- জীবনশৈলী
- স্কার্ফের ফ্যাশন
স্কার্ফের ফ্যাশন

বর্তমানে স্কার্ফ যেমন প্রয়োজনীয়, তেমনই অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাশন অনুষঙ্গ। নিজেকে একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে কে না চায়! সে ক্ষেত্রে স্কার্ফ হতে পারে উত্তম। কখনও গলায় জড়িয়ে নেওয়া যায় ফতুয়ার সঙ্গে, কখনও টি-শার্টের সঙ্গে। কেউ আবার স্টাইলের মাত্রা বাড়াতে ব্যাগেও ঝুলিয়ে রাখে স্কার্ফ। একই সঙ্গে গরমকালে রোদের হাত থেকে বাঁচার জন্যও স্কার্ফ ব্যবহার করে অনেকে। ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবে স্কার্ফ সব বয়সী মেয়েদের পছন্দের।
কোন ফ্যাশনে নিজেকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবেন, ভেবে ভেবে সারা; তাই তো? টপস, টি-শার্ট কিংবা জিন্স; যা-ই পরুন না কেন, আপনি যদি ফ্যাশনপ্রেমী হয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চিতভাবেই আপনি হাত, গলা কিংবা ব্যাগের হাতলে অবশ্যই গুঁজে নেবেন একটি হালকা-পাতলা মানানসই স্কার্ফ! সব পোশাকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারা আকর্ষণীয় এক ফ্যাশন অনুষঙ্গ এই স্কার্ফ।
গত ৩০ থেকে ৩৫ বছরে পোশাকে বাঙালি নারীর ফ্যাশন সচেতনতা বহু গুণ বেড়েছে। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজের পাশাপাশি পশ্চিমা পোশাকে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে শুরু করেছে বাঙালি নারী। পশ্চিমের মেয়েদের মতো অত ছোট পোশাকে অভ্যস্ত না হলেও, জিন্স-টি-শার্টের মতো পোশাককে বাঙালি নারীরা প্রিয় করে নিয়েছে। আরও বহু রকমের দেশ-বিদেশের পোশাকের সঙ্গে নিজেকে অভ্যস্ত করে নিয়েছে বাঙালি নারী। একই সঙ্গে এখনকার ফ্যাশনপ্রেমী তরুণীদের একটি বড় অংশের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে স্কার্ফ।
আগে বাঙালি নারীরা সাধারণত ধর্মীয় কারণ কিংবা রোদ, ধুলাবালি থেকে রক্ষার্থে স্কার্ফ পরত। এখন শুধু ধর্মীয় কারণ কিংবা ধুলাবালি থেকে রক্ষার জন্য নয় বরং ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে স্কার্ফ এখন অধিক জনপ্রিয়।
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, সর্বপ্রথম স্কার্ফের প্রচলন হয় মূলত প্রাচীন রোমে। গরমকালে ঘাম মোছার জন্য ব্যবহার করা হতো এই স্কার্ফ। পুরুষেরা শার্টের কলারে এই কাপড়ের টুকরো জড়িয়ে রাখত। অন্যদিকে চীনা যোদ্ধারা সৈনিকদের র্যাঙ্কিং বোঝাতে নানা রংয়ের স্কার্ফ ব্যবহার করত। তখনও স্কার্ফ ফ্যাশনের অনুষঙ্গ হয়ে ওঠেনি; বরং তখন ছিল এটি শুধু প্রয়োজন।
তারপর ঊনবিংশ শতকের দিকে এসে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে স্কার্ফের প্রচলন বেড়ে যায়। তখনকার চলচ্চিত্রে এবং পপ তারকাদের মাঝে স্কার্ফ বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় এটি ধীরে ধীরে ফ্যাশন হিসেবে জায়গা করে নেয়।
