আর্থ্রাইটিস বা অস্থিসন্ধির প্রদাহ দেশে বাতব্যথা হিসেবে পরিচিত। গবেষণার তথ্যানুযায়ী, দেশে পূর্ণবয়স্ক তিনজনের একজন এখন কোনো না কোনো বাতব্যথায় ভুগছেন। অল্পবয়সীদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার হারও বাড়ছে। তবে আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধে বাজেট-বরাদ্দ অপ্রতুল। নেই জেলা-উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসাব্যবস্থা। দেশের জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশ এ রোগে আক্রান্ত হলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন ৬০ থেকে ৬৫ জন। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, ভুল চিকিৎসা বা সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় না হলে আক্রান্ত ব্যক্তি কর্মসক্ষমতা হারাতে পারেন। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে আর্থ্রাইটিস শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।
এমন প্রেক্ষাপটে আর্থ্রাইটিস বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস পালিত হচ্ছে আজ বুধবার। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য- 'আর্থ্রাইটিস রোগের চিকিৎসা হাতের নাগালে, আজই পদক্ষেপ নিন।'

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারনাল মেডিসিন ও রিউমাটোলজি বিভাগের উদ্যোগে আর্থ্রাইটিস নিয়ে সবশেষ ২০২০ সালে একটি গবেষণা করা হয়। গবেষণায় প্রাপ্তবয়স্ক বিভিন্ন বয়সের ১ হাজার ৮৪৩ জনের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হয়। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে ব্যথাজনিত সমস্যায় ভুগছেন। পুরুষের তুলনায় নারীরা এই রোগে আক্রান্ত হন বেশি। তাঁদের মধ্যে পিঠের ব্যথায় ভোগেন ১২ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ। হাঁটুর আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। নরম টিস্যুতে ব্যথা রয়েছে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষের। রিউমাটয়েড বাতে ভুগছেন ১ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ। ব্যথাজনিত সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের মধ্যে অতিরিক্ত ওজন, শারীরিক আঘাত ও অতিমাত্রায় ডায়াবেটিস পাওয়া গেছে।

বিএসএমএমইউর রিউমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক আবু শাহীন বলেন, বিশাল জনগোষ্ঠীর এই রোগের চিকিৎসার জন্য একমাত্র বিএসএমএমইউতে রিউমাটোলজি বিভাগ চালু করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরিতে রিউমাটোলজির ওপর ডক্টর অব মেডিসিন (এমডি) এবং এফসিপিএস ডিগ্রি চালু রয়েছে। রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিতে রয়েছেন মাত্র ৬০ থেকে ৭০ জন রিউমাটোলজিস্ট। এর চিকিৎসা নিশ্চিতে দেশের আটটি পুরোনো মেডিকেল কলেজে রিউমাটোলজি বিভাগ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।

বিএসএমএমইউর রিউমাটোলজি বিভাগের চিকিৎসক আবুল খালিদ আমেদুল্লাহ সমকালকে বলেন, এক-তৃতীয়াংশ মানুষ আর্থ্রাইটিস বিষয়ে ভালো জ্ঞান রাখেন না। এই রোগে আক্রান্ত অনেকেই চিকিৎসার বাইরে থাকেন। চিকিৎসাব্যবস্থা প্রসারে দেশের সব সরকারি হাসপাতালে রিউমাটোলজি বিভাগ চালু করা প্রয়োজন। প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করাও জরুরি।

বিএসএমএমইউর রিউমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক মিনহাজ রহিম চৌধুরী বলেন, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস সবচেয়ে বেশি দেখা দেয়। সাধারণত নারীরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন। এটি রোগীকে পঙ্গু করে দিতে পারে।