বায়বীয় পদক্ষেপে বায়ুদূষণ যাইবে না
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০
ঢাকার বায়ুদূষণ লইয়া এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে আমরা ইতোপূর্বে বহুবার উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছি। দুঃখজনক, আমাদের উদ্বেগ অরণ্যে রোদনে পরিণত হইয়াছে। ফলে গত ১৫ দিনের মধ্যে ১১ দিনই ঢাকা দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে থাকায় আমরা বিস্মিত হই নাই। এমনকি শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির দিনেও, যখন বিশেষত যান্ত্রিক যানবাহন কম চলে; বায়ুদূষণে ঢাকা ছিল বিশ্বে শীর্ষে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের সূচকে শুক্রবার সকাল ৮টা হইতে বেলা ১১টা অবধি ঢাকা ছিল ‘অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর’। বিজ্ঞানীদের বদৌলতে আমরা জানি, পিএম বা পার্টিকুলেট ম্যাটার বাতাসে ভাসিয়া বেড়ানো কঠিন ও তরল পদার্থের মিশ্রণ, যাহা অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যতীত খালি চোখে দেখা যায় না। এই রকমই দুইটি ম্যাটার হইল পিএম ২.৫ এবং পিএম ১০, যেগুলি খুব সহজে নিঃশ্বাসের সহিত আমাদের শরীরে প্রবেশ করিয়া স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে; যাহার ফলস্বরূপ হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি), এমনকি ফুসফুসের ক্যান্সারও হইতে পারে। শিশুদের জন্য উহা আরও মারাত্মক। বায়ুদূষণের কারণে শিশুরা অ্যাকিউট লোয়ার রেসপিরেটরি সংক্রমণসহ বহু রোগের ঝুঁকিতে পড়ে। ফলে অতি উচ্চ পর্যায়ের বায়ুদূষণের সঙ্গে ঢাকাবাসীকে বৎসরের পর বৎসর বসবাস করিতে বাধ্যকরণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসমূহকে কেহ অপরাধী সাব্যস্ত করিলে ভুল হইবে না।
এই শহরে বায়ুদূষণের কারণসমূহও কাহারও অজানা নহে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের এক গবেষণায় যানবাহনের ধোঁয়াকে এই শহরের বায়ুদূষণের জন্য দ্বিতীয় প্রধান কারণ বলা হইয়াছে। চতুষ্পার্শ্বে যত্রতত্র গড়িয়া উঠা বৈধ-অবৈধ ইটাভাটাগুলির দায়ও আমরা জানি। এখানে ধূলি উড়াইয়া বা বর্জ্য উন্মুক্ত রাখিয়া যানবাহন যেইভাবে ছোটাছুটি করে, উহাই বাতাসে প্রচুর বালিকণা ছড়াইতে যথেষ্ট। তদুপরি আছে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদিগের সড়ক পরিষ্কারের অবৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া। ভুল উন্নয়ন নীতির ফলে এই শহরের আনাচে-কানাচে যেই নির্মাণযজ্ঞ চলিতেছে, উহাও বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ।
দুর্ভাগ্যজনক, এই সকল বিষয় তদারকিতে পরিবেশ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও সিটি করপোরেশন থাকিলেও উহারা সকলেই হয় নিদ্রামগ্ন নতুবা জাগ্রত থাকিয়াও নিদ্রার ভান করিতেছে। দূষণ রোধে মাঝেমধ্যে কতিপয় অভিযান ও সভা-সেমিনার করিয়াই তাহারা দায়িত্ব সম্পন্ন করে। কখনও কখনও জনগণের সচেতনতার ঘাটতিকে দায়ী করিয়াও দুর্বলতা ঢাকিবার প্রয়াস চালায়। এমনকি উচ্চ আদালতের একাধিক রায়ও এই সকল কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব পালনে তৎপর করিতে পারিতেছে না। আমরা মনে করি, এইরূপ বায়বীয় পদক্ষেপে আর যাহাই হউক, বায়ূদূষণ দূর হইবে না।