- লাইফস্টাইল
- শিশুর মনোযোগ বাড়াতে যা করবেন
শিশুর মনোযোগ বাড়াতে যা করবেন

ফাইল ছবি
আরশানের বয়স চার বছর। তাকে নিয়ে বেশ সমস্যায় আছেন ওর মা-বাবা। আরশানের মা খেয়াল করলেন, তার মনঃসংযোগ আগের থেকে বেশ কম। শুধু পড়াশোনা বলে নয়, গল্পের বই পড়া হোক বা বাড়ির ছোটখাটো কাজে- কোনোটাই মন দিয়ে করে না। ঠিক একই সমস্যা নিধি ও শায়ানেরও। লকডাউনের ফলে বাড়িতে বসে ক্লাস করার যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাচ্চারা, তারই প্রভাব কিনা বুঝতে পারছেন না তারা। দীর্ঘদিন ধরে ক্লাসরুম এক্সপিরিয়েন্স থেকে বঞ্চিত ওরা। টিচারদের সঙ্গে মুখোমুখি ইন্টারঅ্যাকশনের সুযোগ নেই। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ নেই। অনলাইনে অ্যাসাইমেন্ট জমা দেওয়া, পরীক্ষা দেওয়ার চাপ। তা ছাড়া বড়রা যতটা বেরিয়েছে, ছোটরা তো সেভাবে বেরোতে পারেনি। ওরা সেই চার দেয়ালের মধ্যেই বন্দি থেকেছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। যদিও এসব কিছুর সঙ্গেই এত দিনে মোটামুটি মানিয়ে নিয়েছে ওরা। কিন্তু অনেক বাচ্চার ওপরই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কারও কারও মেজাজে পরিবর্তন দেখা গেছে। অল্পতেই রেগে যাচ্ছে বা ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছে তারা। মন-খারাপ রোগে ভুগছে অনেকে। কারও কারও আবার মনোযোগে ঘাটতি হচ্ছে। কোনো বিষয়েই ঠিকভাবে মনঃসংযোগ করতে পারছে না তারা। এর অবশ্য প্রতিকারও রয়েছে।
প্রথমত, গ্যাজেট-অ্যাডিকশন। এতে মনোযোগের ক্ষমতা কমে। আর লকডাউনে এই গ্যাজেট-অ্যাডিকশন প্রভূত পরিমাণে বেড়ে গেছে। গ্যাজেটের ব্যবহার একেবারে বন্ধ তো করতে পারবেন না, কিন্তু সময় নির্দিষ্ট করে দিন। আর তার বদলে জিগস পাজল বা ক্রসওয়ার্ড জাতীয় খেলা খেলতে উৎসাহ দিন বাচ্চাকে। এতে মাথা খাটে, মন দিয়ে ভাবতে হয়। তা ছাড়া এক জায়গায় বসে খেলতে হয় বলে যাকে 'ফিজেট করা' বলা হয়, তার প্রবণতাও কমে যায়। এসবের ফলেই মনোযোগের ক্ষমতা বাড়ে। পড়াশোনার ক্ষেত্রে পরিবেশটা খুব জরুরি। বিশেষ করে এখন যখন ওরা ক্লাসরুম এনভায়রনমেন্টের সুবিধা পাচ্ছে না। বাচ্চা একটা ঘরে ক্লাস করছে। সেই ঘরেরই আরেক কোণে আপনি মিটিং সারছেন। কিংবা বাচ্চার পাশে বসেই নির্দেশ দিচ্ছেন আজ দুপুরে কী রান্না হবে। এতে যদি ওদের মন পড়ার থেকে সরে যায়, দোষের কী? শিশু যখন ক্লাস করবে বা পড়াশোনা, ওকে তার উপযুক্ত পরিবেশ দিন। ওর ঘরে তো বটেই, আশপাশেও তখন যেন কোনো গোলমাল না হয়, যাতে ওর মন সরে যেতে পারে। ক্লাসের সময় ঘরটা যেন ক্লাসরুমের মতোই হয়। ওকে বলুন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, বইখাতা, সব হাতের কাছে গুছিয়ে রাখতে; যাতে বারবার উঠতে না হয়, মন সরে না যায়। ছোট বাচ্চা হলে আপনিই তার দরকারি জিনিসগুলো গুছিয়ে রাখুন। তা ছাড়া একেক বাচ্চার একেক রকম অ্যাম্বিয়েন্স পছন্দ। ওর ঘরের লাইটিং বা ছবি ওর পছন্দ অনুযায়ী সাজান, যাতে ওর মন শান্ত এবং খুশি থাকে।