বর্তমানে স্কার্ফ যেমন প্রয়োজনীয়; একইভাবে অত্যাবশকীয় ফ্যাশন অনুষঙ্গও বটে। তাই এসব বিষয় মাথায় রেখেই স্কার্ফের আকারে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। কিছুদিন আগেও স্কার্ফগুলো আকৃতিতে ছোট ছিল। বর্তমানে বিভিন্ন সুবিধার কথা মাথায় রেখে স্কার্ফগুলো আকৃতিতে একটু বেড়েছে। যে কোনো ধরনের কুর্তা, ফতুয়া বা টি-শার্টের সঙ্গে মানিয়ে যাবে অনায়াসে। চাইলে সুতির সাদামাটা ছোট ওড়না নিতে পারেন; আবার কুচি দেওয়া ওড়নাও নিতে পারবেন। বেশির ভাগ স্কার্ফই তৈরি হয় জর্জেট ও সিল্ক্কের কাপড়ে। তবে সুতি, নেট, ক্রেপ, এন্ডি, উল প্রভৃতি কাপড়ের স্কার্ফও পাওয়া যাচ্ছে। ডিজাইন ও নকশায় ব্যবহার হয় চুমকি, জরি, এমব্রয়ডারি, লেস ও টারসেল।
নিজেকে একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে সবাই চায়। তাই আর একটু ফ্যাশনেবল কিংবা আর একটু ব্যতিক্রমী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করলে হাতে বা ব্যাগের সঙ্গে বেঁধে নিতে পারেন পছন্দের স্কার্ফ। সাইজে ছোট স্কার্ফগুলো ভাঁজ করে হাতে বা ব্যাগের হাতলের সঙ্গে বেঁধে নিজেকে করে তোলা যায় আরও বেশি আকর্ষণীয়।
স্কার্ফ- ছোট শব্দ হলেও এর কাজ অনেক। কখনও সে জায়গা করে নেয় গলায় পোশকের সঙ্গে, কখনও মাথায় চুলের সঙ্গে; কখনও ব্যাগের হাতলে। স্টাইলিশ তরুণীরা জানে এর সঠিক ব্যবহার। গরমের দিনে রোদ থেকে বাঁচতে অনেকেই স্কার্ফ ব্যবহার করে।
আমাদের দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোও এখনকার তরুণীদের ফ্যাশন ও রুচির কথা মাথায় রেখে স্কার্ফে এনেছে ভিন্নতা। একরঙা ও প্রিন্ট; দুই ধরনের স্কার্ফই পাওয়া যায়। ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের স্কার্ফ পাওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে দেশীয় ফ্যাশন হাউস বিশ্বরঙের স্বত্বাধিকারী বিপ্লব সাহা বলেন, স্কার্ফ শুধু ধুলাবালি কিংবা রোদ থেকে রক্ষার জন্যই ব্যবহার নয়; বরং নিজেকে ভিন্নধর্মী ফ্যাশনে সজ্জিত করে তোলার এক অনন্য মাধ্যমও বটে। একই সঙ্গে জিন্স, টপ, টি-শার্ট, হালকা কটি কিংবা সালোয়ার-কামিজ- সবকিছুর সঙ্গেই চমৎকারভাবে মিলে যায় স্কার্ফ। তাই বিশ্বরঙ বিভিন্ন উজ্জ্বল রংয়ের মিশ্রণে ব্যতিক্রমধর্মী ফ্যাশনেবল স্কার্ফ তৈরি করে আসছে, যা বিভিন্ন বয়সের ক্রেতাদের পছন্দ ও রুচি মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়। ব্যতিক্রমী নকশার স্কার্ফ পাবেন আড়ং, ইনফিনিটি, ইয়ালো প্রভৃতি ব্র্যান্ডের শপে। দামও সাধ্যের মধ্যে। ৫৫০ থেকে ১২৫০ টাকার মধ্যে আপনি রুচিশীল ও ভালো মানের স্কার্ফ পাবেন। এ ছাড়া নিউমার্কেট, ইস্টার্ন প্লাজা, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত স্কয়ার, বেইলি রোডেও পাবেন দেশি-বিদেশি নানা ডিজাইনের ফ্যাশনেবল স্কার্ফ।
মন্তব্য করুন