- লাইফস্টাইল
- ফাগুনে প্রেমের দিন
ফাগুনে প্রেমের দিন

শোন গো দখিন হাওয়া, প্রেম করেছি আমি লেগেছে চোখেতে নেশা, দিক ভুলেছি আমি...। 'বসন্ত আর ভালোবাসা' এ দুটির সমন্বয় সব সময় সেরা। ঋতুরাজের এই সময়টা প্রেমদেবতা কিউপিড প্রেমের পসরা সাজিয়ে বুকে আগলে রাখে দু'হাত দিয়ে। ভালোবাসা- চার অক্ষরের একটা শব্দ। প্রচণ্ড শক্তিশালী এ শব্দটার জন্য কাঙাল সবাই। শুধু একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্যই দিনের পর দিন, বছরের পর বছর কতজনেরই প্রতীক্ষার প্রহর কাটে। ভালোবেসে কেউ হয়েছে দিওয়ানা। আবার প্রাণও বিলিয়ে দিয়েছে কেউ কেউ। যার নামকরণে ভালোবাসা দিবস পালিত হয়, সেই সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনই ভালোবাসার জন্য দিয়েছিলেন প্রাণ। ইতিহাসবিদদের মতে, এই খ্রিষ্টান পাদ্রি ও চিকিৎসক সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনকে ২৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি খ্রিষ্টানবিরোধী রোমান সম্রাট গথিকাস আহত সেনাদের চিকিৎসার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেন। মৃত্যুর আগে ফাদার ভ্যালেন্টাইন তার আদরের একমাত্র মেয়েকে একটি ছোট্ট চিঠি লেখেন, যেখানে তিনি নাম সই করেছিলেন 'ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন'। সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের মেয়ে এবং তার প্রেমিক মিলে পরের বছর থেকে বাবার মৃত্যুর দিনটিকে 'ভ্যালেন্টাইনস ডে' হিসেবে পালন করা শুরু করেন। তাহলে কি দাঁড়াচ্ছে, শুধু ১৪ ফেব্রুয়ারিই ভালোবাসার দিন? অন্য দিনগুলো নয়? এ বিষয়ে কবি-সাহিত্যিকরা বলেন, বছরের প্রতিটি দিনই ভালোবাসার। প্রতিটি দিনই প্রেমের, যা শুধু একটা দিবসেই সীমাবদ্ধ নয়। গোটা বিশ্বের মানুষ সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের প্রতি শ্রদ্ধা থেকেই এই দিনটিকে বিশেষভাবে উদযাপন করে থাকেন ভালোবাসা দিবস হিসেবে। প্রিয়জনকে ভালোবেসে উপহার দেওয়া থেকে শুরু করে কেক কাটা, পছন্দের কোথাও ঘুরতে বের হওয়ার মাধ্যমে এই দিন উদযাপন করেন। কেউ কেউ আবার একান্তে সময় কাটাতেও পছন্দ করেন। এ ভালোবাসা শুধুই প্রেমিক আর প্রেমিকার জন্য নয়। মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, ভাইবোন, প্রিয় সন্তান এমনকি বন্ধুর জন্যও ভালোবাসার হতে পারে।
এখন তো ভালোবাসা দিবস ঘিরে চলে কত প্রস্তুতি। সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশের তরুণ-তরুণীদের মাঝেও ভালোবাসা দিবস পালিত হয়। ভালোবাসার উৎসব শুধু যে রাজধানীতে হয় তা নয়, রীতিমতো এর ছোঁয়া লাগেছে গ্রামীণ জনপদেও। মুঠোফোনের মেসেজ, ই-মেইল অথবা অনলাইনের চ্যাটিংয়ে ভালোবাসার কথা চলে অবারিতভাবে। এ ছাড়া গ্রিটিংস কার্ড, চকলেট, পারফিউম, পোশাক, খেলনা অথবা বইসহ শৌখিন জিনিস উপহার দেয় প্রিয়জনকে। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি থেকে শুরু করে টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, নানা ধরনের ডিজাইনের জামা পাওয়া যায় ফ্যাশন হাউসগুলোতে। এ প্রসঙ্গে সারা ব্র্যান্ডের ফ্যাশন ডিজাইনার স্বর্ণা জানান, 'ভ্যালেন্টাইনস ডে' উপলক্ষে এবার আমরা প্রায় সব ধরনের পোশাকই রেখেছি। তবে কাপল টি-শার্টটা এবার আমরা বেশি ফোকাস করেছি। লাল-সাদা রঙের এই টি-শার্টে তরুণ কাপলদের অসাধারণ লাগবে। দামও সাধ্যের মধ্যে। এ ছাড়া মেয়েদের কুর্তি-টপস, ছেলেদের পাঞ্জাবিও চলছে।
এই প্রেম-ভালোবাসার বসন্ত যাদের সব সময় ছুঁয়েই থাকে, যুগের পর যুগ কত ভালোবাসার আনন্দ আর না পাওয়ার বেদনা কবি-সাহিত্যিক তুলে ধরেছেন তাদের লেখনীতে। কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, 'ভালোবাসা পেলে সব লণ্ডভণ্ড করে চলে যাবো/যে দিকে দু'চোখ যায়...।' সত্যিই তো! কে না চায় ভালোবাসার জীবনসাগরে ভেলা ভাসাতে। আর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেখানে ভালোবাসা নিয়ে এত কিছু লিখে গেছেন। আজও প্রেমিক তার প্রেমিকার খোঁপায় ফুল দিতে দিতে গায়- 'ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে/ আমার নামটি লিখো- তোমার মনের মন্দিরে।' আবার এই প্রেম-ভালোবাসায় কাঙাল হয়েই নজরুল ইসলাম লিখে গেছেন, 'বিশ্বাস করুন, আমি কবি হতে আসিনি, আমি নেতা হতে আসিনি- আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, প্রেম পেতে এসেছিলাম- সে প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নীরস পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম। যুগে যুগে প্রেম-ভালোবাসা এসেছে বিভিন্ন উপায়ে। শত ব্যস্ততার মাঝেও দিন শেষে ঘরে ফিরে মানুষ সেই ভালোবাসাতেই ঠাঁই পেতে চায়। আশ্রয় খোঁজে প্রেমে। কাটখোট্টা বলে সবার কাছে যে লোকটি পরিচিত, সেই মানুষটার খোঁজ নিয়ে দেখুন, হয়তো সেও কারোর অপেক্ষায় দিন গোনে। তাই তো কবি কাহালিল জিব্রানের কথায় বলতে হয়, 'ভালোবাসা দেয় না কিছু নিজেকে ছাড়া, ভালোবাসা নেয় না কিছু নিজেকে ছাড়া, ভালোবাসার সংকেত এলে অনুসরণ করো তাকে...।'
মডেল :তানিন তানহা ও শাহেদ; পোশাক :সারা; মেকআপ : ওমেন্স ওয়ার্ল্ড; ছবি : ফারহান ফয়সাল
মন্তব্য করুন