ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

ব্যাংক কোম্পানি একীভূতকরণের চ্যালেঞ্জ এবং উত্তরণের উপায়

অর্থনীতি

ব্যাংক কোম্পানি একীভূতকরণের চ্যালেঞ্জ এবং উত্তরণের উপায়

মো. তাবারক হোসেন ভূঁঞা

মো. তাবারক হোসেন ভূঁঞা

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪ | ২১:২৩ | আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৪ | ০৯:৫৯

একটি দেশের আর্থিক খাতে ব্যাংক শিল্পই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ব্যাংক শিল্পে গতিশীল ব্যবসায়িক পরিবেশের চাহিদা মেটানোর জন্য ব্যাংক একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ খুবই দরকারি করপোরেট কৌশল। বাংলাদেশে ব্যাংক শিল্পের এখন ক্রান্তিকাল। গ্রোথ স্টেজের বর্তমান অবস্থানে এসে এ দেশের ছোট্ট অর্থনীতি এত ব্যাংক কোম্পানির ভার যেন আর বহন করতে পারছে না। এ দেশের অর্থনীতিতে প্রচুর অবদান রেখে ব্যাংক শিল্প যেন আজ ক্লান্ত এবং এটাই স্বাভাবিক। এই ক্লান্তিটা স্বাভাবিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে। এখানে অস্থির বা উদ্বিগ্ন হলে চলবে না। একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণের কৌশল গ্রহণ করে আমাদের ব্যাংক শিল্পকে বাঁচাতে হবে। তবে বিষয়টি সম্পর্কে বলা যত সহজ, করা তত সহজ না। কারণ বাংলাদেশের করপোরেট সংস্কৃতি একীভূতকরণ বা অধিগ্রহণ কৌশলবান্ধব না। এখানে অনেক চ্যালেঞ্জ। আমাদের ব্যাংক শিল্পে এই একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ কৌশলটি অনিবার্য হয়ে উঠেছে। এ লক্ষ্যে এর চ্যালেঞ্জগুলো শনাক্ত করে তা উত্তরণের উপায় খুঁজে বের করাই এ নিবন্ধের উদ্দেশ্য। 

প্রথমেই বাংলাদেশের করপোরেট সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে প্রধান প্রধান চ্যালেঞ্জ সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো। 

ক. উদ্যোক্তাদের অহংবোধ বা ইগো: ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের মধ্যে অহংবোধ একটু বেশিই। তারা ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এবং এ পরিচয় তাদের কাছে বেশি গৌরবের বলে প্রতীয়মান। এ কারণে তারা যে কোনোভাবেই এ পরিচয় হারাতে চান না। এ পরিচয় ধরে রাখার প্রবণতা ব্যাংক কোম্পানি একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণের পক্ষে বড় অন্তরায়।

খ. নিয়ন্ত্রণ হারানোর ভীতি: মার্জার ও অ্যামালগামেশন– এ দুটি ইংরেজি শব্দের বাংলা অর্থই একীভূতকরণ। কিন্তু বাস্তবে এর মধ্যে একটু পার্থক্য রয়েছে। অ্যামালগামেশনে সমমানের দুই বা ততোধিক ব্যাংক কোম্পানি একীভূত হয়ে একটি নতুন ব্যাংকের সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক দুর্বল ব্যাংকের দায়, সম্পদসহ অ্যামালগামেশনের মাধ্যমে একটি নতুন ব্যাংকের জন্ম হলে নতুন পরিচালনা পর্ষদে সবার ঠাঁই হবে না। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের মধ্যে তাদের বিনিয়োগ এবং ব্যাংক পরিচালনায় নিয়ন্ত্রণ হারানোর যে ভীতি, সেটিও এই অ্যামালগামেশনের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়। 

গ. নিরাপত্তাহীনতা: শুধু টার্গেট ব্যাংক কোম্পানির পরিচালকরাই নিয়ন্ত্রণ ও পরিচয় হারানোর ভয়ে ভীত, তা নয়। এ ক্ষেত্রে ম্যানেজমেন্ট এবং কর্মচারীদের মনেও চাকরি হারানোর ভয় কাজ করে। তারপর আমানতকারী, গ্রাহক এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের মনেও নিরাপত্তাহীনতা কম নয়। এ বিষয়গুলো ব্যাংক কোম্পানি একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ বাধা।

ঘ. অজ্ঞতার কারণে ভীতি: ব্যাংক কোম্পানি একীভূত করার বিষয়ে আমাদের দেশে এখনও তেমন কোনো আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের সুযোগ নেই। তাই বিষয়টি সম্পর্কে ব্যাংকের স্টেকহোল্ডারদের সঠিক ধারণা নেওয়ার সুযোগ কম। এই অনিচ্ছাকৃত অজ্ঞতার কারণে যে একটা ভয়, এ কারণেও ব্যাংক কোম্পানি একীভূত বা অধিগ্রহণে এক ধরনের অনীহা দেখা যায়। 

