- লাইফস্টাইল
- শিশুর স্বাস্থ্যকর টিফিন
শিশুর স্বাস্থ্যকর টিফিন

ফাইল ছবি
শিশুর খাওয়া নিয়ে মা-বাবার যেন চিন্তার শেষ নেই। শিশু এটা খাবে তো ওটা খাবে না। নানা রকম বায়না থাকে। সন্তানের খাবার নিয়ে মা-বাবা দু'জনেই থাকেন অনেক টেনশনে। আর যদি হয় স্কুলের টিফিন তাহলে তো টেনশন আরও বেড়ে যায়। দিনের অনেকটা সময় সন্তানের স্কুলে থাকতে হয়। শিশুর টিফিনে যেন পুষ্টি চাহিদার কোনো ঘাটতি না হয়, তাই স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর টিফিন বাচ্চাদের নিশ্চিত করতে হবে। বাচ্চাদের অনেক ধরনের পছন্দ-অপছন্দ থাকে। তাই মাকে এমনভাবে টিফিন তৈরি করতে হবে, যাতে তা থেকে তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়ার পাশাপাশি বাচ্চা আনন্দও পায়। খাবার অল্প পরিমাণে দিলেও কার্বোহাইড্রেট, চর্বি ও প্রোটিন- এই তিনটি প্রধান পুষ্টি উপাদান যাতে টিফিনে থাকে, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
শিশুদের টিফিনে এমন খাবারই দেওয়া উচিত, যা কিনা ক্ষুধা মেটায় ও স্বাস্থ্যকর হয়। বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায়, টিফিন পছন্দ না হলে শিশুরা খাবারভর্তি বাটি নিয়ে বাড়ি ফেরে। স্বাদ আর স্বাস্থ্য দুটোকেই প্রাধান্য দিয়ে যদি টিফিন দেওয়া হয় তাহলে মন্দ হয় না। শিশুর টিফিন স্বাস্থ্যকর করবেন যেভাবে-
ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর টিফিন
ঘরে তৈরি কেক, প্যানকেক, খিচুড়ি, রুটির সঙ্গে জ্যাম, ডিম আলুর চপ, সবজি-মুরগির কাটলেট, ডিম, মুরগি বা টুনা স্যান্ডউইচ, বুটের হালুয়া বা গাজরের হালুয়া, নুডলস, মাছের কাটলেট, ঘরে তৈরি ফ্রায়েড রাইস, ফল, বিস্কুট ইত্যাদি।
সবুজ ফলমূল
শিশুর টিফিনে অগ্রাধিকার দেবেন সবুজ ফলমূল। স্ট্রবেরি, কলা, কমলা, আপেল ইত্যাদি দিতে পারেন। ফল ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। একটি বাটিতে দই ও মধু একসঙ্গে ফেটিয়ে নিন। এবার আপেল, কলা ও কমলার খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট টুকরো করুন। স্ট্রবেরি টুকরো করে নিন। ইচ্ছা হলে আঙ্গুর দিতে পারেন। এবার দইয়ের মিশ্রণটি কাটা ফলগুলোর সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে টিফিন বক্সে ভরে দিন।
স্বাস্থ্যকর রোল
মুরগির বুকের মাংস, ডিম, মাশরুম, ব্রোকলি, পুঁইশাক, পনির, টুনা, ছোলার ডাল ইত্যাদি দিয়ে স্বাস্থ্যকর রোল তৈরি করে দিন। ক্ষুধা নিবারক এ খাবার স্বাস্থ্যকর। রোলে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের জোগান দিয়ে সবজির সঙ্গে ডিম ও যে কোনো মাংস দিতে পারেন।
ডিমকে প্রাধান্য দিন
শিশুর টিফিনে ডিম অগ্রাধিকার দিন। দুটো ডিম, সামান্য লবণ ও দুই চামচ চিনি একত্রে ফেটে নিন। তারপর পাউরুটির পিস ডিমে চুবিয়ে ফ্রাইপ্যানে হালকা তেলে ভাজুন। হয়ে গেল ঝটপট ওমলেট। বাচ্চাদের টিফিন হিসেবে ওমলেট খুবই মজাদার।
সবজির স্যান্ডউইচ
শাকসবজি দিয়ে শিশুকে স্যান্ডউইচ তৈরি করে দিতে পারেন। টমেটো, গাজর, বেগুন, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি পছন্দমতো সবজি নিয়ে রান্না করুন। এবার ভাজা পাউরুটির ওপর সবজি ও আরেক পিস পাউরুটি দিয়ে বানিয়ে ফেলুন স্যান্ডউইচ।
তালিকায় রাখতে পারেন দুধ
স্বাস্থ্যকর খাবারের সঙ্গে শিশুকে টিফিন হিসেবে মজাদার মিল্ক্কশেক দিতে পারেন। দুধ, ভেনিলা আইসক্রিম, চকোলেট ও চকোলেট বিস্কুট ব্লেন্ড করে বানাতে পারেন মজাদার চকোলেটি মিল্ক্কশেক। ফল হিসেবে শেকে যোগ করা যেতে পারে স্ট্রবেরি, কলা, আম, তরমুজ ইত্যাদি।
সন্তানদের সঙ্গে কথা বলে তার পছন্দ-অপছন্দের গুরুত্ব দিয়ে টিফিন মেন্যু নির্বাচন করতে পারেন।
-ঘরে তৈরি টিফিন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, তাই রকমফের করে ঘরের খাবার টিফিনে দিতে হবে।
-বাচ্চাদের টিফিনে ভাজাপোড়া খাবার না দেওয়াই ভালো। যদি দিতেই হয় তাহলে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন এসব খাবারে পুরোনো তেল ব্যবহার না হয়।
-টিফিনে রং, টেস্টিং সল্ট, কেনা বিস্কুটের গুঁড়া, অতিরিক্ত লবণ এড়িয়ে চলুন।
-গরমে খুব দ্রুত নষ্ট হতে পারে- এমন কোনো খাবার টিফিনে দেওয়া যাবে না।
-পরিমাণে অল্প কিন্তু পুষ্টি উপাদান বেশি আছে, এমন খাবার টিফিনে দিন।
-ঝোল জাতীয় খাবার বাচ্চারা অপছন্দ করে, তাই এগুলো এড়িয়ে যান।
-এমন কোনো খাবার দেওয়া যাবে না, যেগুলো ঠান্ডা হলে শক্ত হয়ে যায়।
-খাবারকে সুন্দর করে টিফিন বাক্সে সাজিয়ে দিতে হবে।
-ফুড গ্রেড প্লাস্টিক বা খাবার ভালো থাকবে, এমন বাক্সে খাবার দিতে হবে।
-টিফিনের খাবার নরম ও সতেজ হওয়া জরুরি।
-যারা দীর্ঘ সময় স্কুলে থাকে, তাদের অল্প করে দু'বার খাওয়ার মতো টিফিন দিলে ভালো।
-শিশুরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে খেতে পারে, তাই ছোট আকারের খাবার টিফিনে দিন। স্কুলে শিশুরা টিফিন না খেলে তাদের বকা না দিয়ে তার কারণ জানার চেষ্টা করুন। সকালের নাশতা ঠিকমতো খেলেই শিশুরা ভালোভাবে টিফিন খাবে। তাই সকালের নাশতার অভ্যাস শিশুদের করাতে হবে। বাইরের কেনা খাবার শিশুদের নানা শারীরিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই ঘরের টিফিন শিশুদের জন্য নিরাপদ।
মন্তব্য করুন