ঢাকা সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪

মানুষ বাঁচুক, যুদ্ধ থামুক, দুর্ভোগ কমুক

মানুষ বাঁচুক, যুদ্ধ থামুক, দুর্ভোগ কমুক

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০

ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে ফিলিস্তিনের গাজা জনপদ বিশ্ববাসীর চোখের সামনেই ধ্বংস হইতেছে। বিশ্বের পরাশক্তিগুলি শান্তির চাইতে, নিরীহ মানুষের জীবন বাঁচানোর চাইতে ফায়দা তুলিতেই যেন ব্যস্ত। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সমর্থনে রণতরী পাঠাইতেছে। কিন্তু গাজার অসহায় মানুষের চোখ, নিহত শিশুদের মুখ এবং অগণিত আতঙ্কিত নরনারী যেন বলিতেছে, মানবতা কেন এমন একচক্ষু হইবে? ইসরায়েল যখন লাগাতারভাবে ফিলিস্তিনি হত্যা করিতেছিল, পূর্ব জেরুজালেমে সন্ত্রাস চালাইতেছিল, মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র ধর্মস্থান আল আকসা মসজিদ অপবিত্র করিতেছিল, তখন রণতরী দূরে থাকুক, একটি বিবৃতিও পাঠাইতে পারিল না?

৭৫ বৎসর হইল ফিলিস্তিনের ভূমিতে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। ইহার মধ্যে এমন একটি দিনও যায় নাই, যখন ইসরায়েল অবৈধভাবে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে নাই, হত্যা বা জখম করে নাই, ঘরবাড়ি ও ক্ষেত-খামার উচ্ছেদ করে নাই। এমনকি মুসলমানদের পবিত্র তীর্থ জেরুজালেম নগরীই শুধু নহে, পবিত্র আল আকসা মসজিদও তাহাদের দখলদারি হইতে রক্ষা পায় নাই। একদিকে সম্মিলিত আরব শক্তির সুবিধাবাদিতা কিংবা অদূরদর্শিতা, অন্যদিকে বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলির উদাসীনতায় এই আধুনিক যুগেও এমন বর্ণবাদী বর্বরতা চলিয়া আসিতেছে।

গত শনিবার গাজাবাসীকে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন হামাসের হামলা ছিল এই লাগাতার নির্যাতন-নিপীড়নেরই প্রতিক্রিয়া। সৌদি আরব, মিসর, ইরান, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা, কিউবাসহ আরব লিগও হামাসের হামলার জন্য ইসরায়েলের নিরন্তর মানবতাবিরোধী কার্যকলাপকে দায়ী করিয়াছে। হামাস বলিতেছে, দুস্থ, ক্ষুধার্ত ও নিরস্ত্র গাজাবাসীর উপর পরাশক্তি ইসরায়েলের হামলা যুদ্ধাপরাধ। তাহাদের যুক্তি হইল, যে সকল ইসরায়েলি নাগরিক ও সৈন্যের উপর হামাস হামলা করিয়াছে, তাহারা সাধারণ মানুষ নহেন, তাহারা জবরদস্তির মাধ্যমে জমি দখলদারি সেটলার। আন্তর্জাতিক আইনে সেটলার আর নিরীহ নাগরিকগণকে এক নিক্তিতে বিচার করা হয় না। হামাসের যুক্তি মানিলে, তাহাদের হামলা আত্মরক্ষার নিমিত্তে এবং নিজেদের হারানো ভূমি উদ্ধারের অধিকারের অংশ। ফিলিস্তিনের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া এই সমস্যার আর কোনো সমাধান নাই।

আমরা দেখিতেছি, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কোন্দলে বিপর্যস্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী, যিনি কিনা দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হিসেবে বিচারাধীন, তিনি হামাসের হামলাকে ইরান যুদ্ধের দিকে ঠেলিয়া দিতে চাহিতেছেন। হামাসের হামলার পশ্চাতে বিনা প্রমাণে ইরানের মদদ আবিষ্কারের কথা বলিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে প্ররোচিত করিতেছেন। ইহার ফলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িতেছে। এশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি প্রমাদ গুনিতেছে। বাংলাদেশের মতো দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জ্বালায় অতিষ্ঠ মানুষ আতঙ্কিত হইয়া উঠিতেছে। এই দুর্যোগের অবসানে বিশ্বনেতাগণের শুভবুদ্ধির উদয় হউক।

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×