গর্ভাবস্থায় অনাগত শিশুর হৃদযন্ত্রের গঠনগত বা কার্যগত নানা সমস্যার কারণে জন্মগত হৃদরোগ হতে পারে। এমন দরিদ্র জন্মগত শিশু হৃদরোগীদের বিনামূল্যে এনজিওগ্রাম, অপারেশনে হার্টের ছিদ্র বন্ধ কিংবা ভাল্ভের সমস্যা নিরসনে ফ্রি সার্জিক্যাল অত্যাধুনিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কাতার রেড ক্রিসেন্টের সহযোগিতায় ছয় দিনের এই বিশেষ ক্যাম্পেইনে ১২০ শিশু হৃদরোগীর পেডিয়াট্রিক, কার্ডিয়াক ও জেনারেল সার্জারি করা হয়। ঢাকা ও টেকনাফে এ ক্যাম্পেইন পরিচালিত হয়েছে।

এ ক্যাম্পেইনে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুদের হার্টের ছিদ্র বন্ধ করা হয়েছে। চিকিৎসায় প্রতিটি শিশুর পেছনে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। গত ৪ মার্চ শুরু হওয়া ক্যাম্পেইন চলে ৯ মার্চ পর্যন্ত। দুই ক্যাম্পেইনে কাজ করেছেন কাতার রেড ক্রিসেন্টের ৯ জন চিকিৎসক। হৃদরোগে আক্রান্ত ৮৯টি শিশুকে ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে (এনআইসিভিডি) অস্ত্রোপচার করা হয়।

কাতারের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. ইউনুসের নেতৃত্বে হৃদরোগ ইনিস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মীর জামাল উদ্দিন, ডা. আতাউল হক, অধ্যাপক ডা. জাকিয়া, ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার এ কাজের সমন্বয় করেন। পাঁচজনের চিকিৎসক দল অস্ত্রোপচার করে। টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩১ রোগীকে পেডিয়াট্রিক ও জেনারেল সার্জারি করা হয়। ডা. সোহেল আহমেদের নেতৃত্বে টেকনাফে চারজনের চিকিৎসক দল সার্জারি করে।

রোববার সরেজমিন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে দেখা যায়, ৮৯ শিশুর মধ্যে ৮০ শিশু অস্ত্রোপচার শেষে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে। বাকিরা চিকিৎসাধীন।

অপারেশনের মাধ্যমে হার্টের ছিদ্র বন্ধ করা সুমাইয়া জাহান বীথি জানায়, শ্বাসজনিত সমস্যা দেখা দেয় তার। নিজ জেলা ময়মনসিংহ সদর হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার হার্টে দুটি ছিদ্র ধরা পড়ে। পরে  চিকিৎসকরা তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে পাঠান। গত ৬ মার্চ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার একটি ছিদ্র বন্ধ করা হয়। তিন মাস পর অপর ছিদ্রটি বন্ধ করা হবে। এখন বীথি অনেকটা সুস্থ। দু-এক দিনের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে।

ভবিষ্যতে বাংলাদেশে এ ধরনের আরও ক্যাম্পেইন করার পরিকল্পনার কথা জানান কাতার রেড ক্রিসেন্টের হেড অব মিশন আবদেল মোনায়েম। ডা. মীর জামাল উদ্দীন বলেন, ‘গরিবদের অধিকাংশই অর্থের অভাবে হৃদরোগের চিকিৎসা করাতে পারেন না। কাতার রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সহযোগিতায় এক কোটির বেশি টাকা অনুমোদন পেয়েছি।’

গত বছরের সেপ্টেম্বরে টেকনাফে বিনামূল্যে ৫৭ রোগীর পেডিয়াট্রিক ও জেনারেল সার্জারি করা হয়। ২০১৯ সালেও সার্জিক্যাল ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে কাতার রেড ক্রিসেন্ট।