- লাইফস্টাইল
- ভালো ঘুম, সুস্থ মন
ভালো ঘুম, সুস্থ মন

ভালো ঘুম আর মানসিক স্বাস্থ্য একে অপরের পরিপূরক। ঘুমের অভাবে ইমোশনাল ফাংশনিং ব্যাহত হয়। আমাদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মস্তিষ্কের দুটি অংশ থাকে। ঘুমের অভাবে মস্তিষ্কের এ দুই অংশ অনেকটাই ছোট হয়ে যায়, ফলে কর্মক্ষমতাও ব্যাহত হয়। এতে আবেগ নিয়ন্ত্রণের পুরো পদ্ধতিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘুমের ব্যাঘাতকে অনেক মানসিক রোগের ক্ষেত্রেই একটি কারণ বা উপসর্গ হিসেবে ধরা হয়। ডিপ্রেশন ছাড়া অ্যাংজাইটির ক্ষেত্রেও ঘুমের অভাব দেখা যায়। যাঁরা ক্রনিক ইনসমনিয়ায় ভোগেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ‘ঘুম আসছে না’ এই বিষয়টিও অ্যাংজাইটির কারণ হতে পারে। নানা ধরনের সোম্যাটোফর্ম ডিজঅর্ডার বা সাইকোটিক ডিজঅর্ডারেরও অন্যতম কারণ হতে পারে ঘুমের অভাব।
ঘুমকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যায়– ঘুম আসার পর্যায়, ঘুম আসার পরের পরিস্থিতি (এই সময় ঘুম থাকছে না চলে যাচ্ছে, সেটা খেয়াল করা দরকার) ও সকাল সকাল ঘুম ভেঙে যাওয়া (একে বলে আর্লি মর্নিং অ্যাওয়েকেনিং, ভোরবেলায় ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর আর ঘুম আসতে চায় না)। সাধারণত ঘুম আসতেই দেরি হয়। অ্যাংজাইটির ক্ষেত্রে ঘুমের মধ্যে বারবার দুঃস্বপ্ন দেখা বা ঘুম ভেঙে গেলে বুঝতে হবে ঘুম গভীর হচ্ছে না। ডিপ্রেশনের ক্ষেত্রে অনেক সময় আর্লি মর্নিং অ্যাওয়েকেনিং দেখা দেয়। সকালে উঠে ক্লান্তিবোধও যায় না। অতিরিক্ত ঘুম কিন্তু অনেক সময় ক্লান্তি থেকে আসে। মস্তিষ্ক যদি ক্লান্ত থাকে তাহলে সারাদিন ঘুম পাবে। এটি ডিপ্রেশনের অন্যতম সংকেত। যদি খুব বেশি মানসিক চাপে ভোগেন, তাহলে মস্তিষ্ক সেই অতিরিক্ত চাপ না নিতে পেরে ঘুমিয়ে পড়বে।
অনেক বাচ্চাই পরীক্ষার আগে ঘুমিয়ে পড়ে। এর কারণও এই অতিরিক্ত চাপ। এটি কিন্তু আসলে ‘আ ফর্ম অব অ্যাভয়েডেন্স’। ঘুমালে তো আর মানসিক চিন্তাভাবনা করতে হবে না। ভালো ঘুম হলে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে আবার মন ভালো থাকলে ঘুম হবে নির্বিঘ্নে। কম ঘুমের সঙ্গে যেমন মানসিক সমস্যার যোগাযোগ আছে, তেমনি ডিপ্রেশনের ফলে ঘুমের পরিমাণ বাড়ে। ডিপ্রেশনে যেমন ঘুম কমতে পারে, তেমন ঘুম বেড়েও যেতে পারে। তবে সারাদিন ঘুম পেলে বা ক্লান্ত লাগলে আরও কিছু শারীরিক সমস্যার কথাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, আমরা যতই ক্লান্ত হই না কেন, সাত-আট ঘণ্টার ঘুম যথেষ্ট। এর চেয়ে বেশি ঘুম হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
কতটা ঘুমাবেন, কীভাবে ঘুমাবেন
জরুরি হলো, প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করা। হয়তো প্রতিদিনই নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুমাচ্ছেন, কিন্তু সময় নির্দিষ্ট নয়। কোনো দিন রাত ১০টা থেকে ভোর ৪টা আর কোনো দিন রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ঘুমালেন, এটা ঠিক নয়। সময় মেনে চললে স্লিপ সাইকেল ঠিক রাখা সম্ভব। কিন্তু আপনি যদি নিজেই সেই সাইকেল ওলটপালট করেন, তাহলে ঘুমাতে গেলেও ঘুম আসতে চায় না। যাঁদের সপ্তাহে একেক দিন একেক রকমের শিফট ডিউটি, তাঁদের ক্ষেত্রে স্লিপ প্যাটার্ন অনেকটাই ব্যাহত হয়। ফলে অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি স্ট্রেসড থাকার প্রবণতা তাঁদের মধ্যে বেশি। সাধারণভাবে প্রতিদিন মোটামুটি ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমের দরকার। তার চেয়ে বেশি বা কম ঘুমানো স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়। যাঁরা নাইট শিফটের কারণে একেক সময় ঘুমাতে যান, তাঁদের জন্য কোয়ালিটি অব স্লিপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে সময়টুকু ঘুমাচ্ছেন, সেটুকু যেন নির্বিঘ্নে ঘুমাতে পারেন। বিছানায় শোয়ার ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে ঘুম এলে তা ভালো লক্ষণ। কিন্তু এর তুলনায় বেশি সময় লাগলে হয়তো মানসিক সমস্যার পূর্ব লক্ষণ হতে পারে।
ভালো ঘুম হয়েছে বুঝবেন কীভাবে
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ লাগবে, শরীরে ক্লান্তির কোনো ছাপ থাকবে না। ঘুম ভালো হলে ‘কোয়ালিটি অব ওয়ার্ক’ অনেক গুণ বেড়ে যায়। অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা করেন বেশি করে। ফলে ডিপ্রেশন বা মন খারাপও কম হয়। ভালো ঘুমের পথে প্রধান অন্তরায় হচ্ছে মোবাইল ফোন। যে কোনো ধরনের উত্তেজনা, মানসিক বা শারীরিক– এড়িয়ে চলতে হবে। ক্যাফেইন, অ্যালকোহল, সিগারেট এড়িয়ে চলতে হবে ঘুমানোর আগে। মস্তিষ্কের বিশ্রাম এতে ব্যাহত হয়। মোবাইল বন্ধ করে না শুতে পারলেও ইন্টারনেট বন্ধ রাখুন। আউটডোর এক্সারসাইজ জরুরি। আধঘণ্টা এক্সারসাইজ করলেও ডিপ্রেশন অনেকটা কমে। অনেকেই ভাবেন, বেশ কিছুদিন ঘুম কম হলে একেবারে তা পুষিয়ে নেবেন! সারা সপ্তাহ কম ঘুমিয়ে ছুটির দিন একসঙ্গে অনেকটা ঘুমিয়ে নিলেন, তা খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়।v
মন্তব্য করুন