হাড়কাঁপা শীতে শরীরকে উষ্ণ রাখবে কিছু খাবার। যাঁদের ঠান্ডা, শ্বাসকষ্ট ও অন্যান্য অসুখ আছে তাঁদের জন্য এ খাবারগুলো উপকারী হবে। লিখেছেন পুষ্টিবিদ ইতি খন্দকার

মৌসুমি বায়ুর পরিবর্তনের ফলে শীতকালে ছোট, বড় ও বয়স্ক সবারই কমবেশি জ্বর, ঠান্ডা, কাশি লেগে থাকে। অতিরিক্ত ঠান্ডায় যাঁদের শ্বাসকষ্ট আছে, তাঁদেরও নানা ধরনের বিপত্তি পোহাতে হয়। তাই শীতকালে পরিবারসহ নিজেকে এই ধরনের রোগ জীবাণু থেকে মুক্ত রাখতে হলে পোশাকের পাশাপাশি খাবারের মাধ্যমেও শরীরকে উষ্ণ রাখা যেতে পারে।

যেসব খাবার শরীরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করবে
শীতকালে সেই ধরনের খাবারগুলোকেই প্রাধান্য দিতে হবে যে খাবারগুলো হজম হতে সময় নেয়। কারণ এগুলো ভাঙতে অনেক বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়। যার ফলে শরীরে প্রচুর পরিমাণে তাপ উৎপন্ন হয় এবং শরীরকেও উষ্ণ রাখে।

মসলা ও ভেষজ জাতীয় উপাদান :তুলসী পাতা, পুদিনা পাতা, দারুচিনি, তেজপাতা, এলাচ, লবঙ্গ, জয়ফল, আদা, রসুন, লেমন গ্রাস এবং পেঁয়াজ, পেঁয়াজের পাতা ও পেঁয়াজের কলি এই উপাদানগুলো আমাদের শরীরকে উষ্ণ রাখতে অনেক সাহায্য করে। তা ছাড়া এ উপাদানগুলো অনেক পুষ্টিগুণসম্পন্ন। রান্নার পাশাপাশি এ উপাদানগুলো দিয়ে চা বানিয়ে পান করতে পারেন। চা ঠান্ডা-কাশির হাত থেকে বাঁচিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়াবে।

মূল জাতীয় সবজি : মাটির নিচে জন্মায় এমন সবজি যেমন গাজর, মুলা, শালগম, আলু, মিষ্টি আলু, কচুরমুখি, বিটরুট সবজি শরীরকে উষ্ণ রাখবে। এ সবজিগুলো হজমে অনেক সময় নেয়; যার ফলে শরীরে তাপ উৎপন্ন হয়ে থাকে।

প্রাণিজ প্রোটিন :খাসি, গরু, হাঁস ও মুরগির মাংস এবং ডিম খাবারগুলো শরীরকে উষ্ণ রাখবে। কিন্তু এ খাবারগুলো শীতকালে প্রচুর পরিমাণে খাওয়া যাবে না। এতে বেশি কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে যাবে।

শুকনো ফল :খেজুর, অ্যাপ্রিকট, আখরোট, কাজুবাদাম, তিল, কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, পেস্তা বাদাম ইত্যাদিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্যকর মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, প্রোটিন এবং ফাইবার। শরীর যখন শক্তির জন্য এসব বাদাম ও বীজ ভেঙে ফেলে, তখন শরীরে তাপ উৎপাদনের এক প্রক্রিয়া শুরু হয়। যাকে বলা হয়, থার্মোজিনেসিস। যার ফলে এ খাবার শরীরকে উষ্ণ রাখে এবং পাশাপাশি এই শুকনো ফলগুলো আমাদের অতিরিক্ত ফ্যাট, ওজন, কোলেস্টেরল ও ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করে ও রক্ত চলাচল সমৃদ্ধ করে থাকে।

ঘি এবং মধু : ঘিতে থাকা চর্বি শরীরকে উষ্ণ রাখে শুধু তাই নয়, ঘি আমাদের খাবারকে হজম করতে সহায়তা করে। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ঠান্ডাজনিত ফ্লু্ল থেকেও রক্ষা করে থাকে। মধু প্রাকৃতিকভাবেই উষ্ণ। নিয়মিত মধু খেলে শরীর উষ্ণ থাকতে সাহায্য করে। পাশাপাশি মধু সর্দি-কাশি ও ফ্লু থেকে মুক্ত রেখে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। প্রতিদিন সকালে কুসুম গরম পানিতে এক চামচ মধু ও এক চামচ দারুচিনির গুঁড়া খেতে পারেন। এ ছাড়া মসলা চা কিংবা তুলসী চা এগুলোয় মধু ব্যবহার করতে পারেন। স্বাদের পাশাপাশি এদের পুষ্টিগুণও বেড়ে যাবে।

শরীরকে উষ্ণ রাখতে আরও যে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে :দৈনিক চাহিদার তুলনায় পানি খুব কম পরিমাণে গ্রহণ করা হয় শীতকালে। তাই পানির ঘাটতি পূরণ করতে হলে পানি জাতীয় খাবার, অর্থাৎ ফল ও ফলের জুস, ঝোল তরকারি, বিভিন্ন ধরনের মসলার চা এবং কফি রাখতে পারেন।

প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ছয়টি উপাদান ভরপুর পরিমাণে রাখতে হবে। চেষ্টা করবেন খাবারের বৈচিত্র্য আনতে, পাশাপাশি রঙিন শাকসবজি তালিকায় রাখতে হবে। 
বিভিন্ন ধরনের স্যুপ প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। া