
আমার বাবার খুব শখ ছিল আমি ছবি আঁকি, প্রদর্শনী করি, অন্তত ইন্টেরিয়র প্রজেক্টগুলোতে থিম চিন্তা করে নিজের আঁকা ছবি ব্যবহার করি! আমি কী যে হাসতাম, আব্বাকে বকতাম পর্যন্ত! ছবি আঁকা আমার দ্বারা হয় না, মানে আমি পারি না। যা করি ওইটাকে painting বলা যায় না! হামিদুজ্জামান স্যার একবার হাতে তুলি ধরিয়ে দিলেন, এর পর থেকে রাগ-ক্ষোভ-দুঃখ-অবসর সবকিছুর আশ্রয় হয়ে গেল তুলি, রং আর খসখসে ক্যানভাস, শুধুই নিজের জন্য। আব্বা তখন বলতেন বেশি বেশি আঁকো। রং ক্যানভাস কিনে আমার ঘর ভরে দিতেন, তিন-চার দিন ফেলে রাখলে সেই অসমাপ্ত ছবি দেয়ালে টাঙিয়ে রাখতেন আর আমি বাসায় ফিরে ওটা দেখেই আব্বাকে বকাঝকা শুরু করতাম।
তবে ক্যানভাসে রং চড়াতাম মোটামুটি প্রতিদিন, খুব আরাম লাগত।একই ক্যানভাসে কতবার কত রং দিয়ে পুরোনো রং সব মুছে ফেলেছি! কিছুই হয় না দেখে সবাই ভাবত, আমি বিরক্ত হয়ে করছি। সত্য হলো, ওইটাই আমার সবচেয়ে আনন্দের সময় ছিল। রং দিয়ে কী সুন্দর পুরোনো সব মুছে ফেলা না গেলেও অদৃশ্য করা যায়– অপ্রিয় ক্ষত, অপ্রিয় সত্য, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, মুখোশধারী– জীবনের সব অপ্রিয় যদি অ্যাক্রিলিক রং দিয়ে বদলে নতুন রং দিয়ে রাঙাতে পারতাম!
না, আমার পরিবার আমাকে ভালো থাকতে শিখিয়েছে! তাইতো এইবার আনন্দ নিয়ে সদ্য শেষ করা ইন্টেরিয়র প্রজেক্টে নিজের আঁকা ছবি দিয়ে একটা স্পেসের সমস্যার সমাধান করলাম! আব্বার ইচ্ছে আর ফারজানা সিদ্দিকা সাথীর [আমাদের প্রতিষ্ঠান মৃ স্টুডিওর সহকর্মী, আমার কাজের শক্তি] দেওয়া সাহস– ব্যস! সেই সাথে ক্লায়েন্টের হাসি ছিল বোনাস!
হ্যাঁ, আমার এই ছবি কোনো ছবিই না। কিন্তু আব্বার ঠোঁটের কোনায় একটু হাসি যদি আসে, ফারজানার হাঁফ ছেড়ে বাঁচার লুকোনো দীর্ঘশ্বাস– ওই না হওয়া ছবিটাই আমার জীবনের আনন্দ!
[অপি করিমের ফেসবুক থেকে]
মন্তব্য করুন