শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে মহারশি নদীর বেড়িবাঁধ সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১০ লাখ টাকায় কাজ পেয়ে তা স্থানীয় এক ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন মাত্র ৪ লাখ টাকায়। ওই ঠিকাদার আবার ২ লাখ ৭০ হাজার টাকার চুক্তিতে সেখানে মাটি ফেলার কাজ দিয়েছেন এক্সক্যাভেটর (খননযন্ত্র) ঠিকাদারকে। এ নিয়ে পুরো এলাকায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০২২ সালে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ঝিনাইগাতী বাজারসংলগ্ন মহারশি নদীর বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থান ভেঙে যায়। এতে নদী-তীরবর্তী এলাকায় শত শত হেক্টর জমি তলিয়ে যায়, বিধ্বস্ত হয় ঘরবাড়ি। পানি ঢুকে পড়ে রামেরকুড়া দিঘিরপাড়সহ কয়েকটি গ্রামে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এলাকাবাসী শক্তিশালী ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে দাবি তোলেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পক্ষ থেকে ওই বাঁধটির ১৫০ মিটার অংশ সংস্কারে প্রাক্কলন করে ১০ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। মে মাসে লটারির মাধ্যমে শতকরা ৫ টাকা কমে কাজটি পান জামালপুরের স্বপ্ন এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. ওয়াসিম। ১৮ মে পাউবোর সঙ্গে ঠিকাদারের চুক্তি হয়। এতে ৩০ জুনের মধ্যে কাজ সমাপ্তির প্রতিশ্রুতি দেন ঠিকাদার।

স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদের ভাষ্য, তাঁরা জেনেছেন– ওই কাজটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৪ লাখ টাকায় স্থানীয় ঠিকাদার আব্দুল ওয়াহাবের কাছে বিক্রি করেছেন।

ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাহিদুল হক মনির বলেন, সাব-ঠিকাদার ওই কাজ আবার ২ লাখ ৭০ হাজার টাকায় মাটি কাটার জন্য আরেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার ওই এলাকায় গেলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন, বাঁধটি সংস্কারকাজ করা হচ্ছে সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে। উপযোগী মাটি ফেলা হচ্ছে না। সামান্য ঢলেই এ বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। জোড়াতালির এ কাজকে সরকারির টাকার অপচয় বলে মনে করেন তাঁরা।

আগের বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হন স্থানীয় ব্যবসায়ী বেনিআমিন। তিনি বলেন, আগের বাঁধটি যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। পাহাড়ি ঢলে সেটিই টেকেনি। এখন সাব-ঠিকাদার যেভাবে মাটি ফেলছেন, তা কোনোভাবেই টিকবে না। বাঁধ সংস্কারে অনিয়মের কথা তাঁরা স্থানীয় সংসদ সদস্যকেও জানিয়েছেন।

ঝিনাইগাতী সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহাদত হোসেন বলেন, বাঁধটি ভাঙার পর ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচি থেকে তিনটি স্থানে মাটি ভরাট করে চলাচলের উপযোগী করে দিয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ। অথচ সেই স্থানগুলোকেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দরপত্রে শামিল করে প্রাক্কলন তৈরি করা হয়েছে। এতে দুর্নীতির অভিযোগ করেন তিনি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আব্দুল মান্নান বলেন, গত বছর তাঁরা মহারশি নদীর পূর্বপাড়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় বেড়িবাঁধ সংস্কার করেন। তবে এক রাতের পাহাড়ি ঢলেই তা তলিয়ে যায়। ৭-৮ লাখ টাকা খরচ করে সংস্কার করলে টেকানো সম্ভব হতো। অল্প টাকায় এখন যে কাজ হচ্ছে, তাতে বাঁধ টেকানো মুশকিল।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আল মাসুদ বলেন, অভিযোগ পেয়ে এলাকায় যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, ১০ লাখ টাকার কাজ ঠিকাদার ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, প্রাক্কলনে মাটি কেনার জন্য ৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। অথচ স্থানীয়দের কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মাটি নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছেন।

কাজটি বিক্রি করেননি বলে দাবি করেন প্রকল্পের ঠিকাদার মো. ওয়াসিম। তাঁর ভাষ্য, প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ করছেন। কাজ বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব পাউবো কর্তৃপক্ষের। অন্য কারও এ বিষয়ে নাক গলানো উচিত নয়।

শিডিউল অনুযায়ী ওই কাজ বুঝে নিতে চান পাউবো শেরপুর-জামালপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, নিয়মের কোনো ব্যত্যয় হবে না। ঠিকাদার যতটুকু কাজ করবেন ততটুকুর বিল পাবেন। কিছু কাজ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান করেছেন জানালে বলেন, ‘কেউ কাজ করে থাকলে, ঠিকাদার সেই বিল পাবেন না।’