- অফবিট
- মায়ের খোঁজে ইরান থেকে ইউরোপের দেশে দেশে, ১৮ বছর বিমানবন্দরে বাস
মায়ের খোঁজে ইরান থেকে ইউরোপের দেশে দেশে, ১৮ বছর বিমানবন্দরে বাস
অসুস্থ মাকে দেখতে প্রচণ্ড বর্ষার রাতে উত্তাল দামোদর নদী সাঁতরে পাড়ি দিয়েছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। যুগে যুগে মায়ের প্রতি ভালোবাসার এমন উদাহরণ অনেক। তেমনই আরেক উদাহরণ গড়া মানুষের নাম মেহরান করিমি নাসেরি। যিনি তার মাকে খুঁজতে ইরান থেকে ছুটে যান ইউরোপে। বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, জার্মানিসহ নানা দেশে তন্ন তন্ন করে খুঁজে ফেরেন মাকে।
কিন্তু স্বাধীনতার নামে দেশে দেশে গড়ে ওঠা সীমানাপ্রাচীর আর কাঁটাতার এই অনুভূতির কী বোঝে? সে তো খোঁজে কেবল অভিবাসনের কাগজপত্র। সেসব না থাকায় একের পর এক দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয় মায়ের খোঁজে ছুটে চলা মেহরানকে। শেষে ফ্রান্সের প্যারিস বিমানবন্দরের টার্মিনালেই স্থায়ী ঠাই নেন তিনি।
সেখানে একটি বেঞ্চের চারদিকে নিজের জিনিসপত্র ও ট্রলি রেখে থাকার জায়গা করে নেন। হাতে থাকে বই ও সংবাদপত্র। বুকে মায়ের জন্য বিষাদমাখা হাহাকার। ১৮ বছর এভাবেই কাটে টার্মিনালে। হাহাকার টুকে রাখেন নোটবুকে, লেখেন জীবনের গল্প। সেই গল্প একদিন ছুঁয়ে যায় বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক স্টিফেন স্পিলবার্গের হৃদয়।
২০০৪ সালে স্পিলবার্গ ‘দ্য টার্মিনাল’ সিনেমা নির্মাণ করেন। বিশ্বের সামনে তুলে ধরেন মেহরানের জীবনের গল্প। এতে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস ও ক্যাথরিন জেটা-জোনস।
বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, কূটনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে নাসেরি ১৯৮৮ সালে চার্লস ডি গল বিমানবন্দরের এক কোণে বসবাস করতে শুরু করেন। একটানা সেখানেই ছিলেন ১৮ বছর।
১৯৪৫ সালে ইরানে খুজেস্তান প্রদেশে জন্মগ্রহণ করা মেহরান অবশ্য ১৯৯৯ সালে শরণার্থী হিসেবে ফ্রান্সে থাকার অনুমতি পেয়েছিলেন। তবে তিনি টার্মিনাল ছেড়ে যাননি। ২০০৬ সালে অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ‘টার্মিনাল’ সিনেমা থেকে পাওয়া টাকায় হোস্টেলে থাকতে শুরু করেন।
বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি আবারও বিমানবন্দরে ফিরে আসেন। এবার আর বেশিদিন থাকা হলো। গত ১২ নভেম্বর সকল সীমানা প্রাচীরের ঊর্ধ্বে উঠে মেহরান করিমি নাসেরি পাড়ি জমালেন পরপারে। তখনও কি তার বুকের ভেতর হাহাকার করে বাজছিল মা-মা ডাক? সেই উত্তর আর জানা যাবে না।
মন্তব্য করুন