- জীবনশৈলী
- ওষুধ চুরির দুই মামলায় দায়সারা তদন্ত পুলিশের
ওষুধ চুরির দুই মামলায় দায়সারা তদন্ত পুলিশের

চট্টগ্রামের মানুষের সরকারি উন্নত চিকিৎসার ভরসাস্থল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। এ হাসপাতাল থেকে চুরি যাওয়া লাখ লাখ টাকার সরকারি ওষুধ কোথায় যায়, তা ৭ মাসেও বের করতে পারেনি পুলিশ। ফলে চুরির ওষুধ কেনা অসাধু ক্রেতারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকছে। তবে সরকারি হাসপাতাল থেকে ওষুধ চুরি হলে এ ঘটনায় 'স্পেশাল ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৮২ সালের বিশেষ আইনের ২০ ধারায়' মামলা রেকর্ড এবং আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু চমেক থেকে প্রথমে ৪২ রকম সরকারি ওষুধ চুরি মামলায় পুলিশ বাসগৃহ থেকে চুরি ও চাকর কর্তৃক চুরির ধারায় চার্জশিট দাখিল করে।
পরে ২৭ ধরনের ওষুধ চুরির দ্বিতীয় মামলায়ও স্পেশাল ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ধারায় যুক্ত করেনি তদন্ত কর্মকর্তা। প্রথম মামলার মতোই সাধারণ চুরির ধারায় চার্জশিট দাখিল করে। পুলিশ বারবার একই ভুল করায় বিজ্ঞ আইনজীবীদের ধারণা, পুলিশ 'ভুল ধারায়' চার্জশিট দাখিল করায় আদালতে আসামিরা বিশেষ সুবিধা পাবে।
হাসপাতালসহ সংশ্নিষ্ট সূত্র বলছে, চমেক থেকে ৬৯ ধরনের সরকারি ওষুধ চুরির ঘটনায় সরাসরি যুক্ত মৌখিক চুক্তিভিত্তিক ওয়ার্ডবয় ও অফিস সহায়করা। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি ও ৭ জুলাই ওষুধ চুরির ঘটনায় দুটি মামলা হয়। এর মধ্যে সর্বশেষ গত ১ জুলাই চমেকের এক অফিস সহায়কের বাসায় থেকেই উদ্ধার হয় ২ লাখ ৪০ হাজার মূল্যের কয়েক বস্তা সরকারি ওষুধ। ৭ জুলাই হাসপাতালের নিচতলার ৬ নম্বর লিফটের সামনে থেকে চুরি যাওয়া সরকারি ওষুধসহ আসামি সুমন কুমার বড়ূয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে সহায়তা করে পরিচ্ছন্নতা কর্মী শাহ আলম।
দুই মামলায় হাসপাতালের আট চুক্তিভিত্তিক ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। গত ২৪ জানুয়ারি আদালতে উপস্থাপন করা চমেকের ২৭ ধরনের ওষুধ চুরির মামলায় পাঁচজনকে অভিযুক্ত করা চার্জশিট। আসামিরা হলো- রাউজানের পশ্চিম আবুরখিল এলাকার বাসিন্দা সুমন কুমার বড়ূয়া, অফিস সহায়ক শাহ আলম, কক্সবাজারের ঘোনাপাড়ার পলাশ ধরা, সাতকানিয়ার এওচিয়ার বাসিন্দা আশীষ দাশ, চন্দনাইশের দক্ষিণ হাশিমপুরের বাসিন্দা দিলীপ কুমার নাথ। এরা সবাই হাসপাতালের মৌখিক চুক্তিভিত্তিক ওয়ার্ডবয়।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, এই মৌখিক চুক্তিভিত্তিক ওয়ার্ডবয়রাই ওষুধ চুরির ঘটনা ঘটাচ্ছে। আসামিরা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের কাছে সরকারি ওষুধ বিক্রি করে। তাই সরকারি ওষুধ ক্রেতাদের শনাক্ত করা যায়নি।
এর আগে চুরির প্রথম মামলার চার্জশিটে পুলিশ উল্লেখ করে, চমেক হাসপাতালের স্টোর থেকে বরাদ্দ দেওয়া ওষুধগুলো ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যায়। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের স্টোররুম থেকে সরকারি ৪২ রকমের ওষুধ চুরি করে হাসপাতালের অফিস সহায়ক আশু চক্রবর্ত্তী, অফিস সহায়ক গোলাম রসুল ও সুইপার মো. সৈয়দ। পরে সেগুলো বিক্রি করে দেয় হাসপাতালের আশপাশের বিভিন্ন ফার্মেসিতে। এদের থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা মূল্যের ওষুধ উদ্ধার করা হয়। ২০২২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি কয়েকটি ব্যাগসহ হাসপাতাল কর্মচারী আশু ও সৈয়দকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা ও আশুর বাসা থেকে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার ওষুধ পাওয়া যায়।
মামলা দুটির তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানার এসআই নুরুল আলম আশেক বলেন, তদন্তে যা পেয়েছি তাই চার্জশিটে তুলে ধরেছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতাল থেকে ওষুধ চুরি হলে স্পেশাল ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৮২ সালের বিশেষ আইনের ২০ ধারায় মামলা ও চার্জশিট দাখিল করতে হয় বিষয়টি আমার জানা নেই। তাই দণ্ডবিধির দুটি চুরির ধারায় তদন্ত করে চার্জশিট দাখিল করেছি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন চট্টগ্রামের সম্পাদক অ্যাডভোকেট আকতার কবির চৌধুরী বলেন, দণ্ডবিধির চুরির ধারায় চার্জশিট দাখিল করায় তদন্ত প্রশ্নবিদ্ধ।
মন্তব্য করুন