ঙ. পূর্বপ্রস্তুতির অভাব: ফাইন্যান্সিয়াল মার্কেটে বর্তমানে যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে তা সহজেই প্রতীয়মান। যে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেরই দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনা থাকে। এ পরিকল্পনার অধীনে প্রতিবছর একটি বিজনেস প্ল্যান তৈরি করা হয়। ব্যাংক কোম্পানিতেও অনুরূপ প্ল্যান থাকার কথা। যদি থেকে থাকে, তবে ওই প্ল্যানে স্ট্র্যাটেজিক ইনফ্লেকশন পয়েন্ট এবং কন্টিনজেন্ট প্ল্যান থাকার কথা। এভাবে পরিকল্পিত উপায়ে ব্যাংক কোম্পানি পরিচালনা না করলে আপৎকালীন দরকারি ব্যবস্থা নেওয়ার অন্তত মানবিক প্রস্তুতি থাকে না। 

চ. পেশাগত প্রতিষ্ঠানের অভাব: একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ অর্থাৎ মার্জার অ্যান্ড অ্যাকুইজিশন (এম অ্যান্ড এ) একটি বাজার, যেখানে প্রকৃত ও সম্ভাব্য টার্গেট এবং অধিগ্রহণ করতে আগ্রহী কোম্পানির লেনদেন হয় বা হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এখানে ‘এম অ্যান্ড এ’ সংক্রান্ত স্টকহোল্ডার, স্টেকহোল্ডারসহ সংশ্লিষ্ট কোম্পানি সম্পর্কে পর্যাপ্ত ইনফরমেশন সোর্স থাকে। করপোরেট রিস্ট্রাকচারিংয়ের ক্ষেত্রে ‘এম অ্যান্ড এ’ মার্কেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ মার্কেটকে গতিশীল করার জন্য অভিজ্ঞ পেশাদার প্রতিষ্ঠান অতি জরুরি। কিন্তু এ দেশে এই মার্কেট উপযোগী পেশাগত প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি বলে মনে হয়। 

ছ. অস্থিরতা: ব্যাংক এমন একটি সংবেদনশীল শিল্প, যেখানে আবেগের ফলে বা অস্থিরতার মধ্যে তড়িঘড়ি করে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ভুলভ্রান্তির মধ্য দিয়ে একীভূত করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে না। কারণ ব্যাংক শিল্প সমাজের সব পেশার প্রায় সব শ্রেণির মানুষের দৈনন্দিন ব্যবসা-বাণিজ্য, ভ্রমণ, হাউসহোল্ড ইকোনমি– এ সব কিছুর সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। জনজীবন আজ ব্যাংকিং সেবা ছাড়া যেন চলতে চায় না। তা ছাড়া ব্যাংক জনসাধারণের অর্থ নিয়ে কাজ করে। এ ক্ষেত্রে অস্থিরতা প্রদর্শন করলে একীভূতকরণে ভালো ফল আসবে না; বরং সিস্টেমিক রিস্কের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তা ছাড়া তাড়াহুড়ার মাঝে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে গেলে তা ডিল কিলার হিসেবে কাজ করতে পারে। যেমন– এতে সঠিক মূল্যায়ন এবং মূল্য নির্ধারণ সম্ভব হবে না। সঠিকভাবে শর্ত যোগ করা এবং রিপ্রেজেন্টেশন করাও সম্ভব হবে না।

জ. অঙ্গীকারের অভাব: ব্যাংক কোম্পানি একীভূতকরণ বা অধিগ্রহণের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ স্টকহোল্ডার ও স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে অঙ্গীকারের অভাব। মুখে এক কথা ও কাজে অন্য কথা– এখানে এমন হলে চলবে না। অতিরিক্ত বা সামর্থ্যের বাইরে প্রতিশ্রুতি, কথা ও কাজে অমিল– এগুলোও এ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। 

ওপরের আলোচনায় ব্যাংক কোম্পানি একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জ শনাক্ত করা হলো, তার বাইরেও চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে। তবে এ নিবন্ধের সংক্ষিপ্ত পরিসরে শুধু মূল চ্যালেঞ্জগুলো আলোচনায় আনা হয়েছে। এবার এগুলো থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে আলোকপাত করা যাক। 

একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া যে বিশ্বজুড়ে একটি ব্যবসায়িক কৌশল, এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে প্রয়োজনীয় সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন পেশাগত প্রতিষ্ঠানসহ ব্যাংক কোম্পানিগুলো এগিয়ে আসতে পারে। তা ছাড়া এই ‘একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ’ বিজনেস ফাইন্যান্সের একটি অংশ। দেশের বিজনেস স্কুলগুলোতে এ বিষয়ে একটি কোর্স চালু করা যেতে পারে। ফলে এ দেশের উদ্যোক্তাদের মাঝে যে মিথ্যা অহমিকা, তা দূরীভূত যাবে এবং বিষয়টি কোনোভাবেই তাদের কাছে আর মর্যাদাহানিকর মনে হবে না। একই সঙ্গে ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদে থাকা-না থাকার বিষয়ও তখন তাদের কাছে গৌণ বলে মনে হবে। 

ব্যাংক একীভূত করার তুলনামূলক সুফল সম্পর্কে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, গ্রাহকসহ সব স্টেকহোল্ডারকে অবহিত রাখার প্রক্রিয়া চালু করলে তাদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা কমে আসবে। তবে এ ক্ষেত্রে যারা নেতৃত্ব দেবেন, তাদের কথা ও কাজে মিল থাকতে হবে। আমরা আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশ যেমন– নেপাল, মালয়েশিয়ার ব্যাংক শিল্পের একীভূতকরণ থেকে শিক্ষা নিতে পারি। ব্যবসায় উত্থান-পতন থাকবে। এ জন্য মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে। সেই সঙ্গে থাকতে হবে ব্যাংক কোম্পানিগুলোর দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনা। এ পরিকল্পনার আওতায় বার্ষিক বিজনেস প্ল্যান থাকা আবশ্যক। দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনায় কন্টিনজেন্সি প্ল্যান এবং ব্যবসায় দুর্দিনের করণীয় অন্তর্ভুক্ত থাকলে পূর্বপ্রস্তুতির অভাব দূর হবে। এতে একটা মানসিক প্রস্তুতিও থাকবে। ফলে একীভূতকরণ প্রক্রিয়া মেনে নেওয়া সহজ হবে। 

একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ বা মার্জার অ্যান্ড অ্যাকুইজিশন (এম অ্যান্ড এ) একটি বাজার, যেখানে প্রকৃত ও সম্ভাব্য টার্গেট এবং অধিগ্রহণ করতে আগ্রহী কোম্পানির লেনদেন হয় বা হওয়ার সুযোগ থাকে। এখানে ‘এম অ্যান্ড এ’ সংক্রান্ত স্টকহোল্ডার, স্টেকহোল্ডারসহ সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর পর্যাপ্ত ইনফরমেশন সোর্স থাকে। করপোরেট রিস্ট্রাকচারিংয়ের ক্ষেত্রে ‘এম অ্যান্ড এ’ মার্কেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ মার্কেটকে গতিশীল করার জন্য অভিজ্ঞ পেশাদার প্রতিষ্ঠান অতি জরুরি। আমাদের দেশে বর্তমানে এ মার্কেট সৃষ্টির প্রচুর সম্ভাবনা ও সুযোগ তৈরি হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংক শিল্পের মার্জারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনার যে ঝড় উঠেছে, সেটি এ মার্কেট সম্ভাবনারই প্রমাণ। এ মার্কেট সৃষ্টির জন্য অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবলসহ ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক, ফাইন্যান্সিয়াল পরামর্শক, ল ফার্ম, ট্যাক্স ফার্ম– এসব পেশাদার প্রতিষ্ঠান দরকার। কিন্তু বাংলাদেশে প্রকৃতপক্ষে যে ধরনের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক থাকার কথা, তা নেই। এ দেশে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকগুলো স্টক মার্কেটে শেয়ার বেচাকেনা নিয়েই বেশি সময় কাটিয়ে দেয়। লাইসেন্স টিকিয়ে রাখার জন্য দু’একটি ইস্যু ম্যানেজমেন্টের কাজ করে। অথচ পুঁজিবাজারে এ ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের অবদান রাখার বিস্তর সুযোগ রয়েছে। 

