ঢাকা মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩

অন্যদৃষ্টি

হতাশার বিষ

হতাশার বিষ

প্রতীকী ছবি

খন্দকার বদিউজ্জামান বুলবুল 

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:৫৬ | আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:৫৬

আজকাল প্রায়ই শোনা যায় আত্মহত্যা, ডিপ্রেশন, একাকিত্ব ইত্যাদির কথা। বিশেষত শিক্ষার্থী মহলে এসব শব্দ অতি পরিচিত। যে বয়সে দুরন্ত ছুটে চলবে মন; পড়াশোনায় ব্যস্ততার পাশাপাশি বন্ধুদের সঙ্গে প্রাণবন্ত আড্ডায় মজে থাকবে; খেলাধুলার মাঝে আনন্দ খুঁজে পাবে; সেই সময়ে শোনা যায় এমন হতাশার কথা। 

হতাশা একটি মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। হতাশা ব্যক্তিকে কুরে কুরে খায়। এ থেকে জন্ম নেয় দুশ্চিন্তা, যা মানুষের মন-মগজে ভয়াবহ প্রভাব বিস্তার করে। হতাশার ফলে শরীরে বাসা বাঁধে নানা জটিল রোগ– ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের অসুখ ইত্যাদি। হতাশা অক্টোপাসের মতো আষ্টেপৃষ্ঠে ধরছে যুবক-যুবতীদের। যার দরুন সমাজে বৃদ্ধি পাচ্ছে আত্মহত্যা; পরিবারে বাড়ছে অশান্তি; বাড়ছে বিয়ে বিচ্ছেদের হার। এতে চিন্তার জগৎ সংকুচিত হয়ে পড়ে; জীবন নিয়ে অভিযোগ বাড়তে থাকে; সাময়িক স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য শুরু হয় মাদক গ্রহণ, যা অস্বাস্থ্যকর, যন্ত্রণাদায়ক জীবনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। 

বিভিন্ন কারণে মানুষ হতাশার সাগরে নিমজ্জিত হয়। বেকারত্বের কারণে অনেকে হতাশ হয়ে পড়ে। অর্থনৈতিক অসুবিধায় মানুষ হতাশ হয়। সম্পর্কের টানাপোড়েনও অনেক সময় হতাশার জন্ম দেয়। পড়াশোনায় অকার্যকারিতার জন্য মানুষ হতাশ হয়। কখনও কখনও একাকিত্বের কারণেও হতাশাগ্রস্ত হয়। অনুভূতি প্রকাশ করার মতো কোনো সমব্যথী পায় না; পারিবারিক সাহায্য থাকে না। সমস্যা সমাধানের দক্ষতা কম থাকলেও ঘুরপাক খেতে থাকে হতাশার ভেতর। কারও কারও চিন্তার মধ্যে ত্রুটি থাকে। কোনো কোনো ঘটনায় সে অসমর্থ হলে ভাবে, জীবনটাই ব্যর্থ হবে। একবার একটি কাজ না পারলে দ্রুত উপসংহারে পৌঁছে গিয়ে ভাবে, কিছু হবে না। অনেকে তুচ্ছ ঘটনাকে বড় করে দেখে। এ ছাড়া বর্তমানে ভার্চুয়াল জগতে অতিরিক্ত সময় অতিবাহিত করায় দেখা যায় শরীর-মন ভালো থাকে না। মাথা ঝিমঝিম করে! ভার্চুয়াল জগতে ডুবে থাকার কারণে সামাজিকীকরণ ভালোভাবে হয় না। একা থাকতে পছন্দ করে এবং হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ ছাড়া অনেক কারণে মানুষ হতাশায় নিপতিত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বজুড়ে ৩৪ কোটি মানুষ হতাশায় ভুগছে এবং প্রতিনিয়ত তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। হতাশার চূড়ান্ত পরিণতি আত্মহত্যা।

হতাশা কাটিয়ে ওঠা বা হতাশা থেকে মুক্তিলাভ একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। যদিও হতাশা থেকে যত দ্রুত মুক্তি পাওয়া যায় তত মঙ্গল। বাস্তব জীবনে আপনি হতাশা কাটিয়ে উঠতে চাইলে সবসময় ইতিবাচক থাকুন। যা হচ্ছে তা মেনে নিন। আশায় বাঁচুন। জীবনের পরিবর্তন মেনে নেওয়ার চেষ্টা করুন। কী কারণে আপনি হতাশ, তা খুঁজে বের করে সেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন।

সামাজিক সম্পর্কগুলো জোরদার হলে হতাশা কাটিয়ে ওঠা সহজ। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। কাজের মধ্যে থাকুন। বই পড়ুন। দূরে কিংবা কাছে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন, যা হতাশা ভুলিয়ে দিতে পারে। বাস্তবতা বোঝার চেষ্টা করুন। অনলাইন থেকে অফলাইন জীবনকে অগ্রাধিকার দিন। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলুন। মা-বাবার কথা অগ্রাধিকার দিন। তাদের মান্য করুন। সবার সঙ্গে শালীন ব্যবহার করুন। কাছের মানুষ হতাশায় ভুগলে তার মন ভালো রাখতে চেষ্টা করুন। যে কোনো পরিস্থিতিতে তাকে 
সমর্থন করুন।

নিজের সুন্দর ও ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে ভাবলে দেখবেন, হতাশা থাকবে না। 

খন্দকার বদিউজ্জামান বুলবুল: শিক্ষার্থী, আনন্দমোহন কলেজ
khbulbu2002@gmail.com 
 

আরও পড়ুন