি; খোদ খেলাটাই বদলে দিয়েছে। এখন থেকে সেখানে রাশিয়ান বাহিনীর যারা যুদ্ধ করছে, তাদের ওপর ইউক্রেন সেনাদের যে কোনো আক্রমণ বিবেচিত হবে রুশদের মাতৃভূমির ওপর হামলা হিসেবে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাটোর পদক্ষেপ কী হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে সামরিক জোটটির নেতৃত্ব প্রথম দিন থেকেই এটা পরিস্কার করেছে, তারা রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ করতে চায় না। তারা বরং বলে এসেছে, তারা চায় ইউক্রেন সেনারা মস্কোর মোকাবিলায় ন্যাটোর পক্ষে একটা প্রক্সি যুদ্ধ চালাক। এ লক্ষ্য অর্জন করতে গিয়ে ন্যাটোর কোনো কোনো সদস্য নিজের সামরিক কাঠামোর উন্নয়নের কথা চিন্তা না করে হাতে যা ছিল তার সবই ইউক্রেনকে দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু পুতিন খেলাটাই পাল্টে দেওয়ায় ন্যাটো এখন উভয় সংকটে পড়েছে। এখন যদি তারা ইউক্রেনকে আগের মতো ব্যাপক আর্থিক ও সামরিক সাহায্য জোগাতে থাকে তাহলে তা তাদের সরাসরি রাশিয়ার মুখোমুখি করে দেবে। অর্থাৎ তখন ইউক্রেনের বদলে ন্যাটো নিজেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটা পক্ষ হয়ে যাবে, যা জোটের অনেকেই চাচ্ছে না। আবার যদি ওই সাহায্য বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে তারা বিপুল ক্ষতির মুখে পড়বে। ইউরোপ-আমেরিকার জনগণকে সেখানকার যেসব বুদ্ধিজীবী ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানো তাঁদের পবিত্র কর্তব্য বলে বুঝিয়েছিলেন, তাঁরাও তখন বিপদে পড়বেন। কারণ নিজেদের কথাগুলোকেই তাঁদের গিলে খেতে হবে।
রাশিয়ার সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোর কারণে ইউক্রেনের পক্ষে ন্যাটোর সক্রিয় ভূমিকা আগামী দিনগুলোতে আরও কমে যাবে বলে আমার মনে হয়। আজ থেকে বহু বছর পর যখন এ যুদ্ধের চূড়ান্ত ইতিহাস লেখা হবে, তখন আমার ধারণা, পুতিন যেভাবে পাশ্চাত্যের পাল্টা চাল হিসেবে রিজার্ভ সেনাদের ডাকার পাশাপাশি পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনের বিশাল এলাকা রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করে পাশ্চাত্যকে উভয় সংকটে ফেলে দিয়েছেন, সে কথাও গুরুত্বের সঙ্গে বলা হবে। ন্যাটোকে এভাবে ঘোল খাওয়ানোর মাধ্যমে যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন শুধু নয়, ইউক্রেনের ভবিষ্যৎও তিনি নির্ধারণ করে দিয়েছেন- এমনটা যদি এখন কেউ বলেন তাহলেও তাঁকে দোষ দেওয়া যাবে না।
স্কট রিটার: মার্কিন নৌবাহিনীর সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা; ১৯৯১-'৯৮ পর্যন্ত ইরাকে জাতিসংঘের পারমাণবিক অস্ত্র পরিদর্শক হিসেবে কাজ করেছেন; আরটি ডটকম থেকে ভাষান্তর সাইফুর রহমান তপন
মন্তব্য করুন