- লাইফস্টাইল
- স্টেশন থাকলেও লোকবল নেই, দুর্ভোগ যাত্রীদের
স্টেশন থাকলেও লোকবল নেই, দুর্ভোগ যাত্রীদের

১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর ভারতের গেদে থেকে চুয়াডাঙ্গা হয়ে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। সেই থেকে এ পথে বন্ধ হয়নি ট্রেনের চাকা। ১৮৯৭ সালে দর্শনা-পোড়াদহ সেকশন ডাবল লাইনে উন্নীত হয়। বর্তমানে জেলার ৪০ কিলোমিটার রেলপথে ১০টি স্টেশন রয়েছে। কিন্তু জনবল সংকটসহ নানা কারণে চারটি স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ট্রেনে স্বল্প খরচে ও সহজে যাতায়াতের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় বেদখল হচ্ছে সম্পত্তি। নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান জিনিসপত্র। ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। ডিজিটাল আটো সিগন্যাল ব্যবস্থাও কাজে আসছে না। অধিকাংশ লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান না থাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানীয়রা এ দায়িত্ব পালন করেন। তবে রাতে অরক্ষিত থাকে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা লোকাল ট্রেনে পণ্য পরিবহনেও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। কাঁচামাল নিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার কারণে পচে ও শুকিয়ে নষ্ট হয়। রাতে স্টেশনগুলোয় অপরাধী ও মাদকসেবীদের আনাগোনা বাড়ে। চুরি, ছিনতাইসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হচ্ছে। সন্ধ্যার পর স্টেশন এলাকায় ভূতুড়ে পরিবেশ থাকায় মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।
চুয়াডাঙ্গার জয়রামপুর গ্রামের স্কুলশিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন এলাকার স্টেশনটি বন্ধ থাকায় ও গেটম্যান না থাকায় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। সরকার লাখ লাখ ব্যয়ে স্থাপনা নির্মাণ করলেও কাজে আসছে না। লোকবল নিয়োগ দিয়ে স্টেশনগুলো চালুর দাবি তাঁর।
জানা গেছে, খুলনা-ঢাকা, খুলনা-রাজশাহী ও খুলনা-সৈয়দপুর রুটের ১৪টি আন্তঃনগর, ছয়টি লোকাল ও দুটি মৈত্রী একপ্রেস ট্রেন চলাচল করে স্টেশনগুলো দিয়ে। এগুলোতে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহের দিনে অন্তত সাড়ে তিন হাজার যাত্রী চলাচল করেন। তবে স্টেশন বন্ধ থাকায় ট্রেন কখন আসবে, জানার সুযোগ নেই। টিকিট কাটা নিয়েও অনেকে দুর্ভোগে পড়ছেন। বেড়েছে বিনা টিকিটে ভ্রমণ।
বন্ধ চারটি স্টেশনে ছয়টি লোকাল ট্রেনের যাত্রী ওঠানামা করেন। খুলনা থেকে ছেড়ে এসে চুয়াডাঙ্গা হয়ে রাজশাহী, গোয়ালন্দ, ঢাকা ও সৈয়দপুরে চলাচল করে ট্রেনগুলো। প্রতিটি স্টেশনে একজন করে স্টেশন মাস্টার ও সহকারী স্টেশন মাস্টার এবং চারজন পয়েন্টম্যান থাকার কথা। কিন্তু এগুলোতে নেই। চালকদের সংকেতও দেন না কেউ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আগে চুয়াডাঙ্গায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য ট্রেনে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হতো। স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় তা কঠিন হয়ে গেছে। ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জ, ২০০৬ সালের ৭ জুলাই জয়রামপুর, ২০০৩ সালের ১৮ জানুয়ারি মোমিনপুর ও ২০১৮ সালের ১ আগস্ট আনছারবাড়িয়া রেলস্টেশন বন্ধ হয়ে যায়। তবে উথলি, দর্শনা হল্ট, জংশন, আন্তর্জাতিক, চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গা চালু আছে।
দর্শনা জংশন স্টেশন চালু থাকলেও ট্রেন থামে না। ফলে এটি কাজে আসছে না। আন্তর্জাতিক রেলপথ দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার মৈত্রী একপ্রেস চলাচল করে। ভারত থেকে মালবাহী ওয়াগনে ব্যবসায়ীরা পাথর, চাল, ভুট্টা, গম, পেঁয়াজ, ছাইসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করেন।
মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা সবুজ মিয়া বলেন, ট্রেনের জন্য সকাল থেকে বসে আছেন। স্টেশন বন্ধ থাকায় ট্রেনের সংবাদ পাচ্ছেন না। সন্ধ্যা হলে মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। পৌর এলাকার কুলচারার সবজি ব্যবসায়ী উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ব্যবসায়ীরা পণ্য নিয়ে অপেক্ষা করেন। সঠিক সময়ে ট্রেনে যেতে না পারলে ক্ষতি হয়।
একটি বন্ধ স্টেশনের গেটম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চারজন গেটম্যান থাকার কথা থাকলেও দু’জন আছেন। গেটম্যানের পাশাপাশি তাঁদের স্টেশন মাস্টারের দায়িত্বও পালন করতে হয়।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার স্টেশন মাস্টার মো. মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। লোকবল না পেলে এগুলো চালু করা সম্ভব নয়।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের রাজশাহীর চিফ ইঞ্জিনিয়ার মো. আসাদুল হক বলেন, স্টেশন মাস্টার না থাকায় স্টেশনগুলো বন্ধ আছে। সম্প্রতি নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষ হলে পোস্টিং দেওয়া হবে। দ্রুত স্টেশনগুলো চালু হবে বলে আশা করেন তিনি।
মন্তব্য করুন