- মুজিববর্ষ
- স্বাধীন বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু
স্বাধীন বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু

একটি স্বাধীন-সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সর্বাধিক অবদান ও আত্মত্যাগ যে মহামানবের, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নিজের জীবনের সর্বস্ব বিলীন করে মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও যিনি অবিচল চিত্তে শিল্পে উন্নত করে বাংলাদেশকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের জাতির জনক, বাঙালির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান। তবে কেবল দেশ স্বাধীন করেই তিনি ক্ষান্ত হননি। সদ্য স্বাধীন-সার্বভৌম কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু গ্রহণ করেন বিরাট মহাযজ্ঞ, পালন করেন আরেক ঐতিহাসিক মহান দায়িত্ব। স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনে এবং উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদানের একটি চিত্র তুলে ধরা হলো বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে।
১৬ ডিসেম্বর বিজয় লাভের পর বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি। এরপর রেসকোর্স ময়দানে প্রদত্ত তাঁর সেই ভাষণটি প্রণিধানযোগ্য, কেননা, ১৯৭১-এর সাত মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি যেমন ছিল স্বাধীনতার সুস্পষ্ট রূপরেখা, ঠিক তেমনি ৯ মাস পর স্বাধীন দেশে প্রত্যাবর্তনের পর রেসকোর্সে প্রদত্ত তঁ?ার ভাষণটি ছিল ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের একটি রূপকল্প। ওই ভাষণে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ পুনর্গঠনের কাজের প্রতিই তিনি সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সম্মিলিত উদ্যোগে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছিলেন বারবার। দৃপ্তকণ্ঠে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, বাংলাদেশের পুনর্গঠন কাজ পরিচালিত হবে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। রেসকোর্সের সেই ভাষণে বঙ্গবন্ধু আরও বলেছিলেন-
"...গত ৭ই মার্চ আমি এই রেসকোর্সে বলেছিলাম 'দুর্গ গড়ে তোলো'। আজ আবার বলছি আপনারা একতা বজায় রাখুন। আমি বলেছিলাম, 'বাংলাদেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ'। বাংলাদেশ আজ মুক্ত, স্বাধীন। ...বাংলাদেশ ইতিহাসে স্বাধীন দেশ রূপেই বেঁচে থাকবে। ...গত দশ মাসে পাকিস্তানের বর্বর সেনাবাহিনী বাংলাকে বিরান করেছে। বাংলার লাখো মানুষের আজ খাবার নাই, অসংখ্য লোক গৃহহারা। ...আমি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়, নেতা হিসেবে নয়, আপনাদের ভাই হিসেবে বলছি- যদি দেশবাসী খাবার না পায়, যুবকরা চাকরি বা কাজ না পায় তাহলে স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে, পূর্ণ হবে না। তোমরা, আমার গেরিলা ভাইয়েরা, গেরিলা হয়েছিলে দেশমাতার মুক্তির জন্য। তোমরা রক্ত দিয়েছ। তোমাদের রক্ত বৃথা যাবে না।... বাংলাদেশ আজ মুক্ত, স্বাধীন। কিন্তু আজ আমাদের সামনে অসংখ্য সমস্যা আছে, যার আশু সমাধান প্রয়োজন। বিধ্বস্ত বাংলাকে নতুন করে গড়ে তুলুন। নিজেরা সবাই রাস্তা তৈরি করতে শুরু করুন। যার যার কাজ করে যান।"
(বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, দৈনিক বাংলা, ঢাকা, ১১ জানুয়ারি ১৯৭২ দ্রষ্টব্য)।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পাকিস্তানে ১৯৭০ সালে নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধু যেসব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে প্রদত্ত ভাষণেও সেসব নীতিগত দিকনির্দেশনার গভীর অন্ত্যমিল খুঁজে পাওয়া যায়। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বদেশভূমি, জাতি ও দেশের জনগণকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা সদাজাগ্রত থাকত তাঁর মনের মণিকোঠায়। তাই তাঁর প্রত্যেক কথায় ও কাজে বারবার উঠে আসত স্বদেশ গঠন ও জনগণের কল্যাণের কথা। তাঁর অন্তরের এই ধ্যান-ধারণা পরিস্ম্ফুট হয়েছিল ১০ জানুয়ারি প্রদত্ত ভাষণেও।
