- মুক্তমঞ্চ
- সাধারণ মানুষের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে
অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় সিপিডি
সাধারণ মানুষের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে

সাম্প্রতিক ইতিহাসে বর্তমানে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে। এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে নীতিনির্ধারকদের বাস্তবতার আলোকে লক্ষ্যভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে শুধু আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়নই নয়, জাতীয় তথা জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণে সাধারণ মানুষ এবং ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২২-২৩ : তৃতীয় অন্তর্বর্তীমূলক পর্যালোচনায় এমন সুপারিশ করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন পর্যালোচনার তথ্য তুলে ধরেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, রিসার্চ ফেলো মুনতাসির কামাল প্রমুখ।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাড়ে ৩ শতাংশ কম। আগামী দুই মাসে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। তাছাড়া পোশাক ছাড়া অন্যান্য খাতের ১১ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি দুশ্চিন্তার কারণ।
তিনি আরও বলেন, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ২১ লাখ ব্যক্তি দেশের বাইরে গেছেন। সে অনুযায়ী রেমিট্যান্স বাড়ছে না। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। এ ছাড়া শ্রমবাজার হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বেশি জনবল গেলেও এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স আসছে বেশি। রেমিট্যান্স হিসেবে আসা এ অর্থের একটি আগে পাচার হয়েছিল বলে সিপিডির ধারণা।
পাচার হওয়া অর্থ রেমিট্যান্স হিসেবে আসছে কিনা, তা এখনই খতিয়ে দেখা দরকার। এদিকে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত। বাংলাদেশ ব্যাংক এর কারণ বের করতে পারবে।
একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্য তুলে ধরে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০২০ সালে দেশে স্বর্ণ এসেছিল ৫ টন। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৫৪ টন, যা বার্ষিক চাহিদা ২০ টনের বেশি। এ স্বর্ণ দেশ থেকে অর্থ পাচারের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে বলে ধারণা তাঁর। তিনি বলেন, রেমিট্যান্স এখন স্বর্ণ আকারেও আসছে। হুন্ডি-হাওলা বন্ধ করা গেলে রেমিট্যান্স বেড়ে তা সংকটে থাকা রিজার্ভকে সহায়তা করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সিপিডি বলেছে, সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গত বছরের মার্চে মোট রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলার থাকলেও চলতি বছরের মার্চে তা কমে ৩১ বিলিয়নে নেমেছে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবে নেট রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্যের তুলনায় প্রকৃত রিজার্ভ আরও কম হতে পারে বলে মন্তব্য করেন ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, প্রকাশিত রিজার্ভ আপেক্ষিক। প্রকৃতপক্ষে এর পরিমাণ আরও কম হতে পারে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
সিপিডির উপস্থাপনায় বলা হয়, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন শুরু হওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজার নিত্যপণ্যে দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও মূল্যস্ফীতি বাড়ে। কিন্তু বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে এলেও একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে বাংলাদেশ জিনিসপত্রের দাম এখনও অনেক বেশি। এ অবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকের সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছে সিপিডি। এ ছাড়া সংস্থাটি মনে করে, সরকারকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া কমালে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। মুদ্রা বিনিময় হারও বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সুপারিশ
আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করা হলে বর্তমানে অকটেন, পেট্রোল, ডিজেলসহ জ্বালানি তেলে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি লিটারে এখন ৫ থেকে ১০ টাকা কমানোর সুযোগ আছে বলে মনে করে সিপিডি। এ বিষয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, যখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ে, তখন দেশের বাজারের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু যখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে, তখন স্থানীয় বাজারে দাম কমানো হয় না।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আইএমএফ ঋণের শর্তের কারণে ভর্তুকি কমানোর কথা বলে জ্বালানির দাম বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়। এ ছাড়া জ্বালানি খাতের অন্যান্য সিস্টেম লস কমানোর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
খাদ্যে ব্যয় কমিয়েছে মানুষ
সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেকে বাধ্য হয়ে খাদ্যে ব্যয় তুলনামুলক কমিয়েছে। এ ছাড়া করোনা মহামারির আগের তুলনায় বর্তমানে চাহিদার চাল, গমসহ খাদ্যশস্যের প্রাপ্যতা কমে গেছে। তাই খাদ্য নিরাপত্তায় বাস্তবতাভিত্তিক নীতি গ্রহণের সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। একই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে প্রকৃত উপকারভোগী নির্ধারণ করে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি ভাতার হার বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়।
মন্তব্য করুন