ঢাকা মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩

নাফসের কার্পণ্য

ইসলাম ও সমাজ

নাফসের কার্পণ্য

ইসলাম ও সমাজ

সৈয়দ শাহাদাত হুসাইন

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:১১

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ওয়া মাইঁ ইউকা শুহহা নাফছিহ্; ফাউলাইকা হুমুল মুফলিহুন’। অর্থ- ‘যারা নাফসের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম। নাফসের অর্থ নিজ প্রাণ, নিজ দেহ, নিজ সন্তান। পরকালীন মুক্তি পেতে চাইলে নিজেকে মুক্ত করো। মুক্ত করে দাও তোমার নিজেকে, হারিয়ে ফেলো তোমার নিজেকে নিজ প্রভুর ইচ্ছাতে; শুধু প্রভুর খুশির জন্য। নিজের খুশি বা আনন্দের জন্য নয়; স্বার্থ বা লোভের বশবর্তী হয়ে নয়।’

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘(হে রাসুল) তাদের সৎপথে আনার দায় আপনার নয়, বরং আল্লাহ যাকে চান সৎপথে পরিচালিত করেন। তোমরা যে সম্পদ ব্যয় করো তা তো তোমাদের নিজেদের (পরকালীন) উপকারার্থেই করো। তোমরা তো শুধু আল্লাহর চেহারার সন্তুষ্টির উদ্দেশেই ব্যয় করে থাকো। আর যে সম্পদ তোমরা ব্যয় করবে তার পুরস্কার পুরোপুরি তোমাদের দেওয়া হবে এবং তোমাদের ওপর জুলুম করা হবে না।’ (আল কোরআন)। অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অতএব দাও আত্মীয়স্বজনকে তাদের হক এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেও। এটা তাদের জন্য উত্তম, যারা আল্লাহর চেহারার সন্তুষ্টি কামনা করে, আর তারাই হলো সফলকাম।’ (আল কোরআন)। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘তারা বলে, কেবল আল্লাহর চেহারার সন্তুষ্টির জন্যই তোমাদের আমরা খাদ্য দান করছি, আমরা তোমাদের কাছে এর জন্য কোনো বিনিময় চাই না এবং কোনো কৃতজ্ঞতাও না।’ (আল কোরআন)। উক্ত আয়াত থেকে আমরা এ শিক্ষা নিতে পারি, আমরা যা কিছু দান করব আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, কোনো বিনিময় লাভের জন্য নয়; যা দান করলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হবে। অর্থাৎ আল্লাহর বান্দারা খুশি হবে তা আমাদের করতে হবে। অর্থ দান, সম্পদ দান আমরা সবাই বুঝি, কমবেশি চেষ্টাও করি। কিন্তু নাফসের কার্পণ্য বা নাফসের দান বলতে কী বোঝায়? নাফসের প্রাথমিক অর্থ নিজ প্রাণ। সুতরাং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজ প্রাণ ত্যাগের সিদ্ধান্তই নাফসের দান। নাফসের দ্বিতীয় অর্থ নিজ দেহ। নিজ দেহকে লোভ বা স্বার্থের প্রয়োজনে ব্যবহার না করে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করা। যারা রাসুলের গোলামিতে নিজের জীবন দান করেছে, কোনো ধরনের বিনিময়ের জন্য নয়, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে নিজেকে দান করেছে, তারাই নাফসের কার্পণ্য থেকে মুক্ত। নাফসের তৃতীয় অর্থ নিজের সন্তান। যারা নিজের সন্তানকে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে চালিত করে তারাও নাফসের কার্পণ্যমুক্ত। এই তিন ধরনের পথে যারা নিজেকে মুক্ত করেছে, তারাই নাফসের কার্পণ্যমুক্ত। যাদের মনের চিন্তা সীমাবদ্ধ, তারা মুক্ত হতে পারে না। মনের সসীম অবস্থা থেকে অসীমে পাড়ি দেওয়াই হচ্ছে মনের কার্পণ্যমুক্ত। যখন নিজের মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত হয়ে সীমাবদ্ধতাহীন জীবন যাপন করবে, তখন তোমার মনে বিশাল ক্ষেত্র তৈরি হবে, যা অসীম। আর তখনই তুমি মুক্তিপ্রাপ্ত। যারা নিজ নাফসের প্রয়োজনে সব করে, তারা চরম স্বার্থপর ও কৃপণ।

আল্লাহতায়ালা কৃপণদের সম্পর্কে বলেন, ‘শোনো, তোমরাই তো তারা, যাদের আল্লাহর পথে ব্যয় করার আহ্বান জানানো হচ্ছে, অতঃপর তোমাদের কেউ কেউ কৃপণতা করছে। যারা কৃপণতা করছে, তারা নিজেদের প্রতিই কৃপণতা করছে। আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত। যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তিনি তোমাদের পরিবর্তে অন্য জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করবেন, এর পর তারা তোমাদের মতো হবে না। (আল কোরআন ৪৭:৩৮)। কৃপণতা শয়তানের গুণাবলি। যারা কৃপণতা করে তারা শয়তানের ভাই। শয়তানকে দেখতে চাইলে কৃপণকে দেখ।

সৈয়দ শাহাদাত হুসাইন: চেয়ারম্যান, তাসাউফ ফাউন্ডেশন

আরও পড়ুন