চুরির অভিযোগে প্রকাশ্যে সালিশ বসানো হবে। সেখানেই বিচার করা হবে ৬৫ বছর বয়সী পরীক্ষিত দাসের। ঢাকা মহানগর উত্তরের কেন্দ্রীয় মন্দিরের নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে এমন কথা শুনে মাথা নিচু করে বারবার তাঁদের পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চান মন্দিরটির সেবায়েত (কেয়ারটেকার)। এরপরও মন গলেনি তাঁদের। সালিশ বসলে অপমান-অপদস্থ হতে হবে তাঁকে। আত্মীয়স্বজনের কাছে মুখ দেখাবেন কীভাবে! মন্দির পরিচালনা কমিটির কয়েকজন সদস্যের নির্মম আচরণ ও কঠোর মনোভাব কেড়ে নিল পরীক্ষিতের প্রাণ। ফল- চুরির তকমা দিয়ে প্রকাশ্যে বিচার করলে সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিলেন তিনি। গত ১৬ আগস্ট কাফরুলের মন্দিরের ভেতরেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। তাঁর গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই থানার কল্যাণী এলাকায়।

পরীক্ষিতের পরিবার বলছে, মন্দির কমিটির লোকজনের কারণে পরীক্ষিতের এই পরিণতি। এর পুরো দায় তাঁদের। তাঁদের নিপীড়নের কারণে এই বয়সের একটি লোক আত্মহননের মতো সিদ্ধান্ত নিলেন। চুরি কেউ করলেও তা ক্ষমা করা যায়। আর অভিযোগ করলেও তা প্রমাণসাপেক্ষ। এ জন্য দেশে আইন আছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করেন তাঁরা।

আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মন্দিরের সভাপতি বিপ্লব বিজয়ী হালদার (৪৭), সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন সাহা (৫৫) ও দপ্তর সম্পাদক বাদল সরকারের (৩৫) বিরুদ্ধে মৃত ব্যক্তির ছেলে ভক্ত দাস বাদী হয়ে কাফরুল থানায় মামলা করেছেন। মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশিদ বলেন, মন্দিরের ওই ঘটনা আমাদের নজরে এসেছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তদন্ত-সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা এবং পরীক্ষিত দাসের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, প্রায় ১১ বছর তিনি কাফরুলে কেন্দ্রীয় মন্দিরে কেয়ারটেকার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৫ আগস্ট রাত পৌনে ১২টার দিকে একটি ব্যাগ নিয়ে মন্দির থেকে বের হচ্ছিলেন তিনি। ওই ব্যাগে মন্দিরের ফল ছিল এবং সেগুলো চুরির অভিযোগ তোলেন মন্দিরের সভাপতি বিপ্লব বিজয়ী হালদার, সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন সাহা ও দপ্তর সম্পাদক বাদল সরকার। পরদিন সকালে প্রকাশ্যে সালিশ বসিয়ে বিচার করার হুমকি দেওয়া হয়।

মন্দিরের একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে- পরীক্ষিত দাস বের হচ্ছেন। এ সময় বিপ্লব, সুমন ও বাদল তাঁকে বাধা দেন। তাঁরা হাত নাড়িয়ে কথা বলছেন পরীক্ষিত দাসের সঙ্গে। একপর্যায়ে পরীক্ষিত দাস তাঁদের একজনের দুই পা জাড়িয়ে ধরেন। পরে উঠে ওই ব্যক্তিকে বুকে আঁকড়ে ধরেন তিনি। ভিডিওতে স্পষ্ট, তিনি বারবার ক্ষমা চাচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে অপর দু'জনেরও পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চান। পরে তাঁরা পরীক্ষিত দাসকে রেখে চলে যান। এর পরই তিনি মন্দিরে দ্বিতীয় তলায় ওঠার সিঁড়ির রেলিংয়ের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরদিন সকালে সেখান থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে কাফরুল থানা পুলিশ।

কেন্দ্রীয় মন্দিরের সাবেক সভাপতি নিথীশ কুমার সাহা সমকালকে বলেন, পরীক্ষিত দাস একজন নিরীহ মানুষ। আত্মমর্যাদা নিয়ে থাকতেন তিনি। ফল চুরির অভিযোগে তাঁকে বিপ্লব, সুমন ও বাদল অপমান-অপদস্থ করেছেন। সালিশ বসিয়েও বিচার করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষিত ফল চুরি করার মতো মানুষ নন বলে দাবি করেন তিনি।

ডিবির মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মানস কুমার পোদ্দার সমকালকে বলেন, তাঁর টিম মামলার তদন্ত শুরু করেছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

বিষয় : চুরির অপবাদ লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহনন

মন্তব্য করুন