তাপসী দাস, আর ১০ জন সাধারণ নারীর মতোই একজন গৃহিণী। গৃহপালিত পশুপাখির প্রতি রয়েছে তার অগাধ ভালোবাসা। দৈনন্দিন জীবনের বেশিরভাগ সময়ই বাড়িতে পোষা বিড়ালদের নিয়ে কাটে। তাপসী তার এই পশু-পাখির প্রতি প্রবল আগ্রহ এবং ভালোবাসাকে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন অন্যদের মাঝে। আর সেই ভাবনা থেকেই ২০১৯ সালে ‘পুচি ফ্যামিলি’ নামে একটি ফেসবুক পেইজ তৈরি করেন তিনি। এই পেইজে মানুষ ও প্রাণির একসঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো ভিডিও কন্টেন্টের মাধ্যমে সবার সঙ্গে শেয়ার করেন তিনি। আর সেগুলো উপভোগ করেন পশুপাখির প্রতি ভালোবাসা রয়েছে যারা তারা। তা ছাড়া শিশুদের কাছেও এসব ভিডিও বেশ উপভোগ্য।

তাপসী জানান, ছোট থেকেই তিনি বিড়াল পছন্দ করতেন। বর্তমানে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তার ভাড়া বাড়িতে রয়েছে বেশ কয়েকটি বিড়াল। তিনি নিজের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মতোই মনে করেন এই বিড়ালগুলোকে। বিশেষ করে ‘পুচি’। যে বিড়ালটিকে তার নিজের মেয়ের মতো করেই ভাবেন। সেভাবেই লালন-পালন করেন। তাপসীর ভাষায়, ‘এই সব বিড়ালগুলো তার সন্তানের মতোই।’

বর্তমানে তাপসীর প্রায় ১৪টি বিড়াল রয়েছে। এই বিড়ালগুলোর সঙ্গে তার পরিবারের কাটানো মুহূর্ত, ভালোবাসার দৃশ্যগুলো ভিডিও কন্টেন্টের মাধ্যমে মাধ্যমে পৌঁছে দিচ্ছেন মানুষের কাছে। এ সব ভিডিও পশু-পাখি নিয়ে অনেকের মনের মধ্য লালন করা ভ্রান্ত ধারণা, ভীতি দূর করছে। তাপসী তার ভিডিওতে মানুষকে সবসময় বুঝানোর চেষ্টা করেন, গৃহপালিত পশুপাখি ভয়ংকর কোনো প্রাণী নয়, তারা মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পছন্দ করে। তারাও মানুষকে ভালোবাসতে জানে।

স্বামী-সন্তানদের সঙ্গে তাপসী দাস- সমকাল

তাপসী দাসের এই পশুপ্রেমী হওয়াটা সহজ কাজ ছিল না। এজন্য তাকে বিভিন্ন সময় নানা প্রতিকুলতার শিকার হতে হয়েছে। বিশেষ করে পোষা প্রাণী সম্পর্কে এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে কিছু ভ্রান্ত ধারণা থাকার কারণে তাকে অপ্রীতিকর মুহূর্ত কিংবা হেনস্তার শিকারও হতে হয়েছে। বাড়িতে একাধিক বিড়াল লালন-পালনে আপত্তি ওঠায় তাকে ঘন ঘন বাসা পরিবর্তনও করতে হয়েছে। তবে এসব কোনোকিছুই তার পোষা প্রাণির প্রতি ভালোবাসা কমাতে পারেনি। তাপসী বলেন, ‘ওদেরকে (বিড়াল) সঙ্গে নিয়ে থাকার পর এখন ওদের ছেড়ে থাকা প্রায় অসম্ভব আমার কাছে, বর্তমানেও যেমন ওদের সঙ্গে আছি, ভবিষ্যতেও ওদের সঙ্গে থাকবো। ওরা আমার পরিবারের অংশ।’

তাপসী জানান, নিজের এই যাত্রায় সবচেয়ে বেশি পাশে পেয়েছেন স্বামী ও পরিবারকে। শুধু নিজের পোষা প্রাণীদের জন্যই তাপসীর সব পরিশ্রম, ভালোবাসা এমনটাও কিন্তু নয়। এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিকেরও বেশি বিড়ালের সুস্থতার জন্য ভ্যাক্সিনের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। এ ছাড়া তার তৈরি বিভিন্ন ভিডিও কন্টেন্ট থেকে উপার্জিত আয় ব্যবহার হচ্ছে পশু-পাখি ও অসহায় মানুষদের জন্য।