সরকার কাঠামো-সংসদীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন
অসাম্প্রদায়িক ও জাতীয়তাবাদী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সরকার পদ্ধতি নির্ধারণে মনোনিবেশ করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের প্রথম মুজিবনগরে গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার-কাঠামো ছিল রাষ্ট্রপতি শাসিত যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকার। তবে বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ সে সময় নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করতেন। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার এক স্থানে উল্লেখ করা হয়, সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট থাকবেন এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রজাতন্ত্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকবেন। ঘোষণায় দুই পদের ক্ষমতার বিষয়ও উল্লেখ ছিল। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের সরকার পদ্ধতি নির্ধারণের বিষয়টি পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু ফিরে এসে সংবিধান প্রণয়ন পর্যন্ত মুলতবি রাখা হয়েছিল। উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার ২১ বছর আগে গঠিত হয়েছিল স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। এই দল সরকার পদ্ধক্তি সম্পর্কে যে মত পোষণ করত, বিভিন্ন ইস্যুতে যে দাবি উত্থাপন করত, সেগুলো থেকে এটা সুস্পষ্ট হয় যে, আওয়ামী লীগ সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থার পক্ষপাতী ছিল। '৭০-এর নির্বাচনের আগেও জাতির উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু যে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন তাতে সংসদীয় গণতন্ত্রের কথাই প্রকাশ পেয়েছিল। আওয়ামী লীগের ৬ দফা, ছাত্রদের ১১ দফার মধ্যেও সংসদীয় পদ্ধতির সরকার গঠনের কথা ছিল। বঙ্গবন্ধু তাঁর অন্তরে চির লালিত আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন এবং দেশের শাসনব্যবস্থাসহ সব উন্নয়ন ও পুনর্গঠনের বিশাল কর্মকাণ্ড এগিয়ে নেওয়ার কাজে ব্রতী হয়েছিলেন। রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামোয় বঙ্গবন্ধু সর্বদাই সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে ছিলেন। তাই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি করা হলেও স্বাধীন দেশে তিনি রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ করেন। সংসদীয় সরকার কাঠামোর অধীনে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করে বঙ্গবন্ধু সেই রাষ্ট্রপতির অধীনেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনর্গঠন, শরণার্থী পুনর্বাসন, অবকাঠামো নির্মাণ ও অন্যান্য
রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে যেসব পদক্ষেপ বঙ্গবন্ধু নিয়েছিলেন সেগুলোর সূত্র গবেষক ছাড়াও যে কোনো মানুষ বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত ১৯৭০ সালের ভাষণে খুঁজে পাবেন। এ প্রসঙ্গে ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ২০ লাখ মানুষের সমাবেশে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের আওয়ামী লীগ দলীয় নবনির্বাচিত সদস্যগণ যে শপথ নিয়েছিলেন তা স্মরণ করা যায়। ওই শপথ অনুষ্ঠানে দেশ গঠনের যে রূপরেখা ঘোষণা করা হয়েছিল, বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তা বাস্তবায়নে তৎপর হয়েছিলেন।
স্বাধীন দেশ পুনর্গঠন প্রক্রিয়া
বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত এবং ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হওয়ার পর সংবিধানের বিধিমতে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ স্বাধীন বাংলাদেশে সরকার গঠন করে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে পূর্ণমাত্রায় গতিবেগ সঞ্চার করে। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু নতুন মন্ত্রিসভা নিয়ে কাজ শুরু করার আগেই ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি ঢাকায় ফিরে এসে সরকারের হাল ধরেছিলেন এবং দেশের সব কর্মকাণ্ড অতি দ্রুততম সময়ে সাংবিধানিক বিধিবিধানের আওতায় নিয়ে এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর নিজস্ব এবং দলের সমষ্টিগত ধ্যান-ধারণার আলোকে স্বাধীন বাংলাদেশকে সোনার বাংলারূপে গড়তে অসংখ্য উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে মূল ভিত্তি হিসেবে নিয়ে বাংলাদেশের সব সরকারি কর্মপরিকল্পনা প্রণীত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে।
দেশ মুক্ত হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ৩টি কাঠামো নিয়ে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ।
প্রথমত, স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত ছিল), দ্বিতীয়ত প্রাদেশিক সরকারের কাঠামো এবং তৃতীয়ত, সাবেক কেন্দ্রীয় সরকারের ছোট কাঠামো।
প্রশাসনিক কাঠামো প্রশাসনযন্ত্র হিসেবে এই ৩টি কাঠামোর একত্রীকরণ করে একটি জাতীয় ও পূর্ণাঙ্গ সরকার কাঠামো গঠনের কাজটি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। স্বাধীন সরকার পরিচালনার জন্য নতুন প্রতিষ্ঠান গঠন, নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ, পূর্বে থেকে বিদ্যমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুনরেকত্রীকরণ এসব কিছুর ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারীর সিদ্ধান্তের ফল আমরা এখন ভোগ করছি।
সংবিধান প্রণয়ন এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনী ফেরত পাঠানো
প্রশাসনিক কাঠামো সমন্বয়ের পরের কাজটি ছিল জাতীয় সংবিধান প্রণয়ন। মাত্র এক বছরের মধ্যে একটি সুলিখিত ও বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত সংবিধান তৈরি করে বঙ্গবন্ধু বিশ্বে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। এরপরের কাজটি ছিল অত্যন্ত জরুরি এবং চ্যালেঞ্জিং। বঙ্গবন্ধু সেই কাজটি করেন দৃঢ়চিত্তে ও সুচারুরূপে। দেশ মুক্ত হওয়ার মাত্র তিন মাসের মধ্যে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সৈন্যদের সে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন বঙ্গবন্ধু। এমন নজির পৃথিবীর সমসাময়িক ইতিহাসে বিরল। এ ক্ষেত্রে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর অবদানও স্মরণীয়।
রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক বিধিবিধান প্রণয়ন
সাংবিধানিক দায়িত্ব হিসেবে নব্য-স্বাধীন দেশে রাষ্ট্রীয় আচার-আচরণ সংক্রান্ত আবশ্যকীয় বিধিমালা প্রণয়নের কাজগুলো ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের কার্যপরিচালনা সংক্রান্ত প্রধান বিধি এ সময় প্রণীত হয়। এটি হচ্ছে- Rules of Business-এর অন্তর্গত দুটি বিষয় হচ্ছে. ক. Allocation of Business এবং খ. Transaction of Business
সরকারের কোন কোন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ কী কী দায়িত্ব পালন করবে তা ঠিক করে দেয় Allocation of Business। যেমন- সরকারি নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় হলে তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় (পূর্বতন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়) দেখবে আর সেখানে অর্থের সংশ্নেষ থাকলে অর্থ মন্ত্রণালয় সেটি দেখবে। বিদেশি চুক্তির বিষয় এলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেটি দেখভাল করবে আর বিদেশ থেকে সাহায্য আনার বিষয়টি ডিল করবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ তথা ইআরডি। এভাবে সরকারের কোন বিভাগের কাজ কী তার সুবিন্যস্ত বিধিমালা হচ্ছে- Allocation of Business. আর কোন কাজ কীভাবে করা হবে অর্থাৎ কাজের modalities of operation নির্ধারণ করে দেয়Transaction of Business.এ দুয়ের সমন্বয়ে অত্যন্ত সুগঠিত এবং সুলিখিত এ বিধিমালার (Rules of Business) ওপর ভিত্তি করেই এখন পর্যন্ত আমাদের সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং তাদের অধীনস্থ দপ্তর/অধিদপ্তসমূহ কাজ করে চলেছে।
জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত ও জাতীয় প্রতীক নির্ধারণ
একটি স্বাধীন জাতির পরিচয় বহন করে তার জাতীয় প্রতীক বা National Emblem. মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং ৩টি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে এ প্রতীক অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। একটি ফুটন্ত শাপলা ফুলের চারদিকে পাটের আঁশ অর্ধবৃত্তাকারে আবর্তিত সেই জাতীয় চিহ্নই আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। বঙ্গবন্ধু সরকার এ কাজটি অত্যন্ত সুনিপুণভাবে সম্পাদিত করে। এরপর প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী কামরুল হাসানের ডিজাইনে অঙ্কিত হয় আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সবচেয়ে বড় স্মারক আমাদের জাতীয় পতাকা। সারা বিশ্বে আজ সেই জাতীয় পতাকাই আমাদের পরিচয়ের প্রধান বাহক। এরপর আসে জাতীয় সংগীত। জাতীয় পতাকার প্রতি কীভাবে সম্মান দেখাতে হবে এবং কোন কোন দিন ও সময় তা উত্তোলিত থাকবে, কখন অর্ধনমিত থাকবে- এ সংক্রান্ত বিস্তারিত নিয়মকানুন সংক্রান্ত বিধিমালা নিয়ে প্রণয়ন করা হয় Flag Rules, বিশ্বকবি রবিঠাকুরের রচনা ও সুরে 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি' গানটিকে আমাদের জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং আন্তর্জাতিক যে কোনো সভায় তা যথানিয়মে বাজানোর জন্য International Staff Notation
নির্ধারণ করা হয় প্রখ্যাত সুরকার সমর সাহাকে দিয়ে। এ নিবন্ধকার সরকারি দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে এসব প্রক্রিয়ার প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণের বিরল সুযোগ লাভ করেছিলেন।
শেষ কথা
মোটের ওপর এ কথা বললে অত্যুক্তি হয় না যে, বিপুল জনসংখ্যার এই স্বল্পায়তনের বঙ্গভূমির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং উন্নয়নের রূপকার ও নির্মাতা ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সদ্য-স্বাধীন দেশে রাত-দিন এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ছুটে গেছেন তিনি কীভাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন ও নির্মাণ করা যায় সে ভাবনায় রত থেকে। সফলতার দেখাও হয়তো পেতেন তিনি পর্যাপ্ত সময় পেলে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সে সময় তাকে বাঙালি জাতি দিয়েছে কী? দেশ পুনর্গঠনের এ মহাকর্মযজ্ঞে যখন হাত দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ঠিক তখনই দেশের ভেতরে ও বাইরে দানা বাঁধতে থাকে ষড়যন্ত্র। সেগুলো মোকাবিলা করে উন্নয়ন ও পুনর্গঠনের পথে বঙ্গবন্ধু এগিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিকই। কিন্তু সব প্রয়াস ব্যর্থ করে দিয়ে '৭৫-এর পনেরই আগস্টে ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। এর দ্বারা তারা কেবল ব্যক্তি শেখ মুজিবকেই হত্যা করেনি, তারা ধ্বংস করতে অশুভ প্রয়াসী হয়েছে একটি সদ্য স্বাধীন দেশের উন্নয়নস্পৃহাকে। কিন্তু সফল তারা হয়নি। জাতির জনকের হাতের স্পর্শে গড়ে ওঠা এ দেশের একেকটি প্রতিষ্ঠান আজও সাক্ষ্য দিচ্ছে- স্থপতি কখনও মরে না। জাতি পিতারও মৃত্যু নেই। তাঁর সুনিপুণ হাতের ছোঁয়ায় গড়ে ওঠা এ রাষ্ট্র তাঁরই আদর্শে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁরই সুযোগ কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর হাতকে শক্তিশালী করাই এখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের মূলধারায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একমাত্র প্রেরণা। জয় হোক বাংলার। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক। বেঁচে থাকুন বঙ্গবন্ধু, বেঁচে থাকুক তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। া [সংক্ষেপিত]
লেখক
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা
মন্তব্য করুন