করোনাভাইরাসের সঙ্গে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগের কোনো সম্পর্ক নেই। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস একটি বিরল ছত্রাকজনিত রোগ আর করোনা হলো ভাইরাস সংক্রমিত রোগ। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শরীরে দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা না নিলে ৫০ শতাংশের অধিক রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। তাই এই ভয়াবহ রোগ সম্পর্কে জানা ও সচেতন হওয়া জরুরি


করোনাভাইরাসের ভয় কাটতে না কাটতেই আবার নতুন উপদ্রব নিয়ে এসেছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকোরমায়কোসিস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্লাক ফাঙ্গাস নিয়ে চলছে নানা গুজব। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বাংলাদেশে নতুন রোগ নয়, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে এর সংক্রমণ আগেও পরিলক্ষিত হয়েছে। আশা করি, আজকের লেখা অনেকের ভ্রান্তি দূর করবে এবং এই বিরল রোগ থেকে বেঁচে থাকতে সহায়ক হবে। করোনাভাইরাসের সঙ্গে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগের কোনো সম্পর্ক নেই। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস একটি বিরল ছত্রাকজনিত রোগ আর করোনা হলো ভাইরাস সংক্রমিত রোগ। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শরীরে দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা না নিলে ৫০ শতাংশের অধিক রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। তাই এই ভয়াবহ রোগ সম্পর্কে জানা ও সচেতন হওয়া জরুরি।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কীভাবে ছড়ায়?

এই রোগ ছোঁয়াচে নয়; ফলে এটি সরাসরি একজনের দেহ থেকে অন্যের দেহে যেতে পারে না। একমাত্র এ ধরনের ছত্রাকের ছোঁয়ায় এই রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। সাধারণত অপরিস্কার ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ছত্রাক বেড়ে ওঠে। প্রথমেই মুখমণ্ডলের (কপাল, নাক, চোখ এমনকি দাঁত) হাড়ের কোটরে ছত্রাক বাসা বাঁধে। ফুসফুস আক্রান্ত হয়, ত্বকের সমস্যা থেকে শুরু করে চোখের সমস্যা এমনকি দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারে। জটিল ক্ষেত্রে রক্তের মাধ্যমে মস্তিস্কে ছড়িয়ে যেতে পারে এবং দ্রুত চিকিৎসা না করলে ৩০-৫০ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হতে পারে।

কাদের ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি

- অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ডায়াবেটিক কেটো এসিডোসিস রোগীদের ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

- ক্যান্সারজনিত রোগ অথবা দীর্ঘদিন শারীরিকভাবে অসুস্থ রোগী যারা বিছানায় পড়ে আছেন, তাদের মধ্যেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগের প্রকোপ বেশি।

- ইমিউনোসপ্রেসেন্ট, অ্যান্টিক্যান্সার চিকিৎসা, দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবনকারী রোগীদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

- গুরুতর কভিড আক্রান্ত রোগী যারা অক্সিজেন অথবা ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। অপরিস্কার ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ভেন্টিলেটর ব্যবহারের ফলে এই রোগে আক্রান্ত বেশি হচ্ছে।
উপসর্গ

- মুখমণ্ডলে, নাক, কপাল, চোখ ও দাঁতে ক্ষত/কালো দাগ, ফুলে যাওয়া কিংবা ব্যথা হওয়া।

- অস্বাভাবিকভাবে কালো স্রাব নিঃসরণ হতে পারে, এমনকি নাক থেকে রক্ত পড়তে পারে।

-নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা, মাথাব্যথা, চোখ ব্যথা, চোখের চারপাশে ফোলাভাব, একটি জিনিসকে দুটি করে দেখার সমস্যা, চোখের লালচে ভাব, দেখতে সমস্যা হওয়া, চোখ বন্ধ করতে ও খুলতে সমস্যা হওয়া।

- কোনো কিছু চিবানো বা মুখ খোলার সময় সমস্যা হওয়া।

- দাঁত আলগা হয়ে যেতে পারে। মাড়ি, নাক ও মুখের ভেতরে কোনো অংশ ফুলে যেতে পারে এমনকি গর্ত হতে পারে।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস থেকে বাঁচার উপায় খুব সহজেই এ ভয়াল রোগ থেকে বাঁচা সম্ভব।


- নিজে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং আশপাশে পরিবেশকে পরিস্কার রাখা।

- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা।

-চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক ওষুধ ও স্টেরয়েড সেবন না করা। খুব প্রয়োজন ছাড়া স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ পরিহার করা, প্রয়োজনে খুব কম সময়ের জন্য খেতে হবে।

- ইমিউনিটি (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে।

- উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
কভিড-১৯-এর সঙ্গে কী সম্পর্ক?

কভিড-১৯ করোনাভাইরাসজনিত রোগ। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের অনেক কারণের মধ্যে একটি কারণ হলো কভিড-১৯। কভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় পলি ফার্মাসি (প্রয়োজন ছাড়া একগাদা ওষুধ, বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড সেবন), রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, অপরিস্কার ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ভেন্টিলেটর ব্যবহারের কারণে এই ছত্রাক বাসা বাঁধে এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগ দেখা দেয়।

আমরা রোগকে ভয় না পেয়ে কীভাবে জয় করা যায় সে ব্যাপারে সচেষ্ট হই। নিজে ও পরিবারের সবাই পরিস্কার থাকি, বাসা ও কর্মস্থলকে পরিস্কার রাখি, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাই, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করি এবং রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন না করলেই অনেক রোগ থেকে বাঁচা সম্ভব।