ঢাকা বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

কক্সবাজারের রক্ষকগণ যখন ভক্ষক

কক্সবাজারের রক্ষকগণ যখন ভক্ষক

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৩ | ২১:৫৫ | আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৩ | ২১:৫৫

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান অভিঘাত মোকাবিলায় সবুজায়ন যখন পূর্বের যেই কোনো সময়ের তুলনায় অধিক জরুরি হইয়া পড়িয়াছে, তখনও দেশে বনাঞ্চল দখল থামিয়া নাই। কক্সবাজারের ন্যায় ‘মূল্যবান’ এলাকাগুলিতে উহা আরও গতি পাইয়াছে।

বুধবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনসূত্রে জানা যাইতেছে, সেইখানকার মোট বনভূমির এক-চতুর্থাংশ ইতোমধ্যেই দখল হইয়া গিয়াছে। রক্ষা পাইতেছে না ১৯৯৯ সালে ঘোষিত ‘প্রতিবেশ সংকটাপন্ন’ বনাঞ্চলও। এই আশঙ্কা অমূলক হইতে পারে না, দখল অব্যাহত থাকিলে ‘সাগরকন্যা’ একপর্যায়ে বনভূমিশূন্য হইয়া পড়িবে। ইহার কুফল ভয়াবহ হইতে বাধ্য। কারণ সমুদ্র, পাহাড় ও বনাঞ্চলের সমন্বয়ে গড়িয়া উঠা কক্সবাজারের প্রতিবেশ ব্যবস্থার একটি উপাদান নাজুক হইয়া পড়িলে অপর দুইটিও টিকিয়া থাকিবে না।

স্বীকার্য, বিলম্বে হইলেও বন বিভাগ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেদখল ভূমির হিসাব ও দখলদারগণের তালিকা করিতেছে। কিন্তু কেবল হিসাব ও তালিকা যে বনাঞ্চল রক্ষা কিংবা বেহাত ভূমি উদ্ধারের রক্ষাকবচ নহে, কক্সবাজারের চিত্র উহার ‘উৎকৃষ্ট’ উদাহরণ। কারণ বন সংরক্ষণ ও উদ্ধার করিতে হইলে যেই প্রশাসনিক সহায়তা অনিবার্য, এইখানে তাহারাই বনের ভূমি দখল করিয়া বসিয়া রহিয়াছে। কক্সবাজারে বন বিভাগ যেই ৪৪ হাজারের বেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দখলদার হিসাবে চিহ্নিত করিয়াছে, উহার মধ্যে খোদ জনপ্রশাসন একাডেমি, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন, সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ন্যায় প্রতিষ্ঠানও রহিয়াছে। বলা বাহুল্য, নামে-বেনামে আরও প্রভাবশালী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনও এই দলে রহিয়াছে।

রক্ষকই কেবল ভক্ষক হইয়া উঠে নাই; বনাঞ্চল কীভাবে ‘আইনি উপায়ে’ দখল হইতে পারে, উহারও উদাহরণ কক্সবাজার। ১৯৭৮, ১৯৮২ ও ১৯৯২ সালে রীতিমতো ‘পরিপত্র’ জারি করিয়া বন বিভাগের গেজেটভুক্ত ২০ হাজার একরের অধিক জমির বরাদ্দ পাইয়াছেন রাজনীতিবিদ, গৃহবধূ, ব্যবসায়ী, আইনজীবীসহ নানা পেশার ‘চিংড়িচাষি’। ইহা লইয়া কয়েক দশকের সমালোচনায় কান না দিয়া গত বৎসরের এপ্রিলেও চকরিয়া উপজেলায় ৩৬১ একরের অধিক জায়গা চিংড়ি চাষের জন্য বন্দোবস্ত দিয়াছে ভূমি মন্ত্রণালয়। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় হইতে রক্ষার জন্য প্রাকৃতিক দেয়াল প্যারাবন ধ্বংস করিবার এই মহাযজ্ঞ আত্মঘাতেরই নামান্তর। 

ইহা বুঝিবার জন্য বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই যে, কক্সবাজারে বনাঞ্চল ধ্বংস ও দখলের সহিত রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রশাসনিক অনিয়ম জড়িত। জাতীয় সম্পদ বিনষ্ট করিয়া ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর পকেট ভরাইবার এই মচ্ছব আর চলিতে দেওয়া যায় না জাতীয় স্বার্থেই।

আরও পড়ুন