জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার চলচ্চিত্রের একমাত্র রাষ্ট্রীয় ও সর্বোচ্চ পুরস্কার। ১৯৭৫ সাল থেকে এই পুরস্কারটি দিয়ে আসছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় এবার দেওয়া হয়েছে ২০২১ সালের এ পুরস্কার। এবারের আসরে শিকড়ছোঁয়া সিনেমার বিজয় চোখে পড়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ঘোষিত আজীবন সম্মাননাসহ ২৭টি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও অনুদানের সিনেমাগুলো সর্বোচ্চ শাখায় পুরস্কার জিতেছে।

রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের 'নোনাজলের কাব্য' ছবিতে দেশের সমুদ্র-উপকূলবর্তী প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রান্তিক জেলেদের দৈনন্দিন জীবনযাপন, আবহাওয়া প্রতিকূলতার মুখে টিকে থাকার লড়াই এবং তাদের সামাজিক রীতিনীতি ও সংস্কার দেখানো হয়েছে। সমাজ, সংস্কৃতির উন্নয়ন এবং পরিবেশের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন রোধে সচেতনতা বাড়াতে ভূমিকা পালন করতে পারে এই সিনেমা- এমন বিশ্বাস নিয়েই এটি নির্মাণ করেছেন সুমিত।

সিনেমাটি ২০২১ সালের ২৬ নভেম্বর মুক্তি পায় প্রেক্ষাগৃহে। অন্যদিকে নূরুল আলম আতিকের 'লাল মোরগের ঝুঁটি' সিনেমায় দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল উপবিভাগীয় সৈয়দপুরের বিমানঘাঁটি সংস্কার করতে আসে। সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে বন্ধুদের মধ্যে সম্পর্ক বদলে যায়। তাদের মধ্যে কয়েকজন মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে এবং অন্যরা দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগীদের সমর্থনে কাজ করে। সিনেমাটি ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মুক্তি পায়। প্রচলিত ধারার মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্রের বাইরে গিয়ে কিছু করতে চাওয়ার মানসিকতার জন্য সিনেমার নির্মাতাকে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রসঙ্গে নির্মাতা নূরুল আলম আতিক বলেন, "যে কোনো সম্মাননা আরও ভালো কাজ করার তাগিদ দেয়। অনেক পরিশ্রম করে আমরা 'লাল মোরগের ঝুঁটি' সিনেমা তৈরি করেছি। তাই 'লাল মোরগের ঝুঁটি'র বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী, সহযোদ্ধা ও পুরস্কার বিজয়ী সবাইকে অভিনন্দন। পাশাপাশি যাঁরা এ বছরের পুরস্কার পাচ্ছেন তাঁদের সবার প্রতি থাকল শুভকামনা।"

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নিয়ে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, "চলচ্চিত্র পুরস্কারের এবারের আসরে ভালো ভালো সিনেমার ঘরেই পুরস্কার গেছে। যোগ্য শিল্পীরাই পাচ্ছেন এ পুরস্কার। সেরা নির্মাতা হিসেবে 'রেহানা মরিয়ম নূর'-এর আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের নাম দেখলে অনেকেই খুশি হতেন। তারপরও ছবিটি কিন্তু তিনটি শাখায় পুরস্কৃত হয়েছে। চলচ্চিত্রে আজীবন সম্মাননা একটি গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার। এ পুরস্কার প্রদান নিয়ে কিছু কথা উঠেছে। অনেক যোগ্য শিল্পীরই বয়স বেড়েছে। তাঁরা পৃথিবীতে থেকেই এই সম্মানজনক পুরস্কারটি পেতে পারেন, যে জন্য একসঙ্গে দু'জনকেই দেওয়া হচ্ছে। জুরি বোর্ডের এ সিদ্ধান্ত সঠিক বলে মনে করি। একটা কথা না বললেই নয়। আজীবন সম্মাননা 'হীরালাল সেন আজীবন সম্মাননা' নামে প্রবর্তন হলে ভালো হতো। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভেবে দেখবে বলে মনে করছি। কারণ হীরালাল সেন এশিয়ার প্রথম চলচ্চিত্রকার।'