এমপি হতে চান আওয়ামী লীগের ১৬ নেতা

এমপি নাজিম উদ্দিন
মোস্তাফিজুর রহমান, ময়মনসিংহ
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:৩৪ | আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৩ | ০১:১৭
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে বনিবনা নেই এমপি নাজিম উদ্দিন আহমেদের। দলে অনেকটা কোণঠাসা তিনি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরও আছে আলাদা বলয়। উপজেলা শাখার সভাপতি-সম্পাদকের পদ ঘোষণার ১৪ মাস পেরিয়ে গেলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। পাঁচ গ্রুপে বিভক্ত নেতাকর্মীরা। এই পরিস্থিতিতে অন্তত ১৬ জন নেতা এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হতে দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসন থেকে ২০১৬ সালের উপনির্বাচনে প্রথম এমপি হন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ফের এমপি হন তিনি। জ্যেষ্ঠ এই নেতা এলাকায় নেতাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছিলেন এবং জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছিলেন। ২০২০ সালে তাঁর স্পর্শকাতর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সমালোচনার মুখে পড়েন। এমপির সব কার্যক্রম ছেলে তানজির আহমেদ রাজীবের হাত ধরে। এ নিয়েও নেতাকর্মীর মধ্যে অসন্তোষ আছে। এমপি এলাকায় কম যাওয়ায় উন্নয়নও পিছিয়ে গেছে বলে অভিযোগ অনেকের। এবারও তিনি প্রার্থী হতে চান।
নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, দলের পাঁচটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এমপি, উপজেলা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের একজন সদস্য।
উপজেলায় ২০০৩ সালে গঠিত আওয়ামী লীগের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মারা যাওয়ায় সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে। অনেকে এমপি নাজিমের সঙ্গে যোগ দিলেও ২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর থেকে নেতাকর্মীরা সরতে শুরু করেন। সম্মেলনে তিনি দলের প্রার্থী হলেও সভাপতি হন নিলুফার আনজুম পপি, সাধারণ সম্পাদক হন সোমনাথ সাহা। এর পর এলাকায় এমপি নাজিম অনেকটা একা হয়ে পড়েন।
সোমনাথ সাহা দলের প্রার্থী হতে তৃণমূল নেতাদের নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালাতে শুরু করেন পদ পাওয়ার পর থেকেই। বিভিন্ন এলাকায় সভা করছেন এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীকে নানাভাবে সহযোগিতা করছেন। তিনি বলেন, দলে কোনো গ্রুপিং নেই। যেহেতু দলের অনেকে এমপি প্রার্থী হতে চান, তাই সরকারের উন্নয়নকাজের প্রচার পৃথকভাবে করা হয়। এমপিও নিজের মতো করে কাজ করছেন। দল যাঁকেই মনোনয়ন দেবে, তাঁর পক্ষেই সবাই কাজ করবে।
নিলুফার আনজুম পপিও কার্যক্রম চালাচ্ছেন পৃথকভাবে। মনোনয়ন ফরম কিনেছেন তিনিও। তবে তিনি বলছেন, দলে কোনো গ্রুপিং নেই। কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কাজ চলমান রয়েছে। ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর এলাকায় অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন কিনা– এমপি নাজিম উদ্দিন আহমেদের কাছে এ প্রশ্ন করলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, কোণঠাসা অবস্থায় নেই। পদের লোভে অনেকে দূরে সরে গেছেন। তাঁর চেয়ে জনপ্রিয় কেউ নেই এখানে।
জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অধ্যাপক ড. এ কে এম আবদুর রফিকও দলের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তিনি বলেন, দলের দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের সঙ্গে দূরত্ব থাকাটাই এমপির ব্যর্থতা।
পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ রফিকুল ইসলাম নিজের একটি বলয় নিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয়। তিনি এবারও দলের মনোনয়ন চাইছেন। ২০২০ সালে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মাসুদুর রহমান শুভ্র হত্যায় আসামি হয়ে জেল খেটে আদালতের রায়ে খালাস পেয়েছেন তিনি। এতে এলাকায় জনপ্রিয়তা বেড়েছে জানিয়ে রফিকুল বলেন, রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার হয়েছিলেন।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সাবেক সদস্য ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোর্শেদুজ্জামান সেলিমের নেতৃত্বাধীন গ্রুপটি এলাকায় শক্তিশালী। কয়েকটি সহযোগী সংগঠন তাঁর নিয়ন্ত্রণে। তিনি বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগে ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে, তা ঠিক হয়ে যাবে। বর্তমান এমপি জনগণের কাছে যেতে চাইলেও নানা কারণে পারেননি। যোগ্য নেতৃত্বের জন্য দল অবশ্যই আমাকে বিবেচনা করবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপদেষ্টা ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ডা. মতিউর রহমানও দলের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এলাকায় তিনি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এর আগেও তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে প্রচার চালিয়েছিলেন, তবে মনোনয়ন পাননি। এবার মনোনয়ন পাবেন– এমন আশা প্রকাশ করে তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য কাজ করছেন। দল এর মূল্যায়ন নিশ্চয়ই করবে।
এ ছাড়া যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন তাদের মধ্যে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরীফ হাসান অনু, সদস্য রাবেয়া ইসলাম ডলি, উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম মুহা. আজাদ, নাজনীন আলম, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবুল, স্বাচিপের সাবেক সভাপতি ডা. এম এ আজিজ, আবু কাউছার চৌধুরী রন্টি, মোশাররফ হোসেন জুয়েল ও রেলওয়ে শ্রমিক লীগ নেতা শওকত উজ্জামান শাহীন।