শীত বিদায় নিয়েছে ঠিকই, রুক্ষ চুলের সঠিক সমাধান হয়তো মেলেনি এখনও; মেলেনি চুল পড়া কমানোর হদিস। জীবনের রেওয়ামিলের অনিশ্চিত হিসাবের মতো হলেও রুক্ষ ও নির্জীব চুলে প্রাণ ফেরাতে ঘরোয়া কিছু টোটকা যথেষ্ট। লিখেছেন সাজিয়া আফরিন সৃষ্টি।

একেকজন মানুষের মাথার ত্বক একেক রকম হয়। এ জন্য চুলের সমস্যাগুলোও হয় ভিন্ন ধরনের। কারও চুল একটু রুক্ষ হয় তো কারও চুল হয় ভঙ্গুর। চুল পড়ার সমস্যা তো সবারই কমবেশি রয়েছেই। চুলের এই সমস্যা নিয়ে সবাই চিন্তিত থাকেন। কপালে চিন্তার ভাঁজ না ফেলে ঘরে বসেই সমাধানের পথ বেছে নিন। নামমাত্র খরচে ঘরে বানিয়ে নিন চুলের মাস্ক।

নারকেল তেলে প্রাণবন্ত চুল: নারকেল তেল চুলের জন্য প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। নারকেল তেল মাথার ত্বক ও শুস্ক চুলের জন্য বেশ উপকারী। নারকেল তেল মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করলে তা চুলে ময়েশ্চারাইজারের মতো কাজ করে। রাতে ঘুমানোর আগে ১ টেবিল চামচ নারকেল তেল গরম করে নিয়ে চুলের ভাঁজে ভাঁজে ব্যবহার করলে তা চুলের খাঁজে ঢুকে যায়। যা চুলের পর্যাপ্ত পুষ্টি পূরণে কাজ করে। রাতে তেল দিয়ে সকালে উঠে শ্যাম্পু করলেই চুল তার পর্যাপ্ত পুষ্টি পেয়ে যায় এবং চুল দেখতেও সুন্দর হয়।

নারকেল তেল ও দারুচিনির মাস্ক: নারকেল তেলের সঙ্গে দারচিনি দিয়ে চুলের মাস্ক তৈরি করা যায়। এটি চুলের বৃদ্ধিতে কাজ করে। দারচিনি রক্ত সঞ্চালনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে এবং চুলের বৃদ্ধির পাশাপাশি চুলের শক্তি বাড়াতেও কাজ করে। মাস্ক তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ হলো- ১/৪ কাপ নারকেল তেল এবং ১ চা চামচ দারচিনি। উপকরণগুলো ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে চুলের গোড়ায় মাস্কটি ব্যবহার করতে হবে। মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করুন। মাস্কটি ব্যবহারের পর ৩০-৪৫ মিনিট বসে থেকে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত একবার এই মাস্কটি ব্যবহার করলে চুলের বৃদ্ধি বেড়ে যাবে।

ডিমের সাদা অংশ ও মধুর মাস্ক: তৈলাক্ত চুলের জন্য ডিমের সাদা অংশ ও লেবু দিয়ে তৈরি চুলের মাস্ক বেশ উপকারী। ডিমের সাদা অংশে থাকে প্রোটিন এনজাইম, যা অতিরিক্ত তেল অপসারণে সাহায্য করে। ১টি ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় এবং পুরো চুলে লাগান। ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা রেখে দিন। যত সময় রাখা যাবে, তা চুলের জন্য ভালো হবে। হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভুলবশত খুব গরম পানি ব্যবহার করবেন না।
কলা, মধু, ডিমের মাস্ক :যাঁদের চুল পাতলা হয়, ধরা হয় চুলে প্রোটিনের অভাব থাকে। পাতলা চুলে প্রোটিনের অভাব পূরণ করতে উপকারী উপাদান হতে পারে কলা, ডিম, মধু ও অলিভ অয়েল। ২টি ডিমের কুসুম, ২টি খোসা ছাড়ানো পাকা কলা, ২-৩ টেবিল চামচ মধু, আধাকাপ কন্ডিশন, ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ব্লেন্ড করে নিন। মিশ্রণটি লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। তার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

ভাত ও অ্যাভোকাডোর মাস্ক: অনেকের চুল ছোট থেকেই কোঁকড়া হয়ে থাকে। কোঁকড়া চুলে শুস্কতা ও ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়। তাই কোঁকড়া চুলের যত্নে ভাত ও অ্যাভোকাডো বেশ উপকারী হতে পারে। অ্যাভোকাডোতে তৈরি মাস্ক চুলের পুষ্টি বাড়াতে কাজ করে। ১ কাপ চাল, ২ কাপ পানি, ১/২ অ্যাভোকাডো দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। এর জন্য চাল পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তার পর পানি থেকে চালের দানা দূর করতে একটি চালুনি ব্যবহার করুন। অ্যাভোকাডো ম্যাশ করুন। এর পর চালের পানিতে যোগ করুন। চুলে প্রয়োগ করুন এবং ২০-২৫ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন।

মধু, কলা ও নারকেল তেলের মাস্ক: বর্তমানে অনেকে চুল রঙিন করতে পছন্দ করেন। রঙিন চুলেরও প্রয়োজন যত্ন, যাতে তাঁদের চুলের রং দীর্ঘস্থায়ী হয়। মধু, কলা ও নারকেল তেল রঙিন চুলের জন্য বেশ উপকারী এবং এসব উপাদান দিয়েই চুলের মাস্ক তৈরি করা যায়। ১ টেবিল চামচ মধু, ১টি খোসা ছাড়ানো কলা এবং ১-২ টেবিল চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করুন। এর জন্য সব উপাদান একসঙ্গে মিশ্রিত করুন। তার পর ১৫ মিনিটের জন্য চুলে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

গ্রিন টি ও আপেল সিডার ভিনেগারের মাস্ক: গ্রিন টি শরীরের জন্য বেশ উপকারী তা সবাই জানি। গ্রিন টি শুধু শরীরের জন্যই না, চুলের জন্যও বেশ কার্যকরী। গ্রিন টি ও আপেল সিডার ভিনেগারে তৈরি চুলের মাস্ক স্কাল্পের জন্য বেশ উপকারী। ১ কাপ গ্রিন টি, ২ ফোঁটা পেপারমিন্ট অয়েল, ১ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার ভালোভাবে মেশান। মেশানো হয়ে গেলে মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করুন এবং ধুয়ে ফেলার আগে কমপক্ষে ৫ মিনিট চুলের গোড়ায় বসতে দিন। এর পর ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল ঝরঝরে হবে।