জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপে দুই বছরের একটি রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি)। দেশে প্রচলিত বিভিন্ন আইনের অভিজ্ঞতা, রাজস্ব ফাঁকি বন্ধে বিদ্যমান প্রযুক্তি এবং যেসব পণ্যের ওপর সুনির্দিষ্ট কর বিদ্যমান রয়েছে সেই আলোকে এ রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় রাজধানীর বনানীতে বিইআর ও বিএনটিটিপি যৌথভাবে আয়োজিত ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপ’ শীর্ষক পরামর্শমূলক সভায় এ রোডম্যাপ প্রকাশ করা হয়। 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক। তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট কর বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। বর্তমানে দেশে ইট, এসি, মোবাইল ফোন সিমকার্ড, টেলিভিশন, ওভেন, ওয়াশিংমেশিন, ফ্রিজ, প্রিন্টার, সেলাইমেশিনসহ বেশকিছু পণ্যের ওপর যেভাবে সুনির্দিষ্ট হারে করারোপ করা হয় সেই পদ্ধতিতেই সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপ করা সম্ভব। এতে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে সুনির্দিষ্ট করারোপের ওপর বিভিন্ন গবেষণা করে সেগুলোর ভিত্তিতে একটি গাইডলাইন প্রস্তুত করতে হবে। এরপর প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং রাজস্ব আদায় ডিজিটালাইজেশন করতে হবে। পাশাপাশি ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করে তামাকজাত দ্রব্যে সুনির্দিষ্ট করারোপ করতে হবে।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকার বলেন, সম্প্রতি গণমাধ্যমে এসেছে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করে প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে তামাক কোম্পানি। এ ফাঁকি বন্ধে সরকারকে দ্রুত মোড়কে উল্লিখিত মূল্যে সিগারেট বিক্রি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি রাজস্ব বাড়াতে এবং ফাঁকি বন্ধ করতে অ্যাড ভ্যালোরেম করারোপ পদ্ধতির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট করারোপ পদ্ধতি আরোপ করতে হবে। এনবিআরকে দ্রুত ভিত্তিতে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সভায় বক্তারা বলেন, বাজেট ঘোষণার পর সাধারণত বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হলেও দেশে শীর্ষ তামাক কোম্পানিগুলো বাজেট ঘোষণার আগেই সিগারেটের দাম বাড়িয়ে দেয়। ইতোমধ্যেই সেটা বাজারে দেখা গেছে। বাজেট ঘোষণার পরও পুরনো ব্যান্ডরোলের সিগারেট নতুন দামে বিক্রি করে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়। মূসক ও কর আইন অমান্য করে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করায় প্রতি বছর ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। ফলে এমআরপিতে সিগারেট বিক্রি নিশ্চিত করতে এনবিআর ও জেলা প্রশাসনকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।

সভায় অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য আলী আহমেদ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ভাইটাল স্ট্রাটেজিসের কর্মসূচি প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম, টোব্যাকো ফ্রি কিডসের লিড পলিসি এডভাইজার মো মুস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ রেলওয়ের যুগ্ম সচিব জালাল আহমেদ, তামাক বিরোধী নারী জোটের প্রকল্প পরিচালক ফরিদা আখতার, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ, আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, একাত্তর টিভির বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা প্রমুখ।