চীনের উত্তর-পশ্চিমের একটি মরুভূমিতে নৌকার ওপর শত শত মমির সন্ধান পাওয়ার পর প্রত্নতাত্ত্বিকরা হতভম্ব হয়ে যান। নব্বইয়ের দশকে চীনের জিনজিয়াংয়ের তারিম অববাহিকায় মমিগুলোর সন্ধান মেলে। চার হাজার বছরের পুরোনো হওয়া সত্ত্বেও মমিগুলোর শরীর ও পোশাক অক্ষত ছিল। মুখের অবয়ব ও চুলের রং স্পষ্ট দেখা যায়। মরুভূমির শুষ্ক বাতাসে প্রাকৃতিকভাবে অক্ষত থাকে এগুলো।

মমিগুলোর চেহারা ছিল পশ্চিমাদের মতো, পরনে ছিল উলের পোশাক। তবে সমাধিস্থলে পনির ও গম পাওয়ায় ধারণা করা হয়, তারা পশ্চিম এশিয়ার দূর-দূরান্ত থেকে আসা পশুপালক অথবা মধ্য এশিয়ার পাহাড় ও মরুভূমি থেকে আসা কৃষক। 

এসব মমির ডিএনএ নিয়ে গবেষণা করেছেন চীন, ইউরোপ ও আমেরিকার গবেষকরা। তারা ১৩টি মমির জিনোম সিকোয়েন্স করে একটি ভিন্ন চিত্রের সন্ধান পেয়েছেন। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, মমিগুলো পশ্চিমা বা কোনো অভিবাসী কৃষকের নয় বরং এগুলো প্রাচীন বরফ যুগের মানুষের, যারা এশিয়া অঞ্চলেরই।  


হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ক্রিস্টিনা ওয়ারিনার বলেন, 'মমিগুলো আবিষ্কারের পর বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও মুগ্ধ হয়েছে। দারুণভাবে সেগুলো সংরক্ষিত ছিল।' সবগুলো মমিতেই বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক উপাদান পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি। ক্রিস্টিনা অবশ্য বলেন, মমিগুলো স্থানীয় একটি জনগোষ্ঠীর মানুষের।

তবে তাদের উৎস সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক গবেষক দল পুরনো ১৩টি মমির জেনেটিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে। তাতে দেখা যায়, সেগুলো ৩৭০০ থেকে ৪১০০ বছর আগের। পাঁচজনের ডিএনএ নমুনার সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায়, প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে জঙ্গেরিয়ান অববাহিকায় বসবাসরত প্রাচীন মানুষের সঙ্গে মিল রয়েছে মমিগুলোর। 

তবে গবেষকরা দাবি করেন, মমিগুলো প্রাচীন উত্তর ইউরেশিয়ান অঞ্চলের মানুষের উত্তরসূরিদের। শেষ বরফ যুগের সময় ওই গোষ্ঠীটি হারিয়ে যায়। সূত্র: সিএনএন