- ময়মনসিংহ
- তারাকান্দা বাজারে ৭২ ঘণ্টার জন্য ১৪৪ ধারা জারি
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন
তারাকান্দা বাজারে ৭২ ঘণ্টার জন্য ১৪৪ ধারা জারি

ছবি: সমকাল
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলা বাজারে ৭২ ঘণ্টা অর্থাৎ তিন দিনের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে আগামী ৫ জুন সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকবে। বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। শুক্রবার দিনভর থমথমে অবস্থা বিরাজ করে পুরো উপজেলায়।
১৪৪ ধারা জারির জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পুলিশের করা আবেদনে বলা হয়, তারাকান্দা উপজেলা নির্বাচন উপলক্ষে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. ফজলুল হক সমর্থিত এবং বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মোহাম্মদ নূরুজ্জামান সরকার বকুল সমর্থিতদের মধ্যে দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার (৫ জুন) পর্যন্ত দুই পক্ষই যেন মিছিল-সমাবেশ করতে না পারে তাই তারাকান্দা এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য তারাকান্দা বাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা একান্ত প্রয়োজন।
পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিজাবে রহমত ১৪৪ ধারা জারি করেন। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে মিছিল-মিটিং, জনসমাবেশ ও মাইক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হল।’
আগামী ১২ জুন তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল হক, ‘আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী’ প্রার্থী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক নুরুজ্জামান সরকার বকুলের লোকজনের মধ্যে বৃহস্পতিবার সংঘর্ষ হয়। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা মিছিল নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর নির্বাচনী প্রধান ক্যাম্পে গুলিবর্ষণ করে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হামলা করে এমন অভিযোগ উঠেছে। এতে বকুলের অন্তত ১৫ জন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধসহ গুরুতর আহত হন। এদের মধ্যে ১০ জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীও তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে তাদের পাঁচজন নেতা কর্মী আহত হওয়ার অভিযোগ করেন। উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ঘটনার পরপর বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুজ্জামান নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শুক্রবার বেলা ২টায় প্রতিবাদ সমাবেশের জন্য উপজেলা সদরে নিজের নেতাকর্মীদের জড়ো হওয়ার আহ্বান জানান। এতে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ১৪৪ ধারা জারির ফলে লোকজন জড়ো না হওয়ায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
স্থানীয় জাকির হোসেন জানিয়েছেন, পুলিশি টহল চলছে। উপজেলা সদরে মানুষের উপস্থিতি কম।
স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুজ্জামান সরকার বলেন, ‘থানার কাছে আমার নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা হলেও ওসি নিজের ফোন বন্ধ রাখেন। জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ আসে। ওসির বদলির দাবিতে আজ (শুক্রবার) প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দিতে সকাল থেকে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন। ১৪৪ ধারার কারণে সমাবেশ হয়নি, কিন্তু যে কোনো সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। গুরুতর অবস্থায় আমার ১০ জন নেতাকর্মীকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে, এদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।’
তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল খায়ের বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে সংঘর্ষে আহতদের চিকিৎসা চলছে। বিষয়টি নিয়ে থানায় কোনো পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। উপজেলার সদর বাজার এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। ১৪৪ ধারা জারি থাকায় কোনো ধরনের মিছিল-মিটিং ও সমাবেশ করতে পারবে না কেউ।’
মন্তব্য করুন