চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত তেল দেওয়া ও শ্যাম্পু করার বিকল্প নেই। কখনও কখনও এসব চেষ্টাও বিফলে যায়। যত্ন নেওয়ার পরও চুলে প্রাণ থাকে না। নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। তখন বুঝে নিতে হয় চুলে প্রোটিনের অভাব হয়েছে। দরকার বাড়তি পুষ্টি। প্রাণ ফেরাতে প্রোটিন ট্রিটমেন্ট করতে হবে। এতে চুল ফিরে পাবে হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য। রাজিয়া’স মেকওভারের স্বত্বাধিকারী ও রূপবিশেষজ্ঞ রাজিয়া সুলতানা জানান, চুল গঠিত হয় কেরাটিন নামের এক ধরনের প্রোটিন দিয়ে। এ কেরাটিনের উপস্থিতির কারণেই চুল সুস্থ ও সবল থাকে। সেই সঙ্গে চুলের ইলাস্টিসিটি ধরে রাখে এ উপাদান। যখনই চুলে প্রোটিনের অভাব হয়, তখনই ঝরে পড়ে, গোড়া দুর্বল হয়ে যায়, চুলের কিউটিকল ভেঙে যায় এবং চুল হয়ে যায় নিস্তেজ।
যে কারণে প্রোটিনের ঘাটতি হয়: রোদ, ধুলাবালি, রাসায়নিক কেমিক্যালের কারণে চুলের প্রোটিন নষ্ট হয়। অতিরিক্ত চাপ, দুশ্চিন্তা, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবের কারণে চুল প্রাণহীন হয়। এ ছাড়া প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত প্রোটিন, বায়োটিন, ভিটামিন ই ইত্যাদি না থাকলে চুল তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারায়। প্রোটিনের ঘাটতি হলে চুল রুক্ষ, শুষ্ক হয়ে যায় এবং আগা ফাটে। দিনের পর দিন এমনটা চলতে থাকলে চুল পড়ে পাতলা হয়ে যায়।
প্রোটিন ট্রিটমেন্ট কী: প্রোটিন ট্রিটমেন্ট হলো, প্রোটিনযুক্ত উপাদানের মাধ্যমে চুলের বাড়তি যত্ন করা। অর্থাৎ যে উপাদানগুলো চুলে ব্যবহার করা হবে সেগুলো প্রোটিনে পূর্ণ থাকবে। প্রোটিন ট্রিটমেন্ট করা হলে চুলের কিউটিকল সুস্থ থাকে এবং পরবর্তী সময়ে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। এ ট্রিটমেন্টকে কন্ডিশনিং ট্রিটমেন্টও বলা হয়।
প্রোটিন ট্রিটমেন্ট পার্লার বা স্যালুনে গিয়ে নেওয়া যায়। অবশ্য ঘরে বসেও এ ট্রিটমেন্ট করা যায়। এতে খরচ বেঁচে যাবে।
ঘরেই করুন প্রোটিন ট্রিটমেন্ট: রূপবিশেষজ্ঞ রাজিয়া সুলতানা জানান, ঘরেই প্রোটিন ট্রিটমেন্ট করার প্যাক তৈরি হয় ঘরোয়া ও হারবাল উপাদান দিয়ে। এ উপাদানগুলো চুলের গভীরে পৌঁছে চুলে শক্তি জোগায় এবং প্রোটিনকে সংরক্ষণ করে। নিয়মিত ও যথাযথ ব্যবহারে চুল ভেঙে পড়া রোধ হয়। এ ট্রিটমেন্ট চুলের গঠনকে পুনর্বিন্যাস করে, চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
১. একটি ডিম, দুই টেবিল চামচ টক দই, এক চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত, অর্থাৎ পুরো চুলে লাগিয়ে রাখুন। আধা ঘণ্টা রেখে আপনার চুলের উপযোগী শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
২. দুই চা চামচ আমলকীর গুঁড়ার সঙ্গে এক চা চামচ মেথি গুঁড়া, এক চা চামচ বহেরা গুঁড়া, এক চা চামচ হেনা পাউডার, একটি ডিম, এক চা চামচ মধু এবং আধা কাপ চায়ের লিকার একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ চুলে লাগিয়ে এক ঘণ্টা রেখে দিন। এক ঘণ্টা পর পানি দিয়ে ধুয়ে চুলে শ্যাম্পু করুন।
৩. একটি পাকা সাগর কলার সঙ্গে ডিম অথবা টক দই ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এটি গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত পুরো চুলে লাগিয়ে এক ঘণ্টা রাখুন। তারপর চুল শ্যাম্পু করে ফেলুন।
৪. পাকা সাগর কলার সঙ্গে আমন্ড তেল মিশিয়ে নিন। এ মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
৫. একটি বা দুটি ডিমের সঙ্গে আধা কাপ অলিভ অয়েল, আধা কাপ টক দই, আধা কাপ মধু, আধা কাপ ভিনেগার ও ১ কাপ পানি মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে আধা ঘণ্টা রাখুন। পুরো চুলে ভালোভাবে লাগাবেন। আধা ঘণ্টা পর চুল ধুয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন। শ্যাম্পু করার পর চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এতে চুল আরও সিল্কি ও মসৃণ হবে।
৬. এক কাপ তিসি জ্বাল দিয়ে ঘৃতকুমারীর জেলের মতো জেল বানাতে হবে। এর সঙ্গে একটি ডিম, দুই টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, আধা কাপ টক দই, দুই ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাকটি পুরো চুলে লাগান। ঘরে স্টিম নেওয়ার মেশিন থাকলে ১০ মিনিট চুলে স্টিম নিন। স্টিম মেশিন না থাকলে গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে চুলে দিয়ে রাখুন। স্টিম নিলে চুলের কিউটিকল খোলে।
কতবার ট্রিটমেন্ট নেওয়া উচিত: চুল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলে যতদিন পর্যন্ত চুলে প্রাণ না ফেরে, ততদিন পর্যন্ত সপ্তাহে একবার বা দু’বার করে প্রোটিন প্যাক লাগান। চুল প্রাণবন্ত হয়ে গেলে মাসে একবার বা দু’বার প্রোটিন প্যাক লাগালে চুল ভালো থাকবে। v
মডেল : ইভানা; ছবি : শৈলী