ফরিদপুর-২ আসনের উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে মাত্র ২৬ শতাংশের একটু বেশি। নির্বাচনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হয়। সার্বিক পরিবেশ ছিল স্বাভাবিক। তারপরও সেখানে সাম্প্রতিককালে অনুষ্ঠিত দেশের সব স্থানীয় ও উপনির্বাচনের তুলনায় ভোটার উপস্থিতি ছিল সর্বনিম্ন।

কেন ও কী কারণে এমন হলো- এর ব্যাখ্যা একেক মহলে একেক রকম হলেও সবকিছু ছাপিয়ে ছিল শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকার বিষয়টি। বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবু। তিনি পেয়েছেন ৬৮ হাজার ৮১২ ভোট এবং খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী বকুল মিয়া পেয়েছেন ১৪ হাজার ৮৭৮ ভোট। দু'জনের ব্যবধান অর্ধলাখেরও বেশি। অর্থাৎ, সত্যিকার অর্থে ভোটযুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ব্যর্থ হয়েছেন বকুল। এ কারণে ভোট পড়েছে ২৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। সব কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর এজেন্ট থাকলেও অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রেই পাওয়া যায়নি একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী খেলাফত আন্দোলন মনোনীত বটগাছ প্রার্থীর এজেন্ট। এতে বোঝা যায়, ভোটকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি এক পক্ষ, ভোটারদের ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করা গেছে একই মনোভাব।

ভোটের দিন সরেজমিনে ফরিদপুর-২ আসনের নির্বাচনী এলাকা নগরকান্দা, সালথা ও সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিতির হার কিছুটা বাড়তে থাকে। এ ছাড়া যেটুকু ভোট পড়েছে, তার পেছনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধিদের। এ জন্য তাঁদের যাঁর যাঁর বাড়ির পাশের কেন্দ্রে ভোটার বাড়াতে তৎপর দেখা যায়।

নগরকান্দা উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান সরদারের বাড়ির পাশের কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, পাশেই স্কুলের মাঠে বিশাল পাত্রে পানি গরম করে আগতদের চা-বিস্কুট দিয়ে আপ্যায়ন করা হচ্ছে।

সালথা উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও সালথা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনকে দুপুরে তাঁর বাড়ির পাশের ভোটকেন্দ্রে একইভাবে তৎপর থাকতে দেখা যায়। তিনি বলেন, বিরোধী প্রার্থী দুর্বল হওয়ায় ভোটাররা কেন্দ্রে আসতে অনীহা প্রকাশ করছেন। এ জন্য আমরা ভোটার বাড়াতে বাড়ি বাড়ি লোকজন পাঠিয়েছি।

বিলম্বে ভোট দিতে আসা স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ইভিএমে সহজেই ভোট দেওয়া যাচ্ছে- এ খবরটি তাঁরা পেয়েছেন যাঁরা ভোট দিয়ে গেছেন, তাঁদের কাছে। ভোট দেওয়ার ভালো পরিবেশ আছে- এটা তাঁদের কাছে নিশ্চিত হওয়ার পরই ভোটারদের সংখ্যা কিছু বাড়ে।

ভোটার হাফিজ উদ্দীন বললেন, ভোটের চেয়ে ক্ষেতের ফসলের পরিচর্যার দিকে মানুষের আগ্রহ বেশি। দুই প্রার্থী সমান সমান না হলেও কাছাকাছি হয়, তবুও সেটা মানায়। একজন বিশাল প্রভাবশালী, আরেকজন তাঁর তুলনায় কিছুই না। তাঁকে এলাকার কেউ তেমন চেনে না। সব কেন্দ্রে তিনি এজেন্টও দিতে পারেননি। তাই ভোটারদেরও আগ্রহ কম এই ভোটে।

উপনির্বাচনে কেন্দ্রে উপস্থ্থিতি কেন কম- এ বিষয়ে বিজয়ী সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবু সমকালকে বলেন, আমার প্রতিন্দ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে দুর্বল, এলাকায় তাঁর জনসম্পৃক্ততা কম। এ কারণে মানুষের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল, আওয়ামী লীগের প্রার্থী এমনিতেই জিতে যাবে। তাই ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার তাগিদ কম অনুভব করেছে। আমার বিরুদ্ধে শক্তিশালী কোনো প্রার্থী থাকলে ভোটার উপস্থিতির হার ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেত।

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন মনোনীত বটগাছ প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বকুল মিয়া বলেন, আমি নির্বাচন পদ্ধতিতে বিশ্বাসী। তবে কিছু কেন্দ্র বাদে প্রায় সব কেন্দ্রে আমার এজেন্ট দেওয়া হয়েছিল। যেসব কেন্দ্রে এজেন্ট নেই, সেখানে ইভিএমই আমার এজেন্ট। বেশ কিছু কেন্দ্র থেকে তাঁর পুলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তবে খোঁজ নিয়ে এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিরপেক্ষভাবে কাজ করেছেন। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশ মাঠে  কাজ করে।

খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও ফরিদপুর-২ আসনের রিটার্নিং অফিসার মো. হুমায়ূন কবির বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশ, বিজিবি ও আনসারের পাশাপাশি তিনজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ ১৩ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেছেন।

ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে গত ১১ সেপ্টেম্বর সংসদীয় এই আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।