- লাইফস্টাইল
- হাঁটু ব্যথা :কী করবেন
হাঁটু ব্যথা :কী করবেন
-samakal-636f331226bca.jpg)
জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে প্রায় সব বয়সের মানুষই হাঁটুর ব্যথায় ভোগেন। বিশেষ করে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হাঁটুর হাড় বা জয়েন্ট ক্ষয় হওয়া শুরু হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় অস্টিও-আর্থ্রাইটিস। হাত, পা ও মেরুদণ্ডের ওজন বহনকারী যে কোনো জয়েন্টই অস্টিও-আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হতে পারে। তবে মানবদেহের ওজন বহনকারী গুরুত্বপূর্ণ জয়েন্ট হওয়ায় হাঁটুতে অস্টিও-আর্থ্রাইটিস আক্রান্তের ঝুঁকি ও প্রবণতা থাকে সবচেয়ে বেশি।
হাঁটু আঘাতপ্রাপ্ত হলে, হাঁটুতে ইনফেকশন হলে, পূর্বে হাঁটুর ভুল চিকিৎসা বা আঘাত ও সার্জারি-পরবর্তী জটিলতা দেখা দিলে অস্টিও-আর্থ্রাইটিসের প্রবণতা বাড়ে। সাধারণত বার্ধক্যজনিত কারণে রোগটি সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষই প্রাপ্ত বা মধ্যবয়সে হাঁটু ক্ষয় বা ব্যথার সমস্যাকে তেমন একটা গুরুত্ব দিতে চান না, যা মোটেই উচিত নয়। একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, বিশ্বে প্রতি পাঁচজন প্রাপ্ত বা মধ্যবয়স্ক মানুষের মধ্যে একজন আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত। ২০২০ সালের একটি সমীক্ষা মতে, বাংলাদেশে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ হাঁটুর সমস্যায় ভুগছেন। যদি শুরুর দিকে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয়, তাহলে বার্ধক্যে বাড়তি ভোগান্তিতে পোহাতে হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণ কাজগুলো করতে পারেন না, এমনকি চলাফেরাও করতে পারেন না। এতে করে তাঁর ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত ও রক্তচাপের সমস্যা জটিল হতে পারে। এ ছাড়া দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭২ বছর হয়েছে। ফলে অস্টিও-আর্থ্রাইটিসের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এবং অনেকে দীর্ঘ সময় রোগে ভুগছেন।
দেশে পর্যাপ্ত চিকিৎসা-সুবিধা, উন্নতমানের প্রযুক্তি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম, দক্ষ চিকিৎসকের অভাব এখনও পুরোপুরি কাটেনি। ফলে এত রোগীর চাপ ও তাঁদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করাও দিন দিন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। আর্থ্রাইটিসের কারণে ও চিকিৎসার অভাবে অনেক রোগী পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। সাধারণত এসব রোগী জয়েন্ট ব্যথা নিয়ে আসেন। বড় বড় জয়েন্টে হয়। সাধারণত হাঁটুর জয়েন্ট, পৃষ্ঠদেশের জয়েন্ট এবং ঘাড়ের জয়েন্টে সমস্যা নিয়ে আসেন। হাঁটুতে অস্টিও-আর্থ্রাইটিস হলে সাধারণত হাঁটু ব্যথা, ফোলা, হাঁটতে-চলতে কষ্ট নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। হাঁটু ব্যথা নিয়ে কোনো রোগী এলে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সাধারণ ওষুধ খাওয়া ও বিশেষ ব্যায়ামের পরামর্শ দিই।
আবার কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুযায়ী সার্জারির পরামর্শও দিয়ে থাকি। এ পর্যন্ত আমি হাজারেরও বেশি সার্জারি সম্পন্ন করেছি।এসব রোগীর বেশ কিছু জিনিস মেনে চলতে হবে, যেমন- ওজন কমানো, ধূমপান বন্ধ করতে হবে। এর পর হাড়ের ঘনত্ব যেন ঠিক থাকে এ জন্য ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি এগুলো ঠিকমতো খেতে হবে। যেসব জয়েন্ট আক্রান্ত হয় এসব জয়েন্টের জন্য ফিজিওথেরাপি, বিভিন্ন অকুপেশনাল থেরাপি আছে সেই সাহায্যকারী থেরাপিগুলো দিলে জয়েন্টগুলো ধীরে ধীরে কর্মক্ষম হয়ে যায়।
শুরুতেই সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রূপে ফিরিয়ে আনা ও শারীরিক সুস্থতা নিয়ে সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে, হাঁটু ব্যথা, হাঁটু ক্ষয়, আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি যে শুধু বার্ধক্যতেই কষ্ট দেবে, তা নয়। বরং ব্যক্তির যৌবনকালেও বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই সবার প্রতি পরামর্শ, অবহেলা না করে শুরু থেকেই জীবনযাত্রায় সচেতন হন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
[সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও কো-অর্ডিনেটর, অর্থোপেডিক এবং ট্রমা ডিপার্টমেন্ট, এভারকেয়ার হসপিটাল, ঢাকা]
মন্তব্য করুন