হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার কারণ-উপসর্গ-চিকিৎসা

প্রতীকী ছবি
.
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২২ | ০২:৫৯ | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২২ | ০৩:০০
ডায়াবেটিক রোগীরা যে সমস্যার সম্মুখীন জীবনে একবার হলেও হন, সেটা হল হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তের গ্লুকোজ লেভেল হঠাৎ নিচে নেমে যাওয়া। এটি হাইপো নামেও পরিচিত। তাহলে জেনে নেওয়া যাক এই হাইপোগ্লাইসেমিয়া আসলে কী?
প্রতি লিটার রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ যদি চার মিলি মোলের চেয়ে কমে যায় তবে তাকে আমরা হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলে থাকি।
এটি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
আমাদের শারীরিক সব কাজের মূল জ্বালানি আসে গ্লুকোজ থেকে। গ্লুকোজই শরীরের সব কোষে এমনকি মস্তিষ্কেও শক্তি সরবরাহ করে। তাই হঠাৎ রক্তে গ্লুকোজ কমে গেলে কোষগুলো শক্তির অভাবে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। আর মস্তিষ্ক যেহেতু সারা শরীর নিয়ন্ত্রণ করে, তাই শরীরে গ্লুকোজের অভাব হলে মস্তিষ্ক শরীরকে সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এর পরিমাণে মৃত্যুও হতে পারে।
হাইপো কাদের বেশি হয়?
বিশেষ করে টাইপ ১ বা ইনসুলিন নির্ভর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এটি বেশি হয়ে থাকে। ইনসুলিন নেওয়ার পরে খাবার না খাওয়া, বেশি মাত্রায় ইনসুলিন নেওয়ার কারণে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। এছাড়া শর্করাযুক্ত খাবার পরিমাণের চেয়ে কম গ্রহণ, অতিরিক্ত ব্যায়াম, অত্যাধিক মদ্যপান, আগে থেকে যকৃত বা কিডনির সমস্যাজনিত কারণেও এটি হতে পারে।
উপসর্গ
প্রচণ্ড ক্ষুধাভাব হওয়া, অস্থিরতা, অতিরিক্ত ঘাম, শরীর কাঁপা, বুক ধড়ফড়, মাথাব্যথা, চোখ ঝাপসা হয়ে আসা ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রে দ্রুত গ্লুকোজ বাড়ানোর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হলে রোগী অচেতনও হয়ে যেতে পারে।
চিকিৎসা
এমন উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত গ্লুকোমিটারে রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে। বা হাতের কাছে গ্লুকোমিটার না থাকলেও হাতের কাছে থাকা চিনি বা চিনিযুক্ত খাবার খেয়ে নেওয়া উচিত হবে। যেমন তিন চার চামচ চিনি মেশানো পানি, ফলের রস, দুধ ইত্যাদি। রোগী যদি অচেতন হয়ে পড়ে তবে তাকে দ্রুত শিরায় গ্লুকোজ দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে তাকে।
প্রতিরোধ
ডায়াবেটিক রোগীদের উচিত দিনে কমপক্ষে পাঁচবার খাবার খাওয়া এবং চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা পরপর কোনো ছোট স্ন্যাকস খাওয়া। নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করা এবং সেই অনুযায়ী ওষুধ নেওয়া চিকিৎসকের পরামর্শ মতো। এছাড়া ইনসুলিন নেওয়ার আধাঘণ্টার মধ্যে খাবার খেয়ে নেওয়া এবং ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক মতো নেওয়া। ব্যায়াম করার আগে খাবার খেয়ে নেওয়া। এবং ব্যায়ামের আগে এবং পরে রক্তে গ্লুকোজ দেখে নেওয়া।
মনে রাখতে হবে, হাইপারগ্লাইসেমিয়ার চেয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়া অধিক বিপজ্জনক। কারণ সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা গেলে এর কারণে প্রাণহানিও হতে পারে। তাই সঙ্গে ডায়াবেটিক কার্ড রাখার ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। যাতে পথেঘাটে কখনও হাইপোর কারণে অজ্ঞান হয়ে গেলে সঠিক সময়ে রোগীর জন্য সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
- বিষয় :
- ডায়াবেটিস
- হাইপোগ্লাইসেমিয়া
- স্বাস্থ্য