শিশুর কোমল-মসৃণ ত্বক স্বাভাবিকভাবেই নাজুক হয়। সেই সংবেদনশীল ত্বকের যত্নে তাই সর্বদাই বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন। নিয়মিত গোসলের পাশাপাশি শিশুর ত্বকের যত্নে লোশন, সাবান, শ্যাম্পু এসব নির্বাচনে সতর্ক থাকতে হয়। কেননা শিশুর নাজুক ত্বকে ভুল পণ্য ব্যবহারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এতে উপকারের বদলে অনেক সময় ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।
শিশুর গোসলে চাই বিশেষ মনোযোগ
খুব গরম বা ঠান্ডা জলে শিশুকে গোসল করানো একেবারেই ঠিক নয়। তাদের গোসলে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করাই শ্রেয়। গোসল করানোর সময় শিশুর বগল, গলার নিচের অংশ আলাদাভাবে পরিস্কার করতে হবে। নয়তো এসব জায়গায় ছত্রাক সংক্রমণ বা ফাঙ্গাল ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। গোসলের পর শিশুর শরীরে যেন শ্যাম্পু ও সাবান লেগে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে শিশুর চোখে যেন শ্যাম্পু না ঢোকে। তবে নবজাতককে প্রতিদিন গোসল না করিয়ে ভেজা তোয়ালে দিয়ে গা মুছে দেওয়াই ভালো।
সাবান ও শ্যাম্পু যেমন হবে
শিশুর সংবেদনশীল ত্বকের জন্য সবসময়ই চাই উপযুক্ত সাবান ও শ্যাম্পু। শিওর সেল মেডিকেল বাংলাদেশের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তাওহীদা রহমান ইরিন বলেন, 'সাধারণত বয়স্কদের থেকে শিশুর ত্বক ৩০ ভাগ পাতলা হয়। তাই শিশুর শ্যাম্পু ও সাবান নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে। শিশুর ত্বকের পিএইচ লেভেল ৫ দশমিক ৫। তাই পিএইচ লেভেল ৫ দশমিক ৫ থেকে ৫ দশমিক ৬-এর মধ্যে আছে এমন শ্যাম্পু ও সাবান কিনতে হবে।' তিনি আরও বলেন, 'শিশুর জন্য সাবান ও শ্যাম্পু কেনার আগে দেখে নিতে হবে সেখানে যেন কোনো কেমিক্যাল, কৃত্রিম সুগন্ধি, অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান না থাকে। অবশ্যই এমন পণ্য কিনতে হবে যেগুলো ডার্মাটোলজিক্যালি ও ক্লিনিক্যালি পরীক্ষিত। এমন পণ্য ব্যবহার করা উচিত, যেখানে নারকেল, আমন্ড ও জোজোবা তেল যুক্ত থাকে। এসব পণ্যে ভিটামিন এ, ডি, ই থাকলে সেগুলো শিশুর কোমল ত্বকের জন্য বেশ উপযোগী হবে।'
উল্লেখ্য, নবজাতককে দেখতে এলে আত্মীয়স্বজনেরা অনেক সময় সাবান, শ্যাম্পু ইত্যাদি উপহার দেন। এসব পণ্য ব্যবহারের আগে দেখতে হবে পিএইচ লেভেল ৫ দশমিক ৫ থেকে ৫ দশমিক ৬-এর মধ্যে আছে কিনা। পণ্য তৈরিতে ব্যবহূত উপাদান শিশুবান্ধব কিনা, সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে।
খুশকি হলে কী করবেন?
শিশুর মাথার ত্বকে অনেক সময় খুশকির মতো দানা দেখা যায়। এগুলো দেখতে ভেজা মনে হয়। এই ধরনের দানা কিংবা খুশকি দেখা দিলে ভুলেও বড়দের অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করা যাবে না। শিশুদের উপযোগী শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। চুলে বেবি অয়েল দিয়ে সফট ব্রাশের সাহায্যে ধীরে ধীরে আঁচড়াতে হবে।
শিশুর চুলের ছাঁট
গরমে শিশুর চুল ছেঁটে একেবারে ছোট করে দিন। এতে তারা স্বস্তি পাবে। অপেক্ষাকৃত বড় মেয়েশিশুদের চুল যদি খানিকটা বড় থাকে, সে ক্ষেত্রে ঝুঁটি কিংবা বেণি করে দিলে ভালো হয়।
পরিচ্ছন্নতা ও অন্যান্য
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. লুনা পারভীন বলেন, 'শিশুর ত্বক ভালো রাখতে প্রথমত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুর শরীর যেন না ঘামে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুকে পর্যাপ্ত পানি পান করাতে হবে। ত্বকের খসখসে ভাব দূর করার জন্য নিয়মিত গোসলের পাশাপাশি অলিভ অয়েল বা ভ্যাসলিন মালিশ করতে হবে।' তিনি জানান, অ্যালার্জিজনিত চুলকানি বা ত্বকের সংক্রমণ রোধে পাতলা সুতি কাপড় পরাতে হবে। পোকামাকড় ও মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য মশারি, মশকিউটো রিপিলেন্ট ব্যবহার করা আবশ্যক।

বিষয় : শিশুর ত্বকের যত্ন শিশুর ত্বক

মন্তব্য করুন