- লাইফস্টাইল
- পাহাড়ের সমস্যার সমাধান হবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে
শান্তিচুক্তির ২৫ বছরপূর্তিতে বক্তারা
পাহাড়ের সমস্যার সমাধান হবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে

পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৫ বছর পার হলেও পাহাড়ে সমস্যা রয়ে গেছে। সেখানে কথা বলার অধিকার নেই। বাড়ছে দখলদারিত্ব। সরকারকে এই সমস্যার সমাধান রাজনৈতিকভাবেই করতে হবে। সেটি না হলে সমস্যা আরও গভীর হবে।
শুক্রবার শান্তিচুক্তির ২৫ বছরপূর্তি উপলক্ষে রাজধানী ছাড়াও রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানসহ বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। এসব কর্মসূচিতে বক্তারা শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে দাবি আদায়ে আগামী ২০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিল কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়।
আগারগাঁওয়ের আলোচনা সভায় জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) প্রধান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমা বলেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর চুক্তি স্বাক্ষরকারী আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকলেও পূর্ণ বাস্তবায়ন করেনি। এ নিয়ে পাহাড়ি জনগণের বুকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। বেঁচে থাকার তাগিদেই একদিন তার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। আদিবাসী জনগণের সংগ্রাম সারাদেশের মেহনতি মানুষের লড়াই-সংগ্রাম এক স্রোতে মিলে আছে। এখান থেকেই বৃহত্তর আন্দোলনের জন্ম হবে। যে আন্দোলন কেউ থামাতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, 'শান্তিচুক্তি পাহাড়ি জনগণের অস্তিত্ব। এটি পাহাড়িরা ভুলবে না। আগামী দিনে চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে উদ্যোগ না নিলে পাহাড়ের মানুষ আন্দোলনের পথ বেছে নেবে।'
আলোচনা সভায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, 'পাহাড়ে বসবাসরত সেটেলার বাঙালিদের সমতল এলাকায় পুনর্বাসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষরকারী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু আজও তা পালন করা হয়নি। সরকারকে রাজনৈতিকভাবেই পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার সমাধান করতে হবে। অন্যথায় সংকট আরও গভীর হবে।'
পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের সদস্য খুশী কবির বলেন, আদিবাসীদের আদিবাসী বলা যাবে না- এ নিয়ে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তারা প্রকৃতপক্ষে আদিবাসী। বাহাত্তরের সংবিধান এ পর্যন্ত ১৭ বার সংশোধন করা হলেও আদিবাসী শব্দটি যুক্ত করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, প্রলোভন দেখিয়ে বাঙালি মুসলমানদের পার্বত্যাঞ্চলে নেওয়া হয়েছে। তারা এখন সোনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় আছে। আদিবাসীদের বিরুদ্ধে তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, 'পাহাড়ে কথা বলার অধিকার নেই। দখলদারিত্ব বাড়ছেই। শান্তিচুক্তি ভূলুণ্ঠিত হয়েছে।'
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, ২৫ বছরেও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, তিন জেলা পরিষদ পরিচালনায় বিধি করা হয়নি। চুক্তি বাস্তবায়নে একটি সময়সূচিভিত্তিক রোডম্যাপ তৈরিতে সরকারের প্রতি তাগিদ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এ দিকে শান্তিচুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল রাজধানীতে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। সকালে ধানমন্ডিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শুরু হয় কর্মসূচি। এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, মন্ত্রণালয়ের সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে রাজধানীর বেইলি রোডে শেখ হাসিনা পার্বত্য কমপ্লেপ প্রাঙ্গণে ফেস্টুন, শান্তির প্রতীক ২৫টি কবুতর ওড়ানো হয়। পরে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি।
রাঙামাটি অফিস জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙামাটি জেলা শাখা দিবসটি উপলক্ষে সমাবেশ করেছে। এতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি উষাতন তালুকদার বলেন, পার্বত্য সমস্যা রাজনৈতিক, একে রাজনৈতিকভাবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান করতে হবে।
সেনাবাহিনীর শান্তি র্যালি : শুক্রবার রাঙামাটিতে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে শান্তি র্যালি হয়। পরে দুস্থদের মধ্যে সেলাই মেশিনসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার জেলার মহালছড়ি উপজেলার করল্যাছড়িমুখ জুনিয়র হাইস্কুল মাঠে গণসমাবেশ হয়। জনসংহতি সমিতির (জেএসএস-এমএন লারমা) সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেএসএসের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিমল কান্তি চাকমা। বক্তব্য দেন- কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি, রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা, সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের চত্বর থেকে শান্তিচুক্তির ২৫ বছর পূর্তিতে বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও আলোচনা সভা হয়। অলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পাবর্ত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। সভাপতিত্ব করেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হা।
মন্তব্য করুন