‘এম অ্যান্ড এ’ মার্কেটে সম্ভাব্য টার্গেট এবং ক্রেতা বা হস্তান্তর গ্রহণকারী কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকেরই কাজ। টার্গেট কোম্পানির পক্ষে সেল গেম করে সঠিক মূল্য আদায় করা, টার্গেট কোম্পানির প্রাথমিক মূল্যায়ন করা, সম্ভাব্য ক্রেতা চিহ্নিত করা, টার্গেট কোম্পানির মূল্যমানের প্রাক্কলন প্রস্তুত করা, উভয় কোম্পানির মধ্যে ডিল নেগোশিয়েট করা প্রভৃতির জন্য উন্নত বিশ্বে একটি ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক নিযুক্ত করা হয়। আমাদের দেশে এমন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক সম্ভবত নেই। তা ছাড়া ‘এম অ্যান্ড এ’ ডিলে দক্ষ ল ফার্ম খুবই জরুরি। এ ক্ষেত্রে অন্য কাজের মধ্যেও কিছু বিশেষায়িত কাজ ল ফার্মগুলোকে করতে হয়। যেমন– ডিউ ডিলিজেন্স চেকলিস্ট প্রস্তুত করা, ভার্চুয়াল ডেটা রুম স্থাপন করা, লিগ্যাল ডিউ ডিলিজেন্স করা ইত্যাদি। তা ছাড়া একীভূত বা অধিগ্রহণ সংক্রান্ত প্রথম খসড়া ল ফার্মই করে থাকে। যাই হোক, আমাদের দেশে বেশ কিছু ভালো পেশাদার প্রতিষ্ঠান আছে। তবে একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণের বিষয়টি ব্যবসায়িক কৌশল হিসেবে এখনও অপরিণত। এ জন্য এসব প্রতিষ্ঠানও এ বিষয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেনি। 

আমাদের বুঝতে হবে, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আমরা এখন উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখি। উন্নত দেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মার্কেটনির্ভর অর্থনীতি। আমরা এখনও ব্যাংকনির্ভর অর্থনীতির দেশ। উন্নত দেশের স্বপ্নপূরণে আমাদের এখন সঠিক পথনকশা অনুসরণ করে পথচলা শুরু করার সময় এসেছে। তাই ব্যাংকের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে পুঁজিবাজারের ওপর নির্ভরতা বাড়াতে হবে। এ জন্যও এ দেশের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকগুলোকে করপোরেট চরিত্রায়ণে মনোযোগী হওয়া আবশ্যক। একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে শুধু ব্যাংক কোম্পানির জন্য নয়, সব শ্রেণির কোম্পানির জন্যই একটি দক্ষ ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ইনস্ট্রুমেন্টাল ভূমিকা পালন করতে পারে। সুতরাং আমাদের দেশে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকগুলোকে নতুন করে সাজাতে হবে। তা ছাড়া অন্যান্য পেশাগত প্রতিষ্ঠানকেও এ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করে পেশাগত সক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ করে দিতে হবে। দরকার হলে বিদেশ থেকে প্রশিক্ষক এনে প্রাথমিক পর্যায়ে অভিজ্ঞতার ঘাটতি পূরণ করা যেতে পারে। 

ব্যাংক উদ্যোক্তা, পরিচালক ও ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে একটি শক্তিশালী কমিটমেন্ট থাকতে হবে। সবার মাঝে জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। প্রথমেই সবার চেষ্টা থাকতে হবে, যাতে নিজ নিজ ব্যাংক দুর্দশাগ্রস্ত না হয়। যদি তা না পারা যায়, তবে ব্যর্থতার দায় নিয়ে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হয়ে যাওয়ার প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। 

আরেকটি কথা, পোস্ট ক্লোজিং ইস্যুগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে তা যথাসময়ে সমাধান করতে হবে। যেমন– দক্ষ মানবসম্পদ আত্তীকরণ, গ্রাহক-আমানতকারীদের ইন্টিগ্রেশনসহ সেবার মানোন্নয়ন। এগুলো দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে। একীভূতকরণের পর ব্যাংকের কাস্টমার বেজ হলো অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এ ক্ষেত্রে দক্ষতার সঙ্গে কাস্টমার প্রফিটেবিলিটি নির্ণয় করা জরুরি। জনবল হলো একটি ব্যাংকের ইন্টারনাল কাস্টমার। পিএমআই স্টেজে চেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট খুবই জরুরি। তাই দক্ষ নেতৃত্বের অধীনে ইন্টিগ্রেশন টিমকে ন্যস্ত করে, চেঞ্জ ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে জনবল ও অন্যান্য রির্সোস একই উদ্দেশ্যে একই সারিতে এনে নতুন করে পথচলা শুরু করা আবশ্যক। 

সর্বোপরি মনে রাখতে হবে, যেসব কারণে টার্গেট ব্যাংককে গ্রহীতা ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে হলো, সেসব কারণ যেন নতুন করে দেখা না দেয়। পরিশেষে, উপরোক্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বেশি দরকার হলো সর্বক্ষেত্রে সবার মাঝে নিষ্ঠা, সততা, কমিটমেন্ট ও দায়িত্ববোধ। তবেই ব্যাংক শিল্পের এই একীভূতকরণের উদ্যোগ সফল হবে।  

(সমাপ্ত)

ড. মো. তাবারক হোসেন ভূঁঞা: হেড অব চেম্বার, জুরিসকনসাল্টস অ্যান্ড লিগ্যাল সলিউশনস (জেএলএস)
jls@jlslawfirm.com 

আরও পড়ুন

×