
'পারাপার' নাটকের দৃশ্য
শিল্পের ভেতরে যে অশুভ প্রেতাত্মারা ঘুরে বেড়ায়, তা সাধারণত সবার চোখে পড়ে না। অসংখ্য শকুন শিল্পীর মোড়ক পরে থাকে। দেশনাটক তাদের নতুন প্রযোজনা 'পারাপার'-এ শিল্পের ঝলমলে আলোর পেছনে যে কুৎসিত বাস্তবতা, তার প্রতীকী ইঙ্গিত করেছে। গত ১০ নভেম্বর শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল মঞ্চে নাটকটির উদ্বোধনী শো পিনপতন নীরবতায় দর্শক উপভোগ করে। নাটকটি রচনায় মাসুম রেজা এবং নির্দেশনায় ফাহিম মালেক ইভান। নানা প্রশ্নের উত্থাপন করে এ নাটক। শিল্পের আড়ালে কি সত্যি নারী ব্যবসার মতো জঘন্য প্রবণতা বিদ্যমান? কীভাবে শিল্পের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার মুখোশ পরে থাকে শকুনরা? ব্যবসায়ীই কি শিল্পী সাজে অথবা একজন শিল্পীর জীবিকা অর্জনের উপায় কী?
নাটকের শেষে নাট্যকার প্রশ্ন করেছেন- শিল্পী কি শিল্পকে ভালোবাসবে নাকি ভালোবাসবে তার প্রেমিকাকে কিংবা বাঁচার জন্য করবে নারী পাচারের ব্যবসা? পরিবেশনাটি দর্শকের ভাবনার কাছে এসব প্রশ্ন ছেড়ে দেয়। নাটকটি প্রসেনিয়াম মঞ্চে ঐতিহ্যবাহী উপস্থাপনা রীতিতে বাস্তববাদী ধারার সঙ্গে সাজেস্টিকতার মিশ্রণে উপস্থাপিত। এ নাটকে নৃত্য-গীত-সংলাপ-অভিনয়ে গল্পের গাঁথুনির গীতল ঢঙে নাটকীয় দ্বন্দ্বটাই মুখ্য হয়ে উঠেছে। নির্দেশক অনেকটা নিরাভরণভাবে দৃশ্যের পর দৃশ্য সাজিয়েছেন। সংগীত-নৃত্য ও অভিনয় এবং গল্পের দ্বান্দ্বিক পটভূমিতে জীবন্ত করে তুলেছেন শিল্পের বাস্তবতা ও মানবিক দ্বন্দ্ব।
দৃশ্য নির্মাণে পরিমিতি বোধ লক্ষণীয়। বাঙালির শিল্পচর্চার প্রেক্ষিতকে কেন্দ্র করে মানবীয় রক্তক্ষরণের গতিময় দৃশ্যরূপ মাঞ্জেলা কিংবা জোসনার রক্তক্ষরণের ধারা দর্শককেও দগ্ধ করে। নির্দেশক প্রতিটি দৃশ্যের সংযোগস্থলে সংগীতের ব্যবহার করেছেন। চরিত্রাভিনয় প্রধান হলেও কাহিনির প্রয়োজনে মাঝে মাঝে বর্ণনা এসেছে। আঞ্চলিক গল্প হলেও সংলাপ সহজবোধ্য। বিয়োগান্তক নির্মম পরিণতি নাটকটিকে রসসিদ্ধ করেছে।
মন্তব্য করুন