যাঁরা আত্মহত্যা করেন, তাঁদের অধিকাংশই আগে থেকে বেশ কিছু ইঙ্গিত দেন। আশপাশের কাছের মানুষেরা এই ইঙ্গিতগুলো খেয়াল করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে অনেক আত্মহত্যাই প্রতিরোধ সম্ভব। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আত্মহত্যার প্রবণতা কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
সাম্প্রতিক সময়ে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। এ তালিকায় আছেন পুলিশ, সাংবাদিকও। ফেসবুক লাইভে এসেও কেউ কেউ নিজেই কেড়ে নিচ্ছেন নিজের জীবন।
এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতি রুখতে ধর্মীয় অনুশাসন পালন, বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসন নিয়ন্ত্রণ, একইসঙ্গে দেশীয় সংস্কৃতি চর্চা ও পারিবারিক শিক্ষা, নিয়মের মধ্যে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার, সামাজিক ও মানসিক সম্পর্ক বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়, পারিবারিক ধর্মীয় ও সামাজিক দায়িত্ববোধের অভাব, বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসন, ডিজিটাল ডিভাইসে আশক্তি, পারিবারিক কলহ, পরকীয়া, প্রেমে ব্যর্থতা, চাকরি হারানো, দীর্ঘদিনের বেকারত্ব, দরিদ্রতা, প্রতারণার শিকার, ব্যবসায় বড় ধরনের ক্ষতি, প্রিয়জনের মৃত্যু, পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল না পাওয়া, যৌথ পরিবার ভেঙে যাওয়া, মাদকাসক্তের মতো সমাজবিরোধী আচরণও আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ায়।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেখলা সরকার সমকালকে বলেন, বিভিন্ন কারণেই মানুষ আত্মহত্যার পথে হাঁটে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ মানসিক সমস্যা। এ সমস্যার সমাধান করা গেলে আত্মহত্যা থেকে অনেককেই বাঁচানো সম্ভব। কারও যদি মানসিক রোগ, বিষণ্ণতা কিংবা মাদকাসক্ত থাকে, তাঁদের সময়মতো চিকিৎসার আওতায় আনা গেলে আত্মহত্যা রোধ করা যায়। এছাড়া ছোট থেকেই শিশুদের খেলাধুলা, অন্যদের সঙ্গে মেলামেশাসহ বিভিন্নভাবে সোশ্যাল স্কিল ডেভেলপ করতে পারলে আত্মহত্যার প্রবণতা কমিয়ে আনা সম্ভব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মেহজাবীন হক সমকালকে বলেন, ব্যক্তিগত জীবনে মানুষের ব্যর্থতা আসবেই। এই কষ্টের পরিস্থিতি সবাইকে মোকাবিলা করতে হয়। তবে কষ্ট ও হতাশার কারণে অল্প সংখ্যক মানুষ আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যা কিছুতেই কষ্ট নিবারণের পথ হতে পারে না। আত্মহত্যা রোধে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কোনো ব্যক্তির আচরণে যদি হঠাৎ বড় পরিবর্তন দেখা দেয় তাঁকে সবসময় চোখে চোখে রাখতে হবে। তাঁর আচরণ পরিবর্তনের কারণ খুঁজে বের করতে হবে। তিনি আরও বলেন, সমাজের চোখে অপরাধী হওয়ার ভয়ে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। তবে মরে যাওয়াটা সমাধান নয়। কষ্টের সময় সহজে পার করার অনেক পথ রয়েছে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে হলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এজন্য প্রত্যেক মানুষের মনের ও স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে। মানসিক রোগ বা মানসিক সংকটের কারণে অনেকেই আত্মহত্যা করছে। এটি প্রতিরোধে সামাজিক দক্ষতা বাড়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শিশুদের বিকাশের সময় তাদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা সফলতার মতো ব্যর্থতাকে মেনে নিতে পারে। আত্মহত্যার উপকরণ, যেমন ঘুমের ওষুধ, কীটনাশকের সহজলভ্যতা কমাতে হবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম বড় ভূমিকা রাখতে পারে। গণমাধ্যমে আত্মহত্যার সংবাদের অতিপ্রচার, অপপ্রচার বা অদায়িত্বশীল সংবাদ পরিবেশনের কারণেও কখনও কখনও আত্মহত্যার ঘটনা বাড়তে পারে।