- অফবিট
- মিরপুর চিড়িয়াখানায় শিশুর হাত ছিঁড়ে নিল হায়েনা
মিরপুর চিড়িয়াখানায় শিশুর হাত ছিঁড়ে নিল হায়েনা

আহত শিশু সাইফ হাসান। ছবি-সমকাল
শিশু সাইফ হাসানের গ্রামের বাড়ি রংপুরে। তবে পরিবারের সঙ্গে থাকে গাজীপুরে। মা শিউলিসহ ছয় স্বজনের সঙ্গে বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুর থেকে চিড়িয়াখানায় এসেছিল শিশুটি। মায়ের কোল থেকে নেমে হঠাৎ হায়েনার খাঁচার কাছে গিয়ে হাত ঢুকিয়ে দেয় শিশুটি। আর এতে আক্রমণের শিকার হয় দুই বছর বয়সের সাইফ। হায়েনা শিশুটি হাত কামড়ে ধরে। পরে বাহির থেকে টান দিলে হাত ছিঁড়ে যায়।
বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ঢাকার মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, সবার অলক্ষ্যে ঘটনাটি ঘটে বলে প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে। তবুও কারও গাফিলতি আছে কি না সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
মিরপুর বিভাগের (দারুস সালাম জোন) সহকারী পুলিশ কমিশনার মফিজুর রহমান পলাশ জানান, চিত্রা হায়েনার খাঁচাটি সাত ফুট উঁচু লোহার রড ও বেড়া দিয়ে ঘেরা। তার ফুটখানেক আগে লোহার রড দিয়ে একটি নিরাপত্তা বেষ্টনী আছে। ওই নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম না করার বিষয়ে নির্দেশনা সেখানে টানানো আছে। শিশুটি কোনোভাবে নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করে বেড়ার ফোকর দিয়ে ডান হাত এগিয়ে দিলে হায়েনা তা কামড়ে ছিঁড়ে নেয়। শিশুটিকে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার ডান হাতের কব্জিসহ অনেকখানি কামড়ে ছিঁড়ে নিয়েছে প্রাণীটি।
এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে উল্লেখ করে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, তদন্ত করে- কেন ঘটল, এখানে কারও দায়িত্ব অবহেলার বিষয় ছিল কি না- সেই বিষয়গুলো নিশ্চয় উঠে আসবে। কারও দায়িত্ব অবহেলার বিষয় প্রমাণিত হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিশুটির সুচিকিৎসার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
শিশুটির মামা মো. ইউসুফ অভিযোগ করেন, যে খাঁচায় হায়েনা ছিল তার দুটি পার্ট। ভেতরের পার্টের গেট খোলা ছিল। আমার ভাগনে ছোট মানুষ, ভালো মন্দ বোঝে না। দৌড়ে খাঁচার কাছে গেছে। চিড়িয়াখানার লোকজন যদি ভালোভাবে খেয়াল রাখত তাহলে এই দুর্ঘটনা ঘটত না।
চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা বিষয়টি ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চিড়িয়াখানার লোকজন নানাভাবে আমাদের বোঝানোর চেষ্টা করছে। তাঁরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। পাশাপাশি বলছে, আমরা যেন কোনো কিছু না করি। হাত গেছে, এটাতো আর পাওয়া যাবে না। তাঁরা আমাদের সহযোগিতা করবে। কিন্তু আমার ভাগনে তো সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেল এর দায় কে নেবে।
চিড়িয়াখানার সহকারী পরিচালক মুজিবুর রহমান বলেন, ঘটনার পরপরই আমরা শিশুটিকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য সব ব্যবস্থা করি। পঙ্গু হাসপাতালে এখনও শিশুটিকে চিকিৎসায় সহায়তার জন্য আমাদের দুজন কর্মকর্তা রয়েছেন।
তিনি বলেন, বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে লোকসমাগম থাকলেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনার পরপরই সব ধরনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। তারা বিষয়টি দেখছেন। হায়েনা শিশুটির হাতের যে অংশ নিয়ে গেছে সেটি আর পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে চিকিৎসকের বরাত দিয়ে চিড়িয়াখানার এই কর্মকর্তা বলেন, সাইফের শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল রয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক যুগ্ম সচিব (প্রাণিসম্পদ–১) শাহীনা ফেরদৌসী বলেন, তিনি চিড়িয়াখানা এবং হাসপাতালে শিশুটিকে দেখতে গিয়েছিলেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে যতটুকু চিকিৎসা দরকার তা করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিভাবক না চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ, কার দোষ বা অবহেলা ছিল, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তদন্ত চলছে।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসক মানস দাস বলেন, কনুই থেকে হাত ছিঁড়ে যাওয়ায় শিশুটির রক্তপাত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে অস্ত্রোপচার করে ছিঁড়ে যাওয়া জায়গাটি যতটুকু পারা যায় ঠিক করার চেষ্টা করা হয়েছে।
ঘটনার পর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাটি কীভাবে ঘটলো ও কারো কোনো গাফিলতি রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর থেকে তিন সদস্য করে আলাদা আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার বলেন, এই ঘটনার পর চিড়িয়াখানার নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। কেন এমন ঘটলো ও নিরাপত্তা বাড়াতে আরও কি কি করা যেতে পারে সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন