বসন্তে চারদিকে রঙিন ফুল ফোটে। এই ফুল দিয়েই ত্বক ও চুলের যত্ন নেওয়া যায়। পাওয়া যায় মনের মতো ফল। লিখেছেন আসমাউল হুসনা

শীতের রুক্ষতা পেরিয়ে প্রকৃতিতে বইছে বসন্তের হাওয়া। এ হাওয়া জানান দিচ্ছে গ্রীষ্মের। তাই আবহাওয়াও হয়ে উঠেছে অন্যরকম। বসন্ত যেমনটা গ্রীষ্মের খরতাপে বার্তা নিয়ে আসে, তেমনটাই বৈচিত্র্যপূর্ণ। কেননা এ সময় গাছে গাছে জন্মে নতুন পাতা, শাখে শাখে ফোটে রঙিন ফুল। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয় প্রকৃতি। আর প্রকৃতির এ পরিবর্তনের প্রভাব অনেকটাই পরে ত্বক ও চুলের সৌন্দর্যে।

আচ্ছা বলুন তো এই বসন্তে ত্বক ও চুল সতেজ রাখতে যদি ব্যবহার করা যায় রঙিন ফুল? রূপ বিশেষজ্ঞ রাজিয়া সুলতানা জানান, বসন্তকালে পরিবেশে থাকে তুলনামূলক বেশি ধুলা-ময়লা। কখনও গরম, কখনও ঠান্ডা এমন পরিস্থিতিতে ত্বক ও চুলেরও প্রয়োজন আলাদা যত্ন। ত্বক ও চুলের যত্নে সবচেয়ে উপকারী মৌসুমি উপাদান। বসন্তকালে রয়েছে ফুলের বাহার। বিভিন্ন ধরনের ফুল দিয়ে করা যায় ত্বকের পরিচর্যা।

লাল জবা: লাল জবা ফুলের সঙ্গে অ্যালোভেরা ও মধু মিশিয়ে এর সঙ্গে যুক্ত করুন চালের গুঁড়া। এতে দূর হবে ত্বকের মৃত কোষ।

গোলাপ :গোলাপের পাপড়ি পেস্ট করে নিন। এর সঙ্গে মধু ও আটা মেশান। এটি ত্বক মসৃণ ও সজীব রাখতে সহায়তা করে।

গাঁদা :গাঁদা ফুলে থাকা অ্যান্টিসেপটিক ত্বকের ছোটখাটো কাটা ও পোড়া দাগ তুলতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ঝুলে যাওয়া ত্বক টানটান রাখে। গাঁদা ফুলের পাপড়ির সঙ্গে টকদই, গোলাপজল, লেবুর রস মিশিয়ে তৈরি করুন ফেসপ্যাক। অথবা গাঁদা ফুলের সঙ্গে মেশাতে পারেন নিম তেল। এটি ত্বকের মৃত কোষ সারিয়ে উজ্জ্বল করে তুলবে।

জুঁই :সংবেদনশীল ত্বকের জন্য জুঁই ফুল খুবই উপকারী। কিছু জুঁই ফুল পানিতে ফুটিয়ে নিন। এবার ফুলগুলো ছেঁকে বেটে পেস্ট তৈরি করুন। এর সঙ্গে টকদই মিশিয়ে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। এর পর আলাদা করে রাখা ফোটানো পানি মুখে লাগিয়ে আরও ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন।

ডালিয়া :ডালিয়া ফুল ব্রণ প্রতিষেধক। ডালিয়া ফুলের পাপড়ির সঙ্গে গুঁড়া দুধ, টকদই, মধু ও গাজর পেস্ট করে ব্যবহার করুন। সপ্তাহে দু’দিন এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে পাবেন ব্রণ থেকে মুক্তি।

নয়নতারা :নয়নতারা ফুলের পাপড়ি সিদ্ধ করে পেস্ট তৈরি করুন। এর সঙ্গে টকদই আর মধু মিশিয়ে ব্যবহার করুন। এতে থাকা খনিজ উপাদান ত্বকের রং উজ্জ্বল করে। ত্বক সজীব রাখতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ত্বক পরিষ্কার রাখা। তাই প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য বেছে নিন কম ক্ষারযুক্ত ফেসওয়াশ; যা আপনার ত্বককে বাঁচাবে শুষ্কতা থেকে।

চুলের যত্ন :এই আবহাওয়ার কারণে ত্বকের পাশাপাশি চুল হয়ে পড়ে রুক্ষ। গোলাপ যেমন ত্বকের শুষ্কতা দূর করে, ঠিক তেমনি চুলেরও সমস্যা দূর করে গোলাপজল। চুলের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা বাড়াতে মাথার স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতে গোলাপজল ম্যাসাজ করুন এবং গোলাপের পানি দিয়ে পুরো চুলকে ২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এতে করে আপনার স্ক্যাল্পেàর লোমকূপ পুনর্জীবিত হবে। চুলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে সমপরিমাণ অ্যালোভেরা রসের সঙ্গে কোকোনাট মিল্ক মিশিয়ে সম্পূর্ণ চুলের স্প্রে করুন। আধা ঘণ্টা রেখে যে কোনো হারবাল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন। ঘরে এসব উপাদান ব্যবহার করলে বসন্তকালে আপনার চুলও রুক্ষতা থেকে বাঁচবে।

হাত-পায়ের যত্ন :শীত যাওয়ার পরের সময় আমাদের হাত-পায়ের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। হাত-পায়ে চামড়া ওঠা শুরু করে। শুষ্ক ভাব দূর করার জন্য সব সময় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে হাত-পায়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। গোলাপ ফুলের পেস্ট বানিয়ে এর সঙ্গে কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে হাত-পায়ে দিলে উজ্জ্বলতা বাড়বে।

ছবি :শৈলী আর্কাইভ