- লাইফস্টাইল
- ক্ষতিকর উদ্যোগ, ঝুঁকি জনস্বাস্থ্যে
ক্ষতিকর উদ্যোগ, ঝুঁকি জনস্বাস্থ্যে

এমন বিপজ্জনক মাছ চাষ হচ্ছে সদর উপজেলার দানাপাটুলি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায়। কৃষিজমি খনন করে গড়ে তোলা হয়েছে শতাধিক মৎস্য খামার। বছরে ৫০ কোটি টাকার বেশি মাছ এখানে উৎপাদন হয় বলে জানা গেছে। মুরগির জন্য অ্যান্টিবায়োটিকসহ অন্যান্য উপাদান ব্যবহারেরও অভিযোগ রয়েছে, যা বিষ্ঠা হয়ে মাছের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢোকে। যদিও সংশ্লিষ্টদের দাবি, এখন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় না। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরামর্শে নিরাপদ ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগে মৎস্য খামারের জন্য গাজীপুর থেকে ট্রাকে করে মুরগির বিষ্ঠা আনা হতো মাছের খাবার হিসেবে। রাস্তার পাশে এগুলো ফেলে রাখায় ভোগান্তি পোহাতে হতো পথচারীদের। এসব বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানও চালানো হয়। এরপর বিষ্ঠা আনা কমলেও জনস্বাস্থ্যের বিপদ কাটেনি। কারণ খামারিরাই মৎস্য খামারের ওপর মুরগির শেড বসিয়েছেন। ফলে বিষ্ঠা সরাসরি পানিতে পড়ছে। রাসায়নিকযুক্ত বিষ্ঠা খেয়ে বড় হচ্ছে মাছ। এসব মাছ খেয়ে ঝুঁকিতে পড়ছেন ভোক্তারা।
যদিও জনস্বাস্থ্যের ক্ষতির বিষয়টি মানতে নারাজ খামারিরা। মৎস্য খামারি বাবুল মিয়া দাবি করেন, দানাপাটুলিতে তাঁর তিনটি মৎস্য খামার রয়েছে। এর ওপর মুরগির খামার থাকলেও মাছের তেমন ক্ষতি হয় না। আরেক খামারি দানাপাটুলি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শাখাওয়াত হোসেন দুলাল জানান, যৌথ মালিকানায় তাঁর ছয়টি খামার আছে। তাঁর দাবি, গাজীপুর থেকে যে বিষ্ঠা আনা হয় তা ক্ষতিকর, বিষ হয়ে যায়। এতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়, মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে। তবে মৎস্য খামারের ওপর যেসব মুরগির খামার হয়েছে, এতে ক্ষতি নেই।
অথচ কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন সাইফুল ইসলাম বলছেন, মাছের খামারের জন্য আলাদা খাবার তৈরি হচ্ছে। মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে ক্যান্সারসহ নানা রকম দুরারোগ্য ব্যাধি হতে পারে। এসব ব্যাধি সহসা প্রকাশ না পেলেও দীর্ঘদিন পর লক্ষণ দেখা দেয়।
দানাপাটুলি ইউনিয়নে গত শুক্রবার গিয়ে দেখা গেছে, কিশোরগঞ্জ-নিকলী সড়কের দু’পাশে সারি সারি মৎস্য খামার। এর ওপর টং ঘরের মতো লম্বা মুরগির শেড তৈরি করা হয়েছে। অনেক মৎস্য খামারের ওপর একাধিক মুরগির শেড রয়েছে। কয়েকটি ফাঁকা থাকলেও অধিকাংশতেই ডিম পাড়া লেয়ার মুরগি পালন করা হচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, মৎস্য খামারিরা নিষেধ শুনতে চান না। হস্তক্ষেপ করলে বলেন, ব্যবসার ক্ষতি করা হচ্ছে। তাঁরা গাজীপুর, ভালুকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে বিষ্ঠা আনেন। নিজেরাও মুরগির খামার করেছেন। এগুলো পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি করছে। এতে মাছের দেহে দূষণ তৈরি হওয়ায় জনস্বাস্থ্য হুমকিতে। পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি হলে মাছ মারা যায়। পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ে।
এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কুমার পাল বলেন, গাজীপুরের মৎস্য খামারিরা বিষ্ঠা ব্যবহার করেন না। কিশোরগঞ্জে চালান করে দেন। মৎস্য বিভাগ পরিদর্শন করলে এগুলো কিছুদিন নিয়ন্ত্রণে থাকে। পরে আগের জায়গায় ফিরে যায়। জুন মাসে মৎস্য এলাকায় মাইকিং করা হবে।ইউএনও মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী বলেন, এ ধরনের ক্ষতিকর উদ্যোগ বন্ধে সচেতনতামূলক প্রচারণা দরকার। তিনি এ ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলবেন।
মন্তব্য করুন