একেক বাচ্চার শেখার ধরন একেক রকম। কেউ শুনে বেশি ভালো মনে রাখতে পারে। কারও ভিজ্যুয়াল এলিমেন্টস। অর্থাৎ ডায়াগ্রাম, চার্ট, গ্রাফ ইত্যাদিতে বিষয়টা বেশি মনে গেঁথে যায়। কেউ আবার কোনো চ্যাপ্টার পড়ার পরে যদি সেটা নিজের মতো করে লিখে ফেলে, তাহলে তার আত্মস্থ করতে সুবিধা হয়। শিশুর এই বোঝার ধরনটা যদি বড়রা বুঝে সে অনুযায়ী তাদের পড়ান, তাহলে তাদেরও মন বসাতে সুবিধা হয়।
যে কোনো বড় কাজকে ছোট ছোট ভাগে ভেঙে দিলে কাজ করতে সুবিধা হয়। কাজটাও মন দিয়ে করে তারা। এটা পড়াশোনার ক্ষেত্রে তো সত্যি বটেই, বাড়ির কাজের ক্ষেত্রেও। ধরুন, আপনি শিশুকে বললেন, নিজের আলমারিটা গুছিয়ে ফেলতে। অনেকেই কিন্তু দোনামনা করবে, কাজটা ফেলে রেখে দেবে বা করলেও মন দেবে না। কিন্তু একেক দিন একেকটা তাক গুছিয়ে রাখতে বলুন, অনেক মন দিয়ে করবে। কাজের জন্য ছোট ছোট সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দিন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে গেলে ওকে মনোযোগ দিতে হবে।
প্রতিটি বাচ্চার পছন্দের হবি বা অ্যাক্টিভিটি এক হয় না। আপনার বাচ্চা ভালোবাসে গিটার বাজাতে, এদিকে আপনি চান ফাঁকা সময়ে ও শুধু বিভিন্ন ধরনের বই পড়ূক। এতে কিন্তু কারোরই লাভ হবে না। হ্যাঁ, বই পড়া নিশ্চয়ই খুব জরুরি। কিন্তু আপনি যদি ওর পছন্দের কাজটা ওকে না-ই করতে দেন, সেও কিন্তু আপনার পছন্দের কাজটা মন দিয়ে করবে না। তার চেয়ে মধ্যপন্থায় আসুন। ফাঁকা সময়ে ও ভালোবেসে মন দিয়ে গিটার বাজাক। ভালো ভালো বই ওকে পড়তে দিন। সেগুলো নিয়ে আলোচনা করুন। মতামত বিনিময় করুন। ধীরে ধীরে ওর আগ্রহ বাড়বে। আর যে বিষয়ে আগ্রহ, তাতে যে মনোযোগও থাকবে, সে তো বলা বাহুল্য। কাজের মাঝখানে বিরতি অত্যন্ত জরুরি। একটানা যে কোনো কাজ করতে গেলে ক্লান্তি। মনঃসংযোগ কমে। সে কাজে মাথা খাটাতে হোক অথবা হাত-পা। তাই বাচ্চা যাতে নিয়মিত ব্রেক নেয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। বিকেলে চাইলে একটু খেলে আসুক বা সাইক্লিং করে আসুক। এক্সারসাইজ হলে মন ভালো থাকে। মনোযোগে ঘাটতিও কম হয়। নজর রাখুন ওর খাওয়াদাওয়া ও ঘুমের দিকেও। অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড খেলে হজমের সমস্যা এবং আরও নানা গোলমাল হতে পারে শরীরে। যার প্রভাব মাথা এবং মনে পড়বেই। একই কথা ঘুমের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে সারাদিন ক্লান্ত লাগবে, কোনো কাজেই মন বসবে না। আর কাজের ভ্যালিডেশন অত্যন্ত জরুরি। যে কোনো কাজ ঠিকভাবে করতে পারলে যদি 'খুব ভালো' বলেন, ওর কাজে উৎসাহ বাড়বে। সঙ্গে বাড়বে মনোযোগ। া
মন্তব্য করুন