১৫ শতাব্দীর শেষভাগে ১৪৯২ সালে ইতালীয় নাবিক ঔপনিবেশিক কলম্বাস ভূলক্রমে আমেরিকা আবিষ্কার করলে তার খেসারত দিতে হয় সেখানকার আদিম আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের। পৃথিবীর সময়প্রবাহের জীবন ও সংস্কৃতির গণ্ডিতে নানান চড়াই উৎরাই পার করে আজও যেভাবে টিকে আছে রেড ইন্ডিয়ানরা-

রেড ইন্ডিয়ান কারা?

বলা হয় রেড ইন্ডিয়ানরা প্রায় ১৬ হাজার বছরের পুরোনো জাতি। দেখতে লম্বা, ফর্সা বা তামাটে। অনেকটা নাক চ্যাপটা এই জনগোষ্টীর লোকজন পূর্বে পিরু নামে পরিচিত ছিলেন। শান্তা মারিয়া জাহাজে করে দলবল নিয়ে কলম্বাস যখন আমেরিকা পৌঁছালেন তখন সেখানকার প্রথম বসতি স্থাপনকারী লোকেরা কলম্বাস ও তার ভ্রমণসঙ্গীদের স্বাগত জানালেন। তিনি ভাবলেন, তিনি ইন্ডিয়াতে এসে পৌঁছেছেন কিন্তু আসলে ছিল এটি আমেরিকা। দীর্ঘদিন কলম্বাস প্রেইরির দিগন্ত জোড়া এলাকায় আধিবাসীদের জীবনযাত্রা পর্যবেক্ষণ করলেন। দেখলেন এই আধিবাসীরা শিকারে বা কোন উৎসবে যাওয়ার সময় একধরনের লাল রং মুখে ও শরীরে নানান অংশে ব্যবহার করেন। তাই কলম্বাস তাদের নাম দিলেন রেড ইন্ডিয়ান। কিন্তু কলম্বাস যাদের রেড ইন্ডিয়ান নামে অভিহিত করেছিল তারা কি কখনো নিজেদেরকে রেড ইন্ডিয়ান নামে পরিচয় দিয়েছে? উত্তর হল কখনই না। তারা নিজেদেরকে সে দেশের বাসিন্দা বলেই জানত। ‘রেড ইন্ডিয়ান’ ধারণাটি  মূলত ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকদের চিন্তা ও প্রচারপ্রসূত প্রপাগান্ডারই ফসল।


ভূমি মালিক থেকে ভূমিহীন

গবেষকরা মনে করেন প্রাচীন কালে উত্তর আমেরিকার বেরিং প্রণালীটি সেসময় তুষারে আবৃত ছিল। বর্তমানে সেটি এখন এশিয়া ও উত্তর আমেরিকাকে পৃথক করেছে। রাশিয়ার সাইবেরিয়ার সাথেও মেক্সিকোর যোগাযোগ ছিল। এসব অঞ্চল থেকেই প্রথম লোকজন বর্তমানের যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায় প্রথম বসতি স্থাপন করে। পৃথিবীর সময় প্রবাহের সাথে সাথে বেরিং প্রণালীর তুষারখণ্ড আলাদা হয়ে যায়। এতে এশিয়া ও আমেরিকা পৃথক হয়। যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো-কানাডায় যারা এভাবে প্রথম বসতি স্থাপন করেছিলেন, তাদেরকেই ঔপনিবেশিকরা এভাবে রেড ইন্ডিয়ান তকমা লাগিয়ে দেয়।

মেক্সিকোর আ্যজটেক সভ্যতায় এই রেড ইন্ডিয়ানদের সমৃদ্ধ অবদান ছিল। মায়া ও ইনকা সভ্যতার গবেষকগণও মনে করেন, রেড ইন্ডিয়ান বলে যারা পরিচিত, তারাই এই সভ্যতা দুটির অন্যতম ধারক ও বাহক ছিল। কিন্তু কলম্বাসের নজর আমেরিকার উর্বর ভূমি আকর্ষণ করার পর থেকে এইসব আধিবাসীদের জীবন দুর্বিষহ হতে শুরু করে। এভাবে একসময় তারা ভূমি মালিক থেকে ভূমিহীন হয়ে যায়। 

টিকে থাকার লড়াই

আজকের দিনের ফিলিস্থিনিরা যেমন নিজ নিজ দেশে প্রবাসী, ঠিক তেমনি ঘটেছে আমেরিকার আদি ভূমি মালিকদের সাথে। অতিথিপরায়ন আমেরিকার আদি বাসিন্দারা যাদেরকে রেড ইন্ডিয়ান ডিসকোর্সের মাধ্যমে আমরা এতদিন বুঝে এসেছি, তাদেরকে প্রায় ৪০০ বছর পর্যন্ত অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই চালাতে হয়েছে। আজকের ইউরোপ যাকে মহান কলম্বাস বলেন, তিনি ছিলেন প্রচন্ড মাত্রায় ঔপনিবেশিক মনোভাবের অধিকারী। তিনি ইন্ডিয়ায় ঔপনিবেশ স্থাপনের বৃহৎ পরিকল্পনা সেসময়ে ইতালির শাসকদের কাছে উপস্থাপন করে ব্যর্থ হয়েছিলেন। পরে স্পেনের শাসকবর্গের সহায়তায় তিনি প্রথম আমেরিকায় পৌঁছালেন। পুরো ইউরোপ তখন আমেরিকার চমৎকার ভূখণ্ডগুলো সম্পর্কে জানতে পারল। দলে দলে ইউরোপিয়ানরা এসে রেড ইন্ডিয়ানদের উৎখাত করে তাদের ভূমি দখল করল। পনেরশ শতাব্দীতে বিশ্বের সাম্রাজ্যগুলো নিজেদের মধ্যে নৌ শক্তি বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় ছিল। পর্তুগাল, স্পেন ও ফ্রান্সের পর ব্রিটিশরা নৌ শক্তির একক হেজিমন হিসেবে নিজদের আধিপত্য তৈরি করেছিল। ব্রিটিশ ও ফ্রান্সের মধ্যে শতবর্ষব্যাপী যুদ্ধ শেষ হবার পর আটলান্টিকের উপকূলজুড়ে আমেরিকায় ব্রিটিশরা ১৩ টি ঔপনিবেশ স্থাপন করে। ফলে রেড ইন্ডিয়ানরা আরও ভূমি হারাতে থাকে। এরমধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ১৭৫৬-১৭৬৩ সাল পর্যন্ত সাত বছর ব্রিটেন ও ফ্রান্সে মধ্যে যুদ্ধ হয়। ফ্রান্স এতে পরাজিত হয়। বর্তমান আমেরিকার ভূখণ্ডের তখন ব্রিটিশদের ঔপনিবেশ শাসন জোরদার হয়। রেড ইন্ডিয়ানরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ব্রিটিশদের স্থাপন করা কলোনিগুলোর উপর  ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নানান শর্ত ও মাত্রাতিরিক্ত করের বোঝা চাপিয়ে দিলে কলোনিগুলোর বসিন্দারা স্বাধীন আমেরিকা গঠনের উদ্যেগ নেয়। রেড ইন্ডিয়ানরা ভাবে তাদের বোধহয় মুক্তি মিলবে। কেননা আমরিকার স্বাধীনতার জনক জর্জ ওয়াশিংটন সবাইকে এই বলে আশ্বস্ত করেছিল যে, আমরিকার ভূখণ্ড স্বাধীন হলে সেখানকার আধিবাসীরা সবাই মুক্ত ও স্বাধীন থাকবে। আর আগে থেকেই যেহেতু রেড ইন্ডিয়ানদের উপর ব্রিটিশদেরে নির্যাতনের মাত্রা ছাড়িয়েছিল, তাই ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই আমেরিকার স্বাধীনতা ঘোষণার পর ব্রিটিশদের সাথে ১৭৮৩ সাল পর্যন্ত যে যুদ্ধ চলেছিল, তাতে রেড ইন্ডিয়ানদেরও অংশগ্রহণ ছিল। অথচ রাজনৈতিক সংস্কৃতির চরম বাস্তববাদ তত্ত্বের অনুশীলনকারী অমেরিকার ইতিহাসে রেড ইন্ডিয়ানদের কথা অনুচ্চারিত অবস্থাতেই থেকেছে। বরং আমেরিকার স্বাধীনতা অর্জনের পর রেড ইন্ডিয়ানদেরকে তারা একপেশে করে রাখে। সিআরআই এর সম্পাদকীয় থেকে জানা যায়, বর্তমান আমেরিকা প্রায় ১৫০০ বার রেড ইন্ডিয়ানদেরকে আক্রমণ করেছে। ওই সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত ৭০ হাজারের বেশি রেড ইন্ডিয়ান নারীকে জোর করে বন্ধ্যা করা হয়। দেখা যায় ১৫ শতাব্দীর শেষে রেড ইন্ডিয়ানদের সংখ্যা যেখানে ৫০ লাখ ছিল, সেখানে ২০শতাব্দীর শেষে এসে রেড ইন্ডিয়ানদের সংখ্যা দাড়িয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজারের মতো। 

রেড ইন্ডিয়ানদের উপর মূল খড়গ নেমে আসে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট অ্যান্দ্রু জাকসনের আমলে। তিনি ১৮৩০ সালে ইন্ডিয়ান রিমুভাল অ্যাক্ট তথা আদিবাসী উৎখাত নীতি গ্রহণ করেন। ফলে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার তাগিদে রেড ইন্ডিয়ান জাতিগোষ্ঠীরা লড়াই সংগ্রাম ও কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। 

আমেরিকার গণমাধ্যমগুলোতে রেড ইন্ডিয়ানদের সম্পর্কে তেমন খবরাখবর পাওয়া যায় না। তবে ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভয়েস অব আমেরিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রেড ইন্ডিয়ান মহিলাদের পাঁচ জনের মধ্যে চার জনই যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে থাকে। 

২০২২ সালের জুলাই মাসে রেড ইন্ডিয়ানদের সম্পর্কে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সবার নজরে আসে। মেক্সিকো, কানাডা ও আমেরিকায় রেড ইন্ডিয়ানদের বসবাস। ঘটনাটি ঘটে ২০২১ সালের মে ও জুন মাসে। জানা যায়, মে মাসে কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ার একটি স্কুল থেকে ২১৫ জন শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আর জুন মাসে সাসফাচেওয়ান প্রদেশের আরও একটি স্কুল থেকে ৭১৫টি কবরের সন্ধান মেলে। 

এই ঘটনার পর আদিবসীরা প্রতিবাদ শুরু করলে পুরো বিশ্বে জানাজানি হয়। তখন পোপ গিয়ে আদিবাসীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে তাদেরকে শান্ত করেন।

দেড় লক্ষাধিক আদিবাসী শিশুকে সভ্য করে তোলার নামে ১৮৬৩ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সময়ে ১৩০টি আবাসিক স্কুলে পাঠানো হয়। ছয় হাজার শিশু এর মধ্যে মৃতুবরণ করে। 

সহস্র নির্যাতন সহ্য করেও আমেরিকার আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানরা বর্তমান সময়ে আমেরিকার মোট জনসংখ্যার ১.৬% এর প্রতিনিধিত্ব করছে। আমেরিকার মূল ক্ষমতা কাঠামোয় বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত আদিবাসীদের তেমন কোন উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ ছিল না। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম আদিবাসী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডেব হল্যান্ড দায়িত্ব গ্রহণের পর সেই কলঙ্ক কিছুটা ঘুচেছে। মার্কিন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক রোক্সান দুনবার অর্তিজ তার ‘অ্যান ইন্ডিজিনাস পিপলস হিস্ট্রি অব ইউনাইটেড স্টেটস’ গ্রন্থে বলেন, উপনিবেশবাদী মার্কিনিরা আদিবাসীদের ভূমি কেড়ে নিয়ে তাদের নিঃস্ব করে দিয়েছে। আর সেটা করতে গিয়ে তাদের উপর সীমাহীন অত্যাচার চালিয়েছে। কিন্তু এই আদিবাসীরা প্রকৃতির নানান প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে হাজার বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। তাদের সেই অদম্য মনোভাবই তাদেরকে টিকিয়ে রেখেছে। 

