- অফবিট
- জানার আছে অনেক কিছু
জাপান-ইস্ট এশিয়া নেটওয়ার্ক অব এক্সচেঞ্জ ফর স্টুডেন্ট অ্যান্ড ইয়ুথস
জানার আছে অনেক কিছু

আজ থেকে ২২ বছর আগেও জাপানের কৃষিকাজে ২০ লাখ ট্রাক্টর এবং ১২ লাখ কম্বাইন হারভেস্টর ব্যবহার হতো। দেশটির কৃষি খাতে বর্তমানে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৬ জনেরই বয়স ৬০ বছরের ওপরে। এই বয়স্ক কৃষকদের কায়িক শ্রম কমাতেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় এগিয়ে চলার পথ বেছে নিয়েছে দেশটি।
অন্যদিকে বাংলাদেশে যার পরিমাণ ৫৮ শতাংশ। এর পরও দেশটির হেক্টরপ্রতি চাল উৎপাদন বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি। যন্ত্রের ব্যবহার ও কৃষির টেকসই উন্নয়নে নিজেকে গড়ে তুলছে আধুনিক আদর্শ হিসেবে।এসব কারণে জাপান সরকার বহু আগেই শুরু করে আদর্শ বিনিময়ের কাজ। তারই অংশ হিসেবে সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক বন্ধুত্ব এবং সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য জাপান সরকারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রতি বছরই জেনেসিস (জাপান-ইস্ট এশিয়া নেটওয়ার্ক অব এক্সচেঞ্জ ফর স্টুডেন্ট অ্যান্ড ইয়ুথস) নামক বিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জেআইসিই) সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনায় ৭ দিন স্থায়ী হয় এ অনুষ্ঠানের মেয়াদকাল। এতে বিভিন্ন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়ে থাকে। এবারের জেনেসিসের প্রতিপাদ্য ছিল কৃষি। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি– এই সাত দিনে অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়। এই আয়োজনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে যুক্ত হয়েছিলেন ৯ জন প্রতিযোগী (পাঁচজন স্নাতক পর্যায়ের এবং চারজন কলেজের শিক্ষার্থী) এবং একজন টিমলিডার (শিক্ষক)। শিক্ষার্থীদের মধ্যে দু’জন ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থী। তাঁরা হলেন– কৃষি অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আল সাউদ সৌহার্দ্য এবং পশুপালন অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়াসিফ আহমেদ। জাপানে দেখে আসা কৃষিব্যবস্থা বাংলাদেশে কী ধরনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে তা নিয়ে কথা হয় তাঁদের সঙ্গে।
জাপানে দেখা কৃষিব্যবস্থা নিয়ে আল সাউদ সৌহার্দ্য বলেন, এক সপ্তাহের এই বিনিময় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ আমাকে নতুন অনেক অভিজ্ঞতা দিয়েছে। জাপানের দুটি প্রদেশ টোকিও ও টোচিগিতে জেনেসিস অনুষ্ঠিত হয়। জাপান মূলত এসডিজি তথা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রতি খুবই যত্নশীল। এ লক্ষ্যে তারা কৃষি ক্ষেত্রে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সারের ব্যবহার শতভাগ নিশ্চিত করতে চায়। তাদের আবাদযোগ্য কৃষিজমির প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ জমিতে সেটি বাস্তবায়নও করেছে তারা। বিশেষ করে জাপানের প্রায় কৃষিজমিতে গ্রিনহাউসের ব্যবহার আমাকে অবাক করেছে।
টোকিও ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কৃষিভিত্তিক জ্ঞান বিনিময়ে আধুনিক কৃষির একেবারে ভিত্তিগঠন পর্যায়ের জ্ঞানও পেয়েছি। এ ছাড়া ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক আমাদের শেখালেন কীভাবে একটি বিশেষ স্থানে সবুজ অবকাঠামো গঠন করতে হয়। এ ছাড়া গ্রিন হাউস এবং শেড হাউসে পূর্ণ হর্টিকালচারাল খামার পরিদর্শন, জৈব সার উৎপাদক খামার পরিদর্শন আমাকে দিয়েছে অভিজ্ঞতা। জাপানের কৃষি ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে ওয়াসিফ আহমেদ বলেন, জাপানের মতো আমাদেরও কৃষিক্ষেত্রে যান্ত্রিকীকরণ যেমন– কম্বাইন হারভেস্টর, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ইত্যাদি যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়াতে হবে। দেশে এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কিছুটা কঠিন। তবে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বাস্তবায়িত হলে খুব কম শ্রমেই অধিক ফলন পাওয়া সম্ভব। আরেকটি বিষয় হলো রেস্টুরেন্টের বেচে যাওয়া ভোজ্যতেল দিয়ে জাপানে ট্র্যাক্টর চালিত হয়। বাংলাদেশেও এটি করা গেলে পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি কিছু ব্যয় বাঁচানো যাবে। জাপানিরা জুডো বা উডো নামক পাহাড়ি গাছ থেকে জৈব সার উৎপাদন করে, যা গাছকে একই সঙ্গে পটাশিয়াম ও ফসফরাস সরবরাহ করে। বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলেও এই গাছ দেখা যায়। এ ধরনের কিছু গাছ ব্যবহার করে আমরাও জৈব সার উৎপাদন করতে পারি। ফলস্বরূপ রাসায়নিক সারের ব্যবহার হ্রাস পাবে এবং বিদেশ থেকে আমদানি ব্যয়ও কমবে। পরিবেশবান্ধব সবুজ অবকাঠামো তৈরি করে পরিবেশে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ এবং পরিবেশ দূষণ কমানো যাবে।
মন্তব্য করুন