ঢাকা বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩

এই কর্তৃপক্ষ লইয়া কী করিব?

এই কর্তৃপক্ষ লইয়া কী করিব?

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৩ | ০৩:১৭

পরিস্থিতি দেখিয়া শুনিয়া মনে হইতেছে, দেশে ডেঙ্গুর বিস্তার লইয়া দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলি যেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ন্যায় গভীর দার্শনিক প্রশ্নে ডুবিয়া রহিয়াছে। তিনি বলিয়াছিলেন– ‘এ জীবন লইয়া কি করিব?’ আর স্বাস্থ্য বিভাগ, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও উহার অধীনস্থ স্থানীয় সরকার পরিষদগুলি যেন চিন্তায় মগ্ন– ডেঙ্গু লইয়া কী করিবে?

ডেঙ্গুতে প্রাণহানি ও আক্রান্তের সংখ্যা নূতন নূতন রেকর্ড স্থাপন সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষের উদ্যোগহীনতা দেখিয়া আমরা এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই আশঙ্কা করিয়াছিলাম, নির্লিপ্ততায়ও রেকর্ড ভঙ্গ হইবে কিনা? এখন স্পষ্ট যে, ডেঙ্গু হইতে দেশবাসীকে রক্ষায় কর্তৃপক্ষ কার্যকর কিছুই করিতে পারে না।

রবিবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনসূত্রে জানা যাইতেছে, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই ৭৫ জনের প্রাণহানির মধ্য দিয়া এই বৎসর সর্বমোট মৃত্যু সহস্র অতিক্রান্ত। বেদনা ও বিক্ষোভের সহিত আমাদের প্রশ্ন– এই কর্তৃপক্ষ লইয়া কী করিব?

আরও উদ্বেগের বিষয়, সাধারণত অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসিলেও এইবার উহার লক্ষণ পরিদৃষ্ট হইতেছে না। বরং চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে দৃশ্যমান, আক্রান্ত ৭৫ শতাংশই ঢাকার বাহিরের। তথায় মৃত্যুহারও বাড়িয়াছে।

কোনো কোনো জনস্বাস্থ্যবিদ সমকালের নিকট এই আশঙ্কা প্রকাশ করিয়াছেন, এই বৎসর ডেঙ্গুর প্রকোপ ডিসেম্বর পর্যন্ত সম্প্রসারিত হইতে পারে। কারণ শরৎকাল শেষ হইয়া আসিলেও প্রকৃতিতে ভ্যাপসা গরম ও বৃষ্টিপাত কমিতেছে না। এইরূপ আবহাওয়া ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশকের বংশবিস্তারের উপযোগী। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মশকবাহিত রোগটির ধরন পরিবর্তনের প্রতিও অঙ্গুলি নির্দেশ করিতেছেন। আমরা মনে করি, শুধু মশকই নহে, কর্তৃপক্ষের প্রতিও অঙ্গুলি তুলিতে হইবে।

এইরূপ নহে যে, ডেঙ্গু পরিস্থিতির অকস্মাৎ অবনতি ঘটিয়াছে। গত তিন মাসের পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যাইবে, প্রতি মাসেই আক্রান্ত ও প্রাণহানির সংখ্যা পূর্বের মাস অপেক্ষা বৃদ্ধি পাইয়াছে। উহার পরও কর্তৃপক্ষের নিদ্রাভঙ্গ হইল না কেন? এমনও নহে যে, এই বৎসরই প্রথম রোগটির প্রাদুর্ভাব ঘটিয়াছে কিংবা প্রাণঘাতী হইয়া উঠিয়াছে। গত দু্ই দশক ধরিয়াই আমরা ডেঙ্গুতে জেরবার। একই সময়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়িয়াছে, এমন অনেক দেশ ইতোমধ্যে ইহা মোকাবিলায় সক্ষম হইয়াছে। আমরা শুধু হাহাকারই করিতে থাকিলাম কেন?

বস্তুত কীভাবে ও কী কারণে এডিস মশক বংশবিস্তার করিয়া থাকে; উহা প্রতিরোধে করণীয়; কর্তৃপক্ষ ও নাগরিকের কর্তব্য কী– এই সকল বিষয়ে ব্যাখ্যা ও আলোচনা অনেক হইয়াছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সংশ্লিষ্টরা যে সফল হন নাই– উহা লইয়াও আর সন্দেহের অবকাশ নাই।

এখন আমরা দেখিতে চাহিব, অদক্ষতা ও অবহেলার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা লওয়া হইতেছে কিনা।

আরও পড়ুন