নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহকারী সুলতানা জেসমিনকে (৪০) র‍্যাব আটকের পর মৃত্যুর ঘটনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির সদস্যরা রাজশাহী পৌঁছেছেন। মঙ্গলবার সকালে কমিটির সদস্যরা জেসমিনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা রাজশাহীর কমিশনার কার্যালয়ের যুগ্ম সচিব এনামুল হক ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন।

বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ জানান, তদন্ত কমিটির সদস্যরা এ দিন হাসপাতালে আনার পর যেসব চিকিৎসক জেসমিনকে চিকিৎসা দিয়েছেন, মৃত্যুর পর যারা ময়নাতদন্ত করেছেন– সবার সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা যুগ্ম সচিব এনামুল হক এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলেন। তবে তাদের মধ্যে ঠিক কী বিষয়ে কথা হয়েছে, তা আমার জানা নেই।

রামেক অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, তদন্ত দলের সদস্যরা রামেক হাসপাতাল পরিচালকের কক্ষে অন্তত চার ঘণ্টা অবস্থান করেন। জেসমিনকে হাসপাতালে আনার পর ভর্তি থেকে শুরু করে আইসিইউ পর্যন্ত যারা চিকিৎসা দিয়েছেন সেসব চিকিৎসক, ইন্টার্ন চিকিৎসক, এক্স-রে রিপোর্ট ও ময়নাতদন্ত রিপোর্টকারী চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে তারা কথা বলেছেন।

জেসমিনের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দীন বলেন, সকাল ১০টার দিকে তদন্ত দল আমাকে ডেকেছিল। আমরা যে ক’জন ডাক্তার জেসমিনের ময়নাতদন্ত করেছি, তাঁদের সবার সঙ্গেই তদন্ত দল আলাদা করে কথা বলেছে। আমি ময়নাতদন্তের যে রিপোর্ট দিয়েছি, তার স্বপক্ষেই কথা বলেছি।

এ বিষয়ে জানতে যুগ্ম সচিব এনামুল হক এবং রামেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহমেদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি। 

গত ২২ মার্চ এনামুল হকের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে জেসমিনকে আটক করে নিয়ে যায় র‍্যাব। পরে অসুস্থ অবস্থায় জেসমিনকে প্রথমে নওগাঁ হাসপাতাল ও পরে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পর দিন জেসমিন ও চাঁদপুরের আল আমিনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন যুগ্ম সচিব এনামুল হক।

২৪ মার্চ সকালে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জেসমিন মারা যান। এর পর জেসমিনের পরিবার অভিযোগ করে, র‍্যাব হেফাজতে নির্যাতনের কারণেই জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও ময়নাতদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, জেসমিন স্ট্রোক করে মারা গেছেন। পরে হাইকোর্টের এক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ মে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটির প্রধান করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মাহমুদুল হোসাইন খানকে।

কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, নওগাঁর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সিভিল সার্জন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং নওগাঁর পুলিশ সুপারের মনোনীত একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে।