প্রায় এক যুগ ধরে বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন। সর্বশেষ ২০০৯ সালে কর্মকর্তাদের সরাসরি ভোটে সংগঠনের নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কখনও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, কখনও কণ্ঠভোটে, কখনও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে কার্যক্রম চালানো হয়েছে। এই অবস্থায় গত ডিসেম্বরে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন আয়োজনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার পরও তা স্থগিত করা হয়েছে।
বর্তমানে গঠনতন্ত্রবহির্ভূত আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চালানো হচ্ছে অ্যাসোসিয়েশনের কার্যক্রম। এতে সাধারণ কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অভিযোগ উঠেছে, একটি সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠান। এ কারণে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন না কর্মকর্তারা।

২০০৯ সালের ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ ভোটে দুই বছরের জন্য বিআইডব্লিউটিএ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছিল। ২০১৩ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নতুন কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৬ সালে আবারও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি ছয় বছর নেতৃত্ব ধরে রেখেছিল। কর্মকর্তাদের দাবির মুখে গত বছর ৩ জুলাই কমিটির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন নির্বাচন আয়োজনে ২৩ অক্টোবর বিআইডব্লিউটিএর বন্দর ও পরিবহন বিভাগের পরিচালক সাইফুল ইসলামকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিশন গঠন করা হয়। ১ নভেম্বর ওই নির্বাচন কমিশন তপশিল ঘোষণা করে। ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ হয়েছিল। প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি প্যানেল ঘোষণাসহ প্রচারও বেশ জমে উঠেছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই গত ৯ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অনিবার্য কারণ দেখিয়ে নির্বাচনী তপশিল স্থগিত করেন। এতে কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে নির্বাচন স্থগিতের পর ১২ ডিসেম্বর বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগ) স্বাক্ষরিত এক আদেশে সংস্থার প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মহিদুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির অন্য চার সদস্য হচ্ছেন– নিরীক্ষা বিভাগের পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান, ড্রেজিং বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী রকিবুল ইসলাম তালুকদার, বন্দর ও পরিবহন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দিন এবং প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক এসএম শাহেদ রেজা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের গঠনতন্ত্রের ১০ নম্বর ধারায় অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য নির্বাচিত অথবা মনোনীত কার্যনির্বাহী পরিষদের মেয়াদ দুই বছর নির্ধারিত রয়েছে। গঠনতন্ত্রের ১১ নম্বর ধারায় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ২৫ জন নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। গঠনতন্ত্রে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের কোনো বিধান নেই। তাই দুই বছরের কমিটির ছয় বছর দায়িত্ব পালন এবং আহ্বায়ক কমিটি গঠন– দুটিই গঠনতন্ত্রের লঙ্ঘন।

গঠন করা আহ্বায়ক কমিটি কতদিন দায়িত্ব পালন করবে– সে সম্পর্কে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। দপ্তর আদেশে বলা হয়েছে, নতুন কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত আহ্বায়ক কমিটি কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এ নিয়েও এক ধরনের বিভ্রান্তি আছে। সাধারণত আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ তিন মাস বা ৯০ দিন হয়। এই আহ্বায়ক কমিটি গত পাঁচ মাসে সাধারণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের সভাও করেনি। গত ৩ মে শুধু সংস্থার বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময় করে দায়িত্ব সেরেছে।

এই অবস্থায় বিআইডব্লিউটিএ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার সাধারণ কর্মকর্তারা। প্রকাশ্যে মুখ খুলতে ভয় পেলেও অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ ঝাড়ছেন। তাঁরা বলছেন, সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন না। তাঁরা অবিলম্বে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছিল। আবার কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমার কোনো ভূমিকা নেই। ’
বিআইডব্লিউটিএ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠন ও এগুলোর নির্বাচনের বিষয়গুলো দেখভাল করে সংস্থার জনসংযোগ বিভাগ। এ প্রসঙ্গে জনসংযোগ কর্মকর্তা মোবারক হোসেন মজুমদার সমকালকে বলেন, অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন স্থগিতের পর গঠিত আহ্বায়ক কমিটির দায়িত্ব হচ্ছে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা। এরই মধ্যে এক দফা সভা করেছে আহ্বায়ক কমিটি। তারা সংস্থার নবাগত চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফার সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন। চেয়ারম্যানও নির্বাচনের বিষয়ে আন্তরিক। আশা করি, শিগগির নির্বাচন আয়োজন করা যাবে।