- অফবিট
- মিসরীয় বিমান ভাড়ায় কেলেঙ্কারি খতিয়ে দেখছে সংসদীয় কমিটি
১১০০ কোটি টাকা গচ্চা
মিসরীয় বিমান ভাড়ায় কেলেঙ্কারি খতিয়ে দেখছে সংসদীয় কমিটি

সাত বছর আগে মিসর থেকে দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজ ভাড়া আনার ঘটনায় সরকারের বিপুল অর্থের অপচয় হয়েছে। এর কারণ দুর্নীতি না, দায়িত্বপ্রাপ্তদের ভুল সিদ্ধান্ত- তা খতিয়ে দেখছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এই দুটি বিমান ভাড়ায় সরকারের এক হাজার ১০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
এ ঘটনায় বুধবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) সাক্ষ্য নিয়েছে সংসদীয় কমিটি। সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) জামাল উদ্দীন আহমেদ এবং এমডি মোসাদ্দেক হোসেনকে তলব করা হয়। কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, আশেক উল্লাহ রফিক, আনোয়ার হোসেন খান, সৈয়দা রুবিনা আক্তার এবং কানিজ ফাতেমা আহমেদ অংশ নেন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় গত বছরের অক্টোবরে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে জানায়, এই উড়োজাহাজ দুটি চালিয়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা, খরচ হয়েছিল তিন হাজার ৩০০ কোটি টাকা। দুটি উড়োজাহাজের জন্য প্রতি মাসে বিমান ১১ কোটি টাকা করে ভর্তুকি দিয়ে আসছিল। সেই দায় থেকে ওই বছরের মার্চ মাসে মুক্ত হতে পেরেছে বিমান। দশম সংসদের বিমান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিও এই বিমান দুটি লিজ নেওয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান ও এমডির বক্তব্য কমিটি শুনেছে। তারা লিখিতও দিয়েছেন। আরও লিখিত দেবেন। কমিটি তদন্ত করবে। কমিটি এখনই বলছে না যে দুর্নীতি হয়েছে। এখানে কাউকে এই মুহূর্তে দোষীও করা হচ্ছে না। ক্ষতি দুর্নীতির কারণেই হয়েছে এমনও নয়। ভুল সিদ্ধান্তের কারণেও হতে পারে। কমিটি বিষয়টি আরও পর্যালোচনা করবে।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান জামাল উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, মিসরের উড়োজাহাজ লিজ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কমিটি আমাদের বক্তব্য নিয়েছেন। উড়োহাজাজ ভাড়া নিয়ে কী বক্তব্য দিয়েছেন- জানতে চাইলে সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। সাবেক এমডি মোসাদ্দেক সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। সংসদীয় কমিটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
এদিন সংসদীয় কমিটি দুটি বৈঠক করে। বেলা ১১টায় নিয়মিত বৈঠকের পর দুপুর ২টায় মিসরীয় উড়োজাহাজ লিজ নিয়ে বৈঠক বসে। সাধারণত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সংসদ সচিবালয়ের কয়েকটি শাখার কর্মকর্তা অংশ নেন। প্রথম বৈঠকে সকল শাখার কর্মকর্তারা থাকলেও দ্বিতীয় বৈঠকে কয়েকটি শাখার কর্মকর্তারা ছিলেন না।
গত ৮ সেপ্টেম্বর ওই দুটো উড়োজাহাজ ভাড়া আনার সঙ্গে জড়িতদের তলব করার সিদ্ধান্ত হয়। পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ দুটি লিজ নিয়েছিল বিমান। এর একটি বিমানের বহরে যুক্ত হয় ২০১৪ সালের মার্চে এবং অন্যটি একই বছরের মে মাসে। এক বছরের কম সময়, অর্থাৎ ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লাইট পরিচালনার পর একটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয় বাকি ইঞ্জিনটিও।
উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে আবারও ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। পরে ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায়। সেই ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। তবে কোনো সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। সে কারণে ইজিপ্ট এয়ার এবং মেরামতকারী কোম্পানি- উভয়কেই অর্থ দিতে হয়েছে বিমানকে।
মন্তব্য করুন