জীবনযাপন

আমেরিকার আদি বাসিন্দা হিসেবে রেড ইন্ডিয়ানদের জীবনযাপন বেশ চমকপ্রদ। আধুনিক সভ্যতার মানুষ খাদ্য হিসেবে যে ভুট্টা ব্যবহার করেন, সেটি প্রথম উদ্ভাবন করেন রেড ইন্ডিয়ানরা। পশুপালন, শিকার ও কৃষিই তাদের জীবিকার প্রধান উপায় ছিল। তথাপি আমেরিকার একপেশে বর্ণবাদ, বৈষম্য ও পুঁজিবাদি ধারণা চর্চার ফলে রেড ইন্ডিয়ানদের উপর নানান বিধিনিষেধ জারি করে তাদের জীবনপ্রণালী পরিবর্তনের চেষ্টা চলেছে বহু বছর ধরে। রেড ইন্ডিয়ানরা নিজেদের ভেতর নানান ভাষায় যোগাযোগ রাখে। এসব ভাষার মধ্যে রয়েছে নাভাজো, আলাস্কান, ইয়ুপিক, ডাকোটা, সিওক্স, ত্র্যাপাচি, চক্কা, ক্রিক প্রভৃতি। এখনও প্রায় ১৫০টি ভাষা তাদের গোত্রের মধ্যে টিকে আছে। লোকসংখ্যার অধিকাংশই খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। অসুখ বিসুখ হলে এরা বিভিন্ন গাছের ছাল, বাকল, রস ব্যবহার করত। ধারণা করা হয় আমেরিকায় লাউ ও শিম সবজি দুটির প্রচলন রেড ইন্ডিয়ানরাই করেছিল। বিশেষ অনুষ্ঠানের দিন পাখির পালক দিয়ে তৈরি পোষাক পরিধান করেন। মুখে লালচে তরল রং মাখেন। তারা মূলত সিউ, অ্যাপাচি, উতে প্রভৃতি গোত্রে বিভক্ত।

সিউ গোত্রের মানুষজন ডাকোটা, লাকোটা এবং নাকোটা এই তিনভাগে বিভক্ত। ১৮৬২ সালে সিউদের বিরুদ্ধে শেতাঙ্গদের উপর হামলার অভিযোগ আনা হয়। ড্যানিয়েল ডাব্লিউ হোমস্টাড সিউদের নিয়ে এক নিবন্ধে লেখেন, প্রায় তিনশতাধিক সিউদের ওই হামলার অভিযোগ এনে হত্যা করা হয়েছিল। মহিষের মতো দেখতে একধরনের প্রাণী বাইসন। এই বাইসনের মাংস সিউদের প্রধান খাবার ছিল। আব্রাহাম লিংকনের প্রশাসন সিউদের পবিত্র জায়গা ব্ল্যাক হিলস দখল করে ও বাইসন হত্যা করে। ফলে অনেক সিউরা খাদ্য সংকটে পড়ে মারা যায়।

নাভাহোরা বসবাস করত মাটির তৈরি ঘরে। নাভাহোরা মেক্সিকোর সাথে যুদ্ধের সময় আমেরিকাকে সাহায্য করেছিল। অথচ যুদ্ধ শেষ হবার পর তাদের ভূখণ্ড আমেরিকার দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল থেকে আরও তিনশ মাইল দূরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে তারা খাদ্য সংকটে পড়ে এবং বহু নাভাহোরা মারা যায়। 


কোমানচিরা খুব লড়াকু অশ্বারোহী যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত ছিল। যাযাবর প্রকৃতির কোমানচিরা বাইসন শিকার করত। 

অন্যদিকে উতেদের আদিবাস হল যুক্তরাষ্ট্রের উতাহ অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায়। ভুট্টাচাষে এরাই সবচেয়ে বেশি দক্ষ ছিল। 

মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চলে অ্যাপাচিদের আদিবাস ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মেক্সিকোর যুুদ্ধের সময় অ্যাপাচিরা যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করেছিল। পরে মার্কিন সরকার তাদের আদিবাস অ্যাপাচেরিয়া অঞ্চলটি আক্রমণ করে। তাদের খাবার ও বাসস্থান ধ্বংস করার ফলে বহু অ্যাপাচি মারা যায়। 

মূল্যায়ন

মূলত উত্তর আমেরিকার আদিবাসীরা তাদের আবাসিক ভূখণ্ডে ইউরোপীয়দের কলোনি স্থাপন কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। তাই এই আদিবাসীরা যাদেরকে আমরা রেড ইন্ডিয়ান বলে চিনি, তারা চিরকাল তাদের উপর হওয়া অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে চেয়েছে। এদিকে শিল্প বিপ্লবের ফলে সৃষ্টি হওয়া ইউরোপের আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের কাছে  তারা ধরাশায়ী হয়েছে। ড. অনদ্রিল ভৌমিকের “রেড ইন্ডিয়ান, কম্বল ও জৈব অস্ত্র” বিষয়ক নিবদ্ধ থেকে আমরা জানতে পারি, পৃথিবীতে প্রথম জৈব অস্ত্র প্রয়োগ করেছিল ব্রিটিশরা রেড ইন্ডিয়ানদের উপর। 

আমেরিকার আদিবাসীরা ১৭৬০ সালের দিকে যখন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করেন, তখন ব্রিটিশ সেনা প্রধান ছিলেন জেফ্রি আহমার্স্ট। তিনি কর্নেল হেনরি বোকেটকে রেড ইন্ডিয়ানদের নির্মূল করতে নির্দেশ দেন। হেনরি বোকেট সেসময় গুটি বসন্তের জীবাণুযুুুক্ত কম্বল রেড ইন্ডিয়ানদের মধ্যে বিতরণের ব্যবস্থা করেন। আর এতেই প্রচুর আদিবাসীরা মারা যায়। 

পরে আমেরিকার স্বাধীনতা অর্জিত হলেও রেড ইন্ডিয়ানদের ভাগ্যের চাকা খোলেনি। বরং হত্যা ও নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়েছে। তাইতো সিআরআই প্রতিবেদন দাবি করেছে, রেড ইন্ডিয়ানদের উপর মার্কিনিরা পরিকল্পিত গণহত্যা চালিয়েছে। কিন্তু টিকে থাকার সংগ্রামে যারা প্রকৃতির খুব কাছাকাছি থাকেন তাদের নিশ্চহ্ন করা সহজ কথা নয়। তাইতো হাজার বছর সংগ্রাম করে আজও টিকে আছে রেড ইন্ডিয়ানরা। 

বিশ্বমানবতার ধ্বজাধারী আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ-শেতাঙ্গ দ্বন্দ্ব অভ্যন্তরীণ মানসিক সংকীর্ণতার পরিমণ্ডলে এখনো আবৃত। মানবিক হস্তক্ষেপ তত্ত্বকে কাজে লাগিয়ে আমেরিকা বিভিন্ন দেশে সমমনাদের নিয়ে যে হামলা চালায় তা সাম্প্রতিক বিশ্বে প্রশ্নাধীন। এই প্রেক্ষাপটে আমেরিকা কীভাবে তার আদি বাসিন্দা তথা রেড ইন্ডিয়ানদেরকে বিবেচনা করছে সেটা মূল্যায়ন করেই আগামীর বহুমেরু বিশ্বে হয়ত আমেরিকার প্রকৃত মর্যাদা কী হবে সেটা নিয়ে খানিকটা ভাববে। 

সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি

১. বেরি মাই হার্ট অ্যাট উনডেডনি, লেখক: ডি ব্রাউন

২. রেড ইন্ডিয়ান, লেখক: নিকোলা গ্রানিয়ে

৩. আটলান্টিক হিস্ট্রি: কনসেপ্ট এন্ড কাউন্টারস, লেখক: বার্নার্ড